Type to search

দেশসেরা উদ্ভাবক মাসুদুল হাসান

জেলার সংবাদ বাংলাদেশ

দেশসেরা উদ্ভাবক মাসুদুল হাসান

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ দেশসেরা উদ্ভাবক-২০২১ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান রনি। এ বছর সারাদেশ থেকে ৩ জন শিক্ষা অফিসার ও ২ জন সহকারী শিক্ষককে দেশসেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত করা হয়, তাদের মধ্যে তিনি একজন। করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যেও কীভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া যায় সেই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন তিনি।

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ও সচিবের উপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ সারাদেশ থেকে নেওয়া ইনোভেশন শোকেসিং যাচাই-বাছাই করে তাদের নির্বাচিত করা হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুনে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে মাসুদুল হাসান দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় যোগদান করেন। এরপর থেকেই তাঁর তত্ত্বাবধানে উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের চেহারা পাল্টাতে শুরু করে। তিনি বিদ্যালয় সুসজ্জিতকরণ, ( ১৯৪৭ হতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস সংবলিত বিভিন্ন ছবি দ্বারা শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিতকরণ) মুক্তিযুদ্ধ গ্যালালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, সততা স্টোর, নৈতিকতা গ্যালারি, শিশু শ্রেণিতে টাইলস, পতাকা বেদিতে টাইলস, স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ, শিশু পার্ক নির্মাণ, করোনাকালীন শিশুদের ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ, বিজ্ঞান উপকরণ সরবরাহ, বিদ্যালয়গুলোতে সিসি ক্যামেরা চালু, করোনাকালীন শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য অনলাইনে ক্লাস নেওয়া এবং সেই ক্লাসগুলো ডাউনলোড করে শিশুদের পেনড্রাইভে করে বিতরণ করার ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রতিটি শিক্ষাভিত্তিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। এর আগে ২০২০ সালে কন্যাশিশু সুরক্ষা সেল নামের একটা ইনোভেশন নিয়ে কাজ করে তিনি দেশসেরা হয়েছিলেন।

এবার তাঁর উদ্ভাবিত ইনোভেটিভ আইডিয়াটিতে করোনাকালীন বিকল্প শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো:

বাস্তবায়ন কৌশল: পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষ শিক্ষকবৃন্দের পাঠদানের অডিও ও ভিডিও (কম দামি সহজলভ্য মোবাইল উপযোগী) রেকর্ড করে বিদ্যালয়ের ল্যাপটপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেমোরি কার্ডে কপি করে প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের প্রদান করে করোনাকালীন পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা। এ কার্যক্রমে একজন শিক্ষক ফোনে সপ্তাহে ২-৩ দিন নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খোঁজ খবর নেবেন, বাড়ির কাজ দেবেন, আদায় করবেন, পাঠোন্নতি ‘স্টুডেন্ট প্রোফাইল’ রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন। ফলে মাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী অধ্যায়ভিত্তিক পাঠ শিশুরা সহজেই বুঝতে পারবে এবং অধিক সংখ্যক শিশু বিদ্যালয় বন্ধ থাকার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে।

আইডিয়া বাস্তবায়নে গৃহীত কার্যক্রম: করোনাকালীন শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ইনোভেশন আইডিয়াটি বাস্তবায়নে বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা সভা ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকদের পাঠদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্লাসের ভিডিও ও অডিও ধারণের জন্য ডিজিটাল স্টুডিও প্রস্তুত করা হয়। পাঠপরিকল্পনা অনুযায়ী মানসম্মত কন্টেন্টের আলোকে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় ও উপযোগী করে প্রতিটি বিষয়ে পাঠদানের ভিডিও ও অডিও ধারণ করা হয়। এছাড়া শিশুর মনোদৈহিক সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে একইসঙ্গে করোনাকালীন শিশুর যত্ন, করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে শিক্ষকদের মোটিভেশনাল ভিডিও/অডিও তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো হয়।

ইনোভেশন কার্যক্রমের সুফল সুবিধাভোগীর দোড়গোড়ায় পৌঁছানো ও জনসম্পৃক্তকরণ: করোনাকালীন শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার এই কার্যক্রমে জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দ, প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, সহকারী শিক্ষকবৃন্দ, এসএমসি’র সদস্য এবং অভিভাবকরা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং সার্বিক সহযোগিতা করেন। জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর এই ইনোভেশন কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত সভায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের কার্যক্রম সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং কয়েকজন শিশুর মাঝে পাঠদানের ভিডিও ও অডিও’র মেমোরি কার্ড প্রদান করেছেন। এ ইনোভেশন কার্যক্রমের সেবা শিশুদের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে শিক্ষকদের আহ্বান জানান তিনি।

ইনোভেশন কার্যক্রমটির সুফল: করোনাকালীন শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অন্যান্য চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি ইনোভেশন কার্যক্রমটি পরিচালনার ফলে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলায় পাইলটিং-এর আওতাভুক্ত বিদ্যালয়সমূহে অধিক সংখ্যক (প্রায় ৯৭ শতাংশ) শিশুকে পাঠদান কার্যক্রমের আওতায় আনা গেছে। যেসব দরিদ্র শিক্ষার্থীর অভিভাবকের স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিভিশন ও ক্যাবল সংযোগ নেই তাদের সন্তানও কম দামি (৫০০-১০০০) বাটন ফোনেও মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে দিনের যে কোনও সময় পাঠদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে।

আইডিয়া সম্প্রসারণ কৌশল: অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত ক্লাসগুলো ভিডিও/অডিওটি সংরক্ষণ করতে হবে। পরবর্তীতে যেসব শিশুর অভিভাবকের স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট সংযোগ, টেলিভিশন ও ক্যাবল সংযোগ নেই তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে সব শিশুর পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার সময়ে সারা পৃথিবী যখন স্থবির, তখন প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে উদ্ভাবনী আইডিয়া আহ্বান করে মন্ত্রণালয়। তখন থেকেই হাকিমপুর উপজেলার শিক্ষার্থীদের জন্য করোনার সময়ের শিক্ষা পদ্ধতি বা বিকল্প নিয়ে ভাবতে থাকি। সেই ভাবনা থেকেই ‘শিক্ষকবৃন্দের পাঠদানের অডিও ও ভিডিও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের প্রদান (মেমোরি কার্ডে) করে করোনাকালীন পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা’ শীর্ষক ইনোভেশন আইডিয়া নিয়ে কাজ করেছি; যা পরবর্তীতে পাইলটিং-এর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদিত হয়। সম্প্রতি এর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ইনোভেশন শোকেসিং-এ দেশসেরা উদ্ভাবক ২০২১ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। এ পুরস্কার প্রাপ্তি আমাকে আগামী দিনগুলোতে ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করবে।’

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোহাম্মাদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তাঁর এ অনন্য অবদানের জন্য আমার পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। করোনা মহামারির এ সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তিনি অনলাইনে ক্লাস নেওয়া এবং সেই ক্লাসগুলো ডাউনলোড করে শিশুদের পেনড্রাইভে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন।’ তাঁর এই শোকেসিং পদ্ধতি যদি জাতীয়ভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র, বাংলা ট্রিবিউন