Type to search

মাদক সেবন করতে নিষেধ করায় স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে ঘাতক জহিরুল

অভয়নগর

মাদক সেবন করতে নিষেধ করায় স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছে ঘাতক জহিরুল

স্টাফ রিপোর্টার:

পিতার বাড়িতে দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলো সাবিনা ইয়াসমিন বিথী 

 

মাদক সেবন করতে নিষেধ করায় শ্বাসরোধ করে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছে জহিরুল। প্রথমে সে স্ত্রী ও বড় মেয়েকে গলা চেপে ধরে। আস্তে আস্তে দুইজনই নিস্তেজ হয়ে পড়ে এরপর গলায় গামছা পেচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর দুই বছরের শিশুকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঘাতক জহিরুল পুলিশকে এভাবে হত্যাকান্ডের বর্ননা দেন । গত শুক্রবার রাতেই নিহত সাবিনা ইয়াসমিন ওরফে বিথির পিতা মুজিবর রহমান বাদী হয়ে ঘাতক জহিরুল ইসলামের নামে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতার জহিরুল ইসলাম হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী দিয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে আটটায় নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বিথি ও তার দুই কন্য সন্তানকে ময়না তদন্তের পর নামাজে জানাজা শেষে অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশার সোনাতলা গ্রামে বিথি’র পিতার বাড়িতে পারিবারিক কবর স্থানে লাশের দাফন করা হয়েছে।
মলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভয়নগর থানার উপ-পরিদর্শক উত্তম কুমার মন্ডল জানান “গ্রেফতার জহিরুল ইসলাম তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা অভয়নগর আমলী আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী দিয়েছে। এসময় সে নিয়মিত মাদকসেবনের কথা অস্বীকার করেছে। পারিবারিক কলহের কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানায়, জহিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে গাঁজা সেবন করতো। গত একমাস সে অর্থাভাবে গাঁজা ছেড়ে তামাক সেবন করতো। স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বিথি মাদক সেবন পছন্দ করতেন না। যে কারণে স্ত্রীর সাথে তার প্রায় ঝগড়া লেগে থাকতো। এক মাস আগে স্ত্রী জহিরুল ইসলামের ওপর রাগ করে দুই কন্যা সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি সিদ্দিপাশায় চলে আসে। গত ৯ জুলাই (শনিবার) জহিরুল ইসলাম বাবু শশুরবাড়ি সিদ্দিপাশায় বেড়াতে যায়। গত শুক্রবার (১৫/৭/২২) স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে অভয়নগর উপজেলার চাঁপাতলা গ্রামের নগরঘাটে পৌছানোর আগেই ঘাসবনের মধ্যে নিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। দুপুর ৩টার দিকে জহিরুল যশোর সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে বাড়িতে পৌছায়। এরপর বাড়ির লোকজন স্ত্রী ও সন্তান কথা জানতে চাইলে সে তাদের হত্যা করেছে বলে জানায়। বাড়ির লোকজন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে জানায়। ওই ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম তাদের বাড়িতে আসলে তারা জহিরুলকে পুলিশে সোপর্দ করে। জহিরুল পুলিশকে জানায় সে তার স্ত্রী ও সন্তানদের মেরে ফেলেছে সে নিজেও মরতে চায়। এরপর বসুন্দিয়া পুলিশ অভয়নগর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে।

জহিরুলে গ্রামে যেয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জহিরুল খারাপ প্রকৃতির লোক। কয়েক বছর আগে সে গ্রামের একজন চিকিৎসককে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিলো। ঘটনার দিন সে স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে নিয়ে  চাপাতলার শাল বাগানের মধ্য দিয়ে আসছিলো। শাল বাগানে এসে সে স্ত্রীকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। সেখান থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে ঝগড়া করতে করতে হেটে বাড়ি যাচ্ছিলো। পরে সে চাপাতলার একটি নির্জন স্থান  নূর ইসলাম খানের ঘাস বনে নিয়ে একে একে তিন জনকে হত্যা করে। লাশ ফেলে রেখে বাড়ি যায়। পথে তাকে অস্বাভাবিক দেখে কী হয়েছে জানতে চাইলে সে ক্ষিপ্ত হয়। পরে সে গ্রামে মুরাদ নাম এক  বন্ধুুর বাড়িতে ওঠে। ওই বন্ধুর মা তাকে উম্মাদ দেখে কী হয়েছে তা জানতে চায়। জহিরুল এ সময় হত্যার কথা স্বীকার করে। তবে লাশ কোথায় রেখেছে তা বলতে চায়নি। ওই বন্ধুর মা তখন জহিরুলের বাড়িতে খবর পাঠায় । খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন তাকে ধরে পুলিশে দেয়। তবে  জহিরুল কী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে তা এলাকার কেউ বলতে পারেনি।

জহিরুলের পিতা অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী মশিয়ার রহমান জানান, তার পাঁচ ছেলের মধ্যে জরহরুল ২য় সন্তান। পারিবারিক ভাবে ১১ বছর আগে তার বিয়ে হয় অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশার সোনাতলা গ্রামে। বিয়ের পর পরিবারে অশান্তি ছিলো। জহিরুল স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করতো। মাঝে মাঝে সে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি আসতো। তার ছেলে বাগেরহাটের রামপালে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো বলে তিনি জানান।

এদিকে নিহতের ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে সাবিনা ইয়াসমিনের বাবা মুজিবর রহমান বাদী হয়ে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ জহিরুলকে গ্রেপ্তার করেছে।

অভয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিলন কুমার মন্ডল বলেন,‘এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মামলা হয়েছে। তিনি মাদকাশক্ত ছিলেন কিন্তু স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বিথি মাদক সেবন পছন্দ করতেন না। যে কারণে শ্বাসরোধ করে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জহিরুল ইসলাম স্বীকার করেছেন। স্ত্রীকে হত্যার পর তার সন্তানদের কে দেখবে একথা ভেবে সে তার সন্তানদেরও হত্যা করে।