Type to search

বিষাদের ২০২০, চলে গেলেন অনেকেই

জাতীয়

বিষাদের ২০২০, চলে গেলেন অনেকেই

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স
বিষাদের বছর ২০২০। করোনা সংক্রমণের ফলে পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

বাজছে প্রতি মুহূর্তে বিদায়ের বিউগল। এ তালিকায় অগণিত সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রয়েছেন চিকিৎসক, সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, আইনজীবী, নাট্যকুশলী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।

ভ্যাকসিন আসি আসি করছে। গবেষণা চলছে দুনিয়াজুড়ে। সবশেষ করোনার নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে বহুগুন।

দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্তের খবর জানানো হয়। এর ১০ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে সরকার। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৭ হাজার ৪শ’ ৭৯।

করোনায় বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর মিছিলের গতির চেয়ে বাংলাদেশে মৃত্যুর শ্লথ অনেক কম হলেও একের পর বিশিষ্টজনদের মৃত্যু শূন্যতা তৈরি করছে। করোনা ছাড়াও বছরটিতে নানা কারণেই গুণি মানুষদের হারানোর তালিকা ছিল দীর্ঘ।

করোনার হানায় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেও চিরবিদায় নিয়েছেন অনেক জননেতা। ২০২০ সালে জাতি যাদের হারিয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেযোগ্য হলেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম, সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, কামরুন্নাহার পুতুল, সিলেটের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও বিএনপি জোট সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির ও সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, খালেদা জিয়ার উপদেস্টা এম এ হক। এবং বামপন্থি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আনোয়ার খান জুনো। করোনায় আক্রান্ত না হলেও এসময়ে মারা যান দেশের প্রথম নারী স্বরাস্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।

দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বর্ষীয়ান এই বুদ্ধিজীবীকে হারিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। ২০২০ এ জাতি হারিয়েছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পি ,মুর্তজা বশীর, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, সাংবাদিক রাহাত খান, খন্দকার মুনিরুজ্জামান, সাহিত্যিক আবুল হাসনাত, রশীদ হায়দার, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, মকবুলা মঞ্জুর, প্রথম নারী ফটো সাংবাদিক সাইদা খানম।

করোনায় আরো মারা যান প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ, খ্যাতিমান প্রকৌশলী জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ,ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. নাজমুল করিম, বিজ্ঞানী আলী আসগর, পানি বিশেষজ্ঞ এম এ সামাদ , বৌদ্ধ ধর্মীয় পন্ডিত শুদ্ধানন্দ মহাথের ও সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর।

এ বছর জাতি হারিয়েছে শিল্প ও সংস্কৃতি জগতের কিংবদন্তি, অভিনেতা মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকেরকে। এসময় অভিনয় জগত থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন, টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় মূখ অভিনেতা আবদুল কাদের, সিনেমা জগৎ দাপড়ে বেড়ানো অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, অভিনেতা কেএস ফিরোজ, নাট্যকার মান্নান হীরা, প্রখ্যাত প্রযোজক মোহম্মদ বরকতউল্লাহ, টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি হাসান ইমাম। এছাড়াও সঙ্গীতশিল্পি এণ্ড্রু কিশোর, সুরকার ও গীতিকার আলাউদ্দিন আলী ও আজাদ রহমান মারা গেছেন ২০২০ এ।

প্রথমসারির শিল্পদোক্তা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচুর কর্মসংস্থান সৃস্টিকারি পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এম এ হাসেম, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও চা-শিল্পের খ্যাতিমান ব্যবসায়ী আজমত মঈনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। এবছরই মারা যান ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফুর রহমান ও এম এ মোমেন

বিষাদের বছর ২০২০ এ দেশ হারিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ২ জন সেক্টর কমান্ডারকে। তারা হলেন, সা আর দত্ত ও আবু ওসমান চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারিক আলীও চির বিদায় নিয়েছেন বছরটিতে।

করোনার এ সময়ে দেশ হারিয়েছে আইন অঙ্গনের দুই নক্ষত্রকে। ব্যরিষ্টার রফিক উল হক ও মাহবুবে আলম। তারা দুজনেই রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

করোনায় জনপ্রশাসনও হারিয়েছে অনেক কর্মকতাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুল্লাহ আল মোহসিন চৌধুরী ও আইন সচিব নরেন দাস। বিদায় নিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব সা’দত হোসেনও

করোনায় সংক্রমিত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসকই মারা গেছেন ১২৭ জন। এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈনউদ্দীন চিকিৎসক হিসেবে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর এই মিছিলে বেশ কজন নামকরা চিকিৎসক রয়েছেন।

এ বছরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ ফুটবলার বাদল রায় ও এশিয়ান কারাতে ফেডারেশনের রেফারি হুমায়ুন কবীর জুয়েল।

এই তালিকার বাইরেও পুলিশ বাহিনীর ৭৪ জন সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে হারাতে হয়েছে করোনার এই বছরে।

 

সূত্র, DBC বাংলা