Type to search

শিক্ষক মহানবী (সা.) ও শিক্ষার মর্যাদা

ধর্ম

শিক্ষক মহানবী (সা.) ও শিক্ষার মর্যাদা

বিলাল হোসেন মাহিনী

পৃথিবীর অন্ধকার সরাতে যেমন আলো দরকার, ঠিক তেমনি মূর্খতা থেকে মুক্তি পেতে চাই জ্ঞান ও জ্ঞানী ব্যক্তির সংস্পর্শ। শিক্ষা এমন মহামূল্যবান বিষয় যার আর্থিক পরিমাপ করা যায় না। আলো আর অন্ধকার যেমন একে অপরের সমান হতে পারে না, তেমনি মানুষের মধ্যে যারা জ্ঞানবান এবং যারা অজ্ঞ তারা এক অপরের সমান হতে পারে না। কেননা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার, আয়াত : ০৯) তাছাড়া জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা অসীম। মহান আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং জ্ঞানী ব্যক্তিকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভূতপূর্ব নেয়ামত রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে প্রভুত কল্যাণ দান করা হয়েছে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৯)
জ্ঞানীরা নৈতিকতার দিক থেকে অতি উন্নত হয়ে থাকে। কেননা, বুদ্ধিমানেরা নিজ ইলম অনুযায়ী আমল করে থাক।ে এ প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত জ্ঞানী সে যে নিজে যা জানে সে অনুযায়ী আমল করে।’ একজন জ্ঞানী ব্যক্তিদ উচ্চ নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, সমাজের আদর্শ চিকিৎসক ও শ্রেষ্টত্বের দ্যুতি বহন করেন তিনি। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘নৈতিকতার বিচারে যে লোক উত্তম মুমিনদের মধ্যে সেই পূর্ণ ঈমানের অধিকারী।’ (তিরমিজি)
জ্ঞান এমন একটি স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ। যার মধ্যে তা পাওয়া যাবে, তার জন্যে রয়েছে প্রাণি ও প্রকৃতির পক্ষ থেকে ক্ষমার দরখাস্ত। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘কল্যাণকর জ্ঞান দানকারীর জন্য (প্রাণী ও প্রকৃতির) সবাই আল্লাহ’র কাছে (দোয়া) মাগফিরাত কামনা করে। ’ (তিরমিযি) প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই সাওয়াবের অধিকারী। ’ (ইবন মাজাহ) আলোচ্য হাদিস থেকে জানা যায়, জ্ঞানের রাস্তায় চলমান প্রত্যেকের জন্য রয়েছে অফুরান্ত প্রতিদান। আল্লাহর রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘সর্বোত্তম দান হলো কোনো মুসলমান নিজে কোনো বিষয়ে জ্ঞানার্জন করে পরে তা কোনো মুসলমান ভাইকে শিক্ষা দেয়।’ (ইবন মাজাহ) বিদায় হজ্বের ভাষণেও তিনি জ্ঞান বিতরণের বিষয়ে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।
পৃথিবীতে যত জ্ঞান রয়েছে, ‘সত্য জ্ঞান’ তথা ওহির জ্ঞান সবচেয়ে উত্তম ও নির্ভেজাল। পবিত্র কুরআনের আলোকে জ্ঞান তিন ধরণের এক) ‘ইলমুল ইয়াকিন’ বা বিশ্বাসগত জ্ঞান, দুই)  ‘আইনুল ইয়াকিন’ বা চাক্ষুষ জ্ঞান এবং তিন) ‘হাক্কুল ইয়াকিন’ বা সত্যজ্ঞান। আবার জ্ঞানের কারণেই মানুষ হয় নন্দিত, যার মূল উৎস ‘ওহি’ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর ‘সুন্নাহ’। অন্যদিকে মূর্খতা ডেকে আনে পতন ও পরাজয়।  ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ‘আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতে’ আরবে শিক্ষিত লোক ছিলেন মাত্র সতেরো জন, ফলে তৎকালীন সমাজ ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। তাই মহান আল্লাহ ওই বিলীয়মান সমাজে সর্বপ্রথম যে আদেশটি দিলেন তা হলো, ‘পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন…তিনি মানুষকে তাই শিখিয়েছেন, যা সে জানত না। ’ (সুরা আলাক, আয়াত : ০১-০৫)
এ সকল আলোচনা থেকে বোঝা যায়, অজানাকে জানা তথা জ্ঞানচর্চা একটি সার্বক্ষণিক ফরজ কর্তব্য এবং কুরআনি নির্দেশনার প্রথম ফরজ। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানান্বেষণ করো।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজের সম্পর্কে  বলতেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে’ (ইবন মাজাহ)।  তিনিই (সা.) মানবতার শিক্ষক, মানবতার পথনির্দেশক, মহামানব।