Type to search

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অর্থনৈতিক রিপোর্টিং বিষয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত

অর্থনীতি

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির অর্থনৈতিক রিপোর্টিং বিষয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি কর্তৃক দিনব্যাপী দেশের
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের উদ্দ্যেশে আয়োজিত কর্মশালায় সম্মানীয় অতিথি বলেন, সত্য তুলে ধরাই সংবাদকর্মীদের প্রধান কর্তব্য।
পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও সম্মানজনক পেশার অন্যতম হচ্ছে সাংবাদিকতা। আর সমাজের সামগ্রিক বিষয়াদি সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। তাই সত্যি হোক আর মিথ্যা হোক—প্রকৃত ঘটনা নীতিনৈতিকতা মেনে নিরপেক্ষভাবে সমাজের সামনে তুলে ধরাই সংবাদকর্মীদের প্রধান কর্তব্য।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত “প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্থনৈতিক বিষয়ক রিপোর্টারদের জন্য কর্মশালা” শীর্ষক অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক  এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, পৃথিবী জুড়েই সংবাদপত্র শিল্পে পুঁজিবাদের আগ্রাসনের কারণে সত্য প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সংবাদকর্মীদের সমবায়ী মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা গেলে, সত্য প্রকাশের সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ইস্কাটনস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই কর্মশালায় দেশের জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অর্থনৈতিক রিপোর্টাররা অংশগ্রহণ করেন।

কর্মশালায় ‘সাংবাকিতায় আচরণ, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা’ বিষয়ক সেশনে ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রতিবেদনে সঠিক ও বস্তনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরা সংবাদকর্মীদের জন্য চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সংবাদপত্র পেশার আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে। সঠিক তথ্য সমাজে আলোর ভূমিকা পালন করে। যেকোনো সংকটের সময় সঠিক তথ্যই সাধারণ মানুষকে পথ দেখায়, তথ্যভ্রান্ত্রির এই যুগে সাংবাদিকদের বস্তনিষ্ঠ তথ্যই আমাদের সমাজকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে।
গণমানুষের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ‘বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং বাংলাদেশ : সাম্প্রতিক বিষয়াবলী’ শীর্ষক সেশনে বলেন, কোভিড পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এখন যে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য ভাইরাস ও ইউক্রেনে রুশ হামলাকে দায়ী করা হলেও আসলে আর্থিকীকরণকৃত বিশ্বব্যবস্থায় এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে এখন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পালাবদল শুরু হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির ভরকেন্দ্র ইউরোপ-আমেরিকা থেকে এশিয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অঙ্গনে তার প্রভাব কতটা এবং প্রভাবের কারণে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কতটা, কিংবা পরিবর্তন হলে তার সম্ভাব্য রূপ কেমন হতে পারে—সেসব নিয়ে অনুসন্ধানী, বিশ্লেষণধর্মী ও সত্য প্রতিবেদন করা গণমাধ্যমকর্মীদের  জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে।
‘বিশ্বায়ন, শ্রম অভিবসান ও বাণিজ্য সাংবাদিকতা’ শীর্ষক সেশনে প্রথম আলোর অনলাইন বিভাগের প্রধান শওকত হোসেন মাসুম বলেন, বিশ্বায়নের কারণে সহজ ও সস্তা হয়ে গেছে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও সরবরাহ ব্যবস্থা। এখন অন্যের প্রযুক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ, এমনকি শ্রমও সস্তায় ব্যবহার করার যায়। এ কারণে শ্রম অভিবাসন বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সংকটে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিষয়ক সাংবাদিকদের জন্য সকল উপাদানই বিদ্যমান। তবে এক্ষেত্রে তাদের সবার আগে ভাবতে হবে পাঠকের জায়গা থেকে। তা না-হলে বাণিজ্য সংবাদকে মূলধারার সংবাদের কাতারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। আর এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুসাংবাদিকতা এবং এটিই কেবল সাংবাদিক পেশাকে টিকিয়ে রাখতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলামের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী এই কর্মশালায় সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পিকেএসফের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ বলেন, মোট শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে নিয়োজিত। এ জন্য তাদের ভাগ্যোন্নয়নে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে তাদের বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব। এতে করে জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন সহজতর হবে।

সমাপনী অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবার সোবহান চৌধুরী বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের শুধু দেশীয় তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না, বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বা অন্য বিভাগে কর্মরত রিপোর্টারদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য তথ্য উপস্থাপন করাই মূলধারারর গণমাধ্যমের মূল দায়িত্ব।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য ও কর্মশালা সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল ইসলাম সিকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন—কারিমুন্নেছা জলি (দৈনিক জনকন্ঠ), মো. মনির হোসেন (দৈনিক যুগান্তর), শেখ তরিকুল ইসলাম (দেশ টিভি), শান্ত কে সিনহা (একাত্তর টেলিভিশন), সাইদ আরমান (নাগরিক টিভি), তানজিলা খানম সাথী (বৈশাখী টেলিভিশন), রিজভী নেওয়াজ (চ্যানেল আই), ফয়জুল্লাহ (প্রথম আলো), মো. জসীম উদ্দিন (দৈনিক সমকাল), জাহিদুল ইসলাম (দৈনিক ইনকিলাব), সাজ্জাদ জাহান (এসএ টেলিভিশন), মো. রুহুল আমিন (ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন), মো. জয়নাল আবেদীন খান (আজকের পত্রিকা), মো. সাইফুল হক (জাগোনিউজ২৪.কম), আহাম্মাদ পারভেজ খান (বাংলাদেশ পোস্ট), এস এম খোরশেদ আলম, আবু রায়হান রেজা চৌধুরী (মাইটিভি), মু. জোনায়েদ (দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ), রাসেল মাহমুদ (বাণিজ্য বার্তা), শাহ মো. সাইফুল ইসলাম (শেয়ারনিউজ২৪.কম), আনোয়ার হোসাইন সোহেল (বাংলাভিশন), মো. মামুন মিয়া, সানজিদা আক্তার শম্পা (সংবাদ প্রকাশ), ফারুক আহমাদ আরিফ (দৈনিক আনন্দবাজার), মো. জাহিদুল ইসলাম (দৈনিক আমার সংবাদ), মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, আহসান হাবিব (দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড), আলতাফ হোসেন (দৈনিক খোলা কাগজ), হাফিজুর রহমান (দৈনিক বণিক বার্তা), কাবেরী মৈত্রেয় (একাত্তর টেলিভিশন), মো.মোতাছিম বিল্লাহ (দৈনিক মানবজমিন), আতিয়া আনোয়ার (চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর), সম্রাট আনোয়ার (এটিএন নিউজ), মানিক মুনতাসির (বাংলাদেশ প্রতিদিন), মুশফিক উস সালেহীন (এনটিভি) ও সালাহউদ্দিন আহমদ বাবলু (এসএ টিভি)। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।