Type to search

নিবন্ধ : জ্ঞানের প্রাচুর্য এবং সীমিত ধনের সুখ

অন্যান্য

নিবন্ধ : জ্ঞানের প্রাচুর্য এবং সীমিত ধনের সুখ

 

 বিলাল মাহিনী : ধনীর ধনে যেমন তৃপ্তি মেটে না, তেমনি ইলম (জ্ঞান) অনুসন্ধানীর ইলম অর্জনেও আত্মা ভরে না। একজন সম্পদশালী  যতোই সম্পদের মালিক হয়, ততোই তার সম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার যত সম্পদ তার ততো চাহিদা। ধনীর অভাব কখনো কমে না, বরং বাড়তে থাকে। যেমনটি বিশ্বনবী স. বলেছেন, ‘কোনো আদম সন্তানকে যদি দুটি স্বর্নের পাহাড় দেয়া হয়, তবে সে তৃতীয়টির জন্য লালায়িত থাকবে। (আল-হাদিস)

একইভাবে যিনি ইলম তথা জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন, বৃদ্ধ বয়সেও তিনি জ্ঞানের পেছনে দৌড়াতে থাকেন। জ্ঞান পিপাসা তাঁর মিটে না কখনো। জ্ঞান সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি কিছুই জানি না, মনে হয় যেনো জ্ঞান সমুদ্রের কিনারে দাঁড়িয়ে কিছু বালুকনা কুড়িয়েছি মাত্র।’ জ্ঞানী এবং সম্পদশালীর মধ্যে এই সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। দুজনের কারোরই ধনে এবং জ্ঞানে তৃপ্তি মেটে না। যেমন আসমানী কিতাব আল কুরআনের ব্যাখ্যার কোনে সীমা নেই। কেনো মুফাসসির-ই পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা লিখে শেষ করতে পারবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘দুনিয়ার সকল বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং সাগর মহাসাগরের পানিগুলো যদি কালি হয়, এরপর উক্ত কলম-কালি দিয়ে যদি তোমরা কুরআনের ব্যাখ্যা লেখা শুরু করো তবে, তোমাদের কলম কালি সব শেষ হয়ে যাবে কিন্তু কুরআনের ব্যাখ্যা লেখা শেষ হবে না।’

জ্ঞান হল মানুষের জীবন চলার পথে আলো। আলো ছাড়া যেমন কেউ পথ  চলতে পারে না, তেমনি জ্ঞান ছাড়াও প্রকৃত মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করা যায় না। কুরআনে পাকের অপর স্থানে জ্ঞান ও অজ্ঞতা সম্পর্কে এভাবেই পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে “হে নবী বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান লোক কি এক হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে?” (সূরা রাদ, আয়াত-১৬)। জ্ঞানী লোকদের আল্লাহ তায়ালা উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন”(সূরা মুজাদালাহ, আয়াত-১১)।
অর্থ যেমন মানুষের সকল সুখ-শান্তি মর্যাদা, প্রতিপত্তি সবকিছুর মূলে কাজ করে তেমনি হানাহানি, প্রতিহিংসা, অশান্তি তথা সমস্ত অপকর্মের মূলেও কাজ করে। অর্থের লোভেই মানুষ নীতিবর্জিত হয়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। অর্থের কারণেই আপনজনের ভালোবাসাহীনতা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কছেদ, বন্ধুতে বন্ধুতে বিচ্ছেদ, জাতি-জাতিতে হানাহানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সৃষ্টি হয়। জগতের যাবতীয় অনাসৃষ্টি, অঘটন, বিশৃঙ্খলা সবকিছুর মূলে রয়েছে অর্থ। অর্থ এমন এক উপাদান যার নেশায় মানুষ নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতম কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অর্থ নেশায় চিন্তা- চেতনা, আচার-ব্যবহার, কাজকর্ম সবকিছুই অর্থমুখী হয়ে ওঠে। অর্থের জন্য মানুষ মানুষকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। অর্থ এমন এক জিনিস যার মোহে পড়ে মানুষ নীতি, চরিত্র, বিবেক বিসর্জন দেয়। অর্থের অযাচিত বা অপব্যবহার ধ্বংসই ডেকে আনে, অর্থ হয়ে উঠে সকল অশান্তির উৎস। অর্থের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি মানুষকে পশুত্বের মোড়কে আবৃত করে। সে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থকে বাদ দিয়ে নিজ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। জগতের সকল অপকর্মের পেছনেই অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত। অর্থই মানুষকে কুপথের দিকে ধাবিত করে।

সুষ্ঠু, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য অর্থের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যায় না। আবার অর্থই অনাসৃষ্টি, অশান্তি ও হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্বল্প সম্পদ ও জ্ঞান অর্জনে অধিক মনযোগী হওয়া দরকার। রাসূল সা. এর পবিত্র মুখ থেকে আরও উচ্চারিত হয়েছে, ‘‘রাতের কিছু সময় জ্ঞান চর্চা করা পূর্ণ রাত্রি (এবাদতে) কাটানো অপেক্ষা উত্তম” (দারেমী)। আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যার মৃত্যু এমন সময় এসে পৌঁছেছে যখন সে ইসলামকে সমুন্নত রাখার প্রয়াসে জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত বেহেশতে তার ও নবীদের মাঝে মাত্র এক ধাপ পার্থক্য থাকবে। (দারেমী)। প্রিয় রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ তালা যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের (ইসলামের) সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন (বুখারী, মুসলিম)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দান করুন।

