Type to search

সৎ সান্নিধ্যে অফুরাণ কল্যাণ/ বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা

সাহিত্য

সৎ সান্নিধ্যে অফুরাণ কল্যাণ/ বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা

বিলাল হোসেন মাহিনী

সঙ্গ বা সান্নিধ্য ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আর সন্ন্যাসী জীবন-যাপন ইসলাম অনুমোদন করে না। তাহলে কাকে সঙ্গী-সাথী বানাতে হবে? বা কার সান্নিধ্যে চলতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে প্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ (সুরা আলে ইমরান : ২)। আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা : ১১৯)।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘ভালো এবং দুষ্ট ব্যক্তি মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ও হাঁপরে ফুঁকদাতা (কামার) ব্যক্তির মতো। মিশক (সুগন্ধি) বহনকারী ব্যক্তির অবস্থা তো এমন যে সে হয়তো এ মিশক তোমাকে উপহার দেবে অথবা তুমি তার থেকে তা খরিদ করবে অথবা তুমি তার থেকে এর সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর হাপরে ফুঁকদাতা ব্যক্তি হয়তো সে তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে কিংবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’ (সহিহ বুখারি : ২৬৪১)
প্রিয় নবি (সাঃ) বলেছেন, ‘অসৎ সঙ্গীর চেয়ে একাকিত্ব ভালো। আর একাকিত্বের চেয়ে সৎ সঙ্গী ভালো।’ (সহিহ বুখারি : ২৪৩৯)। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম (স্বভাব-চরিত্র) দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুতরাং সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে তা যেন অবশ্যই যাচাই করে নেয়।’ (জামে তিরমিজি : ২৩৪৭)। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি চিন্তা-ভাবনা করে যথাযথ বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্ধু নির্বাচন করবে, তাদের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর হবে।

ইমাম গাজালি (রাহঃ) বলেন তিনটি গুণ যার আছে তাকে বন্ধু বানাতে হবে। এক. বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী, বিচক্ষণ। দুই. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়। তিন. বন্ধুকে হতে হবে নেককার, পূণ্যবান। একদা এক বেদুইন নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, কিয়ামত কবে হবে? নবী (সাঃ) উত্তরে বলেন, তার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছো? লোকটি বলে, (নফল) নামায, রোযা, সাদাকা হিসেবে বেশি কিছু আমার নেই কিন্তু আমি আল্লাহ এবং তার রাসুলকে ভালবাসি। নবী (সা.) বলেন, তাহলে তুমি তার সঙ্গে হবে যাকে তুমি ভালবাসো।’ (সহিহ মুসলিম, ২৬৩৯)
হযরত আলকামাহ (রহঃ) বলেন, ‘বন্ধুত্ব করো তার সঙ্গে, যার সাহচর্য তোমাকে সুন্দর করে, তুমি অভাবগ্রস্থ হলে তোমাকে সাহায্য করে, ভুল বললে তোমার ভুল সংশোধন করে, যদি তোমার মধ্যে কোনো মঙ্গল দেখে, তো গুণে গুণে রাখে, যদি তোমার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখে তো শুধরে দেয়, কঠিন সময়ে তোমাকে শান্তনা দেয়।’

খোদাভীরু, অভিজ্ঞদের সোহবত ও পরামর্শ গ্রহণ যেমন ইহকালীন বিষয়ে জরুরি ও সহযোগী, অনুরূপ পরকালীন বিষয়েও দরকারি ও কল্যাণময়। অর্থাৎ নিজের ঈমান, আমল, আখলাক পরিপক্ব ও সমৃদ্ধ করে আখেরাতের অনন্ত অসীম জীবনে সফলতা পেতে দ্বীনদার, পরহেজগার, বুজুর্গ ও আদর্শ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য অতীব জরুরি বিষয়। কেননা, কথায় আছে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আবার কেউ কেউ বলেন, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। বাস্তবেও দেখা যায়, অনেক আল্লাহওয়ালা বুজুুর্গ ও শুদ্ধ পুরুষের সান্নিধ্য অবলম্বন করে অপরাধ জগতের বড় বড় অপরাধীরা যেমন-চোর, ডাকাত, মাদকসেবী, ব্যভিচারী, দুর্নীতিবাজ ও বেয়াদব শ্রেণির লোক হেদায়েতের পথ পেয়েছে। শুদ্ধ-সুন্দর, সফল জীবন লাভ করেছে। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘উম্মতের আলেমগণ আমার উত্তরাধিকারী’ (জামে তিরমিজি : ২৬৮২)। তাই বর্তমানে দ্বীনি বিষয়ে আলেমদের দিকনির্দেশনা ও সোহবত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। তা হলে আমাদের যাপিত জীবন সুন্দর, সুখী, সমৃদ্ধ হবে এবং পরকালীন জীবনে চূড়ান্তসফলতা আসবে, ইন শা আল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সৎ সঙ্গী নির্বাচনের তৌফিক দান করুন। আমিন।