জাগতিক জ্ঞান অর্জনের হুকুম :এ প্রসঙ্গে ইমাম গাজালী (রহ.) বলেন, অনুমোদিত জাগতিক জ্ঞান দুই ভাগে বিভক্ত- ১. যা চর্চা করা অপরিহার্য; ২. যা চর্চা করা উত্তম। প্রথমটি হচ্ছে, ওইসব জ্ঞান যা জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা বিদ্যা। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এই জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। একইভাবে গণিত। লেনদেন, মিরাছ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে তা প্রয়োজন। গোটা জনপদে যদি এ জ্ঞানে পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে মানবজীবন অচল-বিকল হয়ে যাবে এবং সবাই কষ্ট পাবে। একইভাবে কৃষি, বয়ন, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও আবশ্যক (ইহইয়াউ উলুমুদ দ্বীন, ১/২৯-৩০)।
পক্ষান্তরে যা মানুষকে কুফর ও ইলহাদের দিকে টেনে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য এবং সুদ গ্রহণের কৌশল ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণ ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষেধ। মোটকথা, পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। তাই জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে মৌলিকভাবে অনৈসলামিক মনে করার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাগতিক জ্ঞান ও কলাকৌশল অর্জন করার একটি খালেছ দ্বীনী দিকও থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনী খেদমত হিসেবেই বিবেচিত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তিতে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা প্রয়োজন। কোরআন মাজিদে সে আদেশ করা হয়েছে এভাবে, ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো (আনফাল :৬০)। জ্ঞান হল মানুষের জীবন চলার পথে আলো। আলো ছাড়া যেমন কেউ পথ  চলতে পারে না, তেমনি জ্ঞান ছাড়াও প্রকৃত মানুষ হিসেবে জীবনযাপন করা যায় না।
             পবিত্র কুরাআন পাকের অপর স্থানে জ্ঞান ও অজ্ঞতা সম্পর্কে এভাবেই পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছে “হে নবী বলুন, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান লোক কি এক হতে পারে? আলো এক ও অভিন্ন হতে পারে?” (সূরা রাদ, আয়াত-১৬)। জ্ঞানী লোকদের আল্লাহ তায়ালা উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। যেমন এরশাদ হচ্ছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের সুউচ্চ মর্যাদা দান করবেন”(সূরা মুজাদালাহ, আয়াত-১১)। অর্থ যেমন মানুষের সকল সুখ-শান্তি, মর্যাদা, প্রতিপত্তি সবকিছুর মূলে কাজ করে তেমনি হানাহানি, প্রতিহিংসা, অশান্তি তথা সমস্ত অপকর্মের মূলেও কাজ করে। অর্থের লোভেই মানুষ নীতিবর্জিত হয়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। অর্থের কারণেই আপনজনের ভালোবাসাহীনতা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কছেদ, বন্ধুতে বন্ধুতে বিচ্ছেদ, জাতি-জাতিতে হানাহানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সৃষ্টি হয়। জগতের যাবতীয় অনাসৃষ্টি, অঘটন, বিশৃঙ্খলা সবকিছুর মূলে রয়েছে অর্থ। অর্থ এমন এক উপাদান যার নেশায় মানুষ নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতম কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অর্থ নেশায় চিন্তা- চেতনা, আচার-ব্যবহার, কাজকর্ম সবকিছুই অর্থমুখী হয়ে ওঠে। অর্থের জন্য মানুষ মানুষকে হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। অর্থ এমন এক জিনিস যার মোহে পড়ে মানুষ নীতি, চরিত্র, বিবেক বিসর্জন দেয়। অর্থের অযাচিত বা অপব্যবহার ধ্বংসই ডেকে আনে, অর্থ হয়ে উঠে সকল অশান্তির উৎস। অর্থের ও অন্ধকার কি প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি মানুষকে পশুত্বের মোড়কে আবৃত করে। সে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্বার্থকে বাদ দিয়ে নিজ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। জগতের সকল অপকর্মের পেছনেই অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত। অর্থই মানুষকে কুপথের দিকে ধাবিত করে।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাগতিক জ্ঞান ও কলাকৌশল অর্জন করার একটি খালেছ দ্বীনী দিকও থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনী খেদমত হিসেবেই বিবেচিত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সামরিক শক্তিতে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা প্রয়োজন। কোরআন মাজিদে সে আদেশ করা হয়েছে এভাবে, ‘তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো (আনফাল :৬০)।
তবে মজার ব্যাপার হলো, জ্ঞান অন্বেষণকারী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে অমৃত সুধা তথা পরম সুখ লাভ করেন। কিন্তু ধনী ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে অসুখী হতে থাকে। সম্পদ যার যত বেশি দুশ্চিন্তা অসুখ ততো বেশি দেখা দেয়। তাইতো, রাজার অসুখ নিরাময়ের জন্য সুখী ব্যক্তির জামা খুঁজতে গিয়ে এমন একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেলো, যার জামাই নেই। প্রবাদে বলা হয়, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, জ্ঞানের পথে নিজেকে সপে দিতে পারলে এবং স্বল্প সম্পদে তৃপ্ত থাকলে দুনিয়ায় সুখী মানুষ হিসেবে চলা সহজ হয়।