Type to search

চৌগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এমএ সালামের টাকা চুরির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল

চৌগাছা

চৌগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এমএ সালামের টাকা চুরির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল

 

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এমএ সালাম টাকা চুরি করছেন এমন একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত সোমবার (১৪ জুন) সন্ধ্যার কিছু পরেই সিসিটিভি ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তিনি একটি দোকানের সিসিটিভি মনিটরের দিকে তাকাচ্ছেন ও ক্যাশ বাক্স থেকে কিছু তুলে নিজের পকেটে রাখছেন।
এমএ সালাম যশোর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপিকা নার্গিস ইসলাম ও তার পুত্র কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের অনুসারী বলে পরিচিত। একই সাথে তিনি চৌগাছা বিএনপির বিবাদমান দুই গ্রুপের একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন। উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পদ (সভাপতি) প্রত্যাশিও তিনি।
এমএ সালাম উপজেলার চৌগাছা সদর ইউনিয়নের উত্তর কয়ারপাড়া গ্রামের মৃত হাজী মফেজ উদ্দীন ধনীর ছেলে। তিনি চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক সহ-সভাপতি ও চৌগাছা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি। চৌগাছা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সালাম বর্তমানে উপজেলা বিএনপির ২য় যুগ্ম-আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ‘উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক এম এ সালাম ওরফে সালাম ধনী তার পরিবারের মালিকাধীন ‘ধনী প্লাজা’ মার্কেটের জাহিদ ইলেকট্রনিক্স নামে একটি দোকানে এসে দাড়িয়ে তার মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দোকানের ক্যাশে বসে থাকা কর্মচারিকে কিছু কিনে আনতে বলেন। কর্মচারিটি বেরিয়ে যাবার সাথে সাথেই তিনি কয়েকবার সিসিটিভি মনিটরের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখছেন। এরপরই সামনের টেবিলের উপর থেকে নিচু হয়ে ক্যাশ ড্রয়ার থেকে কিছু তুলে নিয়ে প্রথমে বাম হাতে রাখেন। পরে সেটি শার্টের বুক পকেটে ঢুকাচ্ছেন। ’
এ বিষয়ে দোকানের সত্বাধিকারী জাহিদ বলেন এ ঘটনা প্রায় এক বছর আগের হলেও চুরির ঘটনা নতুন নয়। এই চুরির আগেও তিনি (এমএ সালাম) অনেকবার এভাবে টাকা নিয়েছেন। সেদিন তিনি ক্যাশ থেকে ২শত টাকা নিয়েছিলেন বলেও জানান জাহিদ। জাহিদ আরো বলেন তার (এমএ সালাম) মার্কেটেই দোকান ভাড়া নিয়ে আমি ব্যাবসা করি। কাজেই কোনো প্রকার বিচারের আশা করলে ব্যাবসার জায়গাটা হারিয়ে ফেলতে পারি। তবে জাহিদ আরও জানান ভিডিওটি ফাঁসের সাথে তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি তখনও থানায় কোন অভিযোগ করিনি। আর আমি ভিডিওটি ফাঁস করলে তখনই করতে পারতাম।
তবে ওই মার্কেটের কয়েকজন বলেছেন ভিডিওটি সিসিটিভির আসল ফুটেজ নয়। বিষয়টি নিয়ে তখন এমএ সালামের বড় ভাই এমএ সামাদের নেতৃত্বে বিচার হয়েছিল। তখন ফুটেজ দেখার সময় কেউ মোবাইল ফেনে ভিডিও করে রাখে। সেটিই সোমবার ভাইরাল করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কেটের কয়েকজন দোকানি ও চৌগাছার একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলেন সেসময় বিষয়টি উপজেলার শীর্ষ রাজনীতিবিদরা মুটামুটি সবাই জানতেন। সম্মানি পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিষয়টি যেন ফাঁস না হয় এ বিষয়ে সব পক্ষ চেষ্টা করে ঘটনাটি চাপা দেয়া হয় তখন।
তবে ফেসবুকে ভিডিওটির কমেন্টে উপজেলায় সালাম পক্ষের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে কমেন্ট করেছেন। চৌগাছা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মেহেরান আহমেদ জিতু এক কমেন্টে বলেন, ‘‘আপনারা কি টাকা দেখতে পারছেন সালাম চাচার হাতে,,,,স্পষ্ট ভাবে দেখুন। কোনো চক্রান্ত মেনে নিবো না আমরা,,,,, ওই দোকানের মালিকের বক্তব্য দুই রকম, কেন একবার বলে সে জানে না ,, একবার বলে ১বছর আগের কেন।’’ অন্য আরো দুটি কমেন্টে তিনি লেখেন ‘‘ওনার হাতে কি কোনো টাকা দেখতে পারছেন আপনারা।’’ ‘‘আর ভিডিও ফুটেজ কি ১বছর পর ও পাওয়া যায়।,,বিশাল চক্রান্ত চলছে এম এ সালাম চাচার নিয়ে।’’
এদিকে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ একজন নেতার এমন নৈতিক স্খলনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা চরম মর্মাহত ও বিব্রত হয়ে পড়েছেন। লজ্জায়-অপমানে মঙ্গলবার অধিকাংশ নেতাদের চৌগাছা শহরে বের হতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা বিএনপির সদস্য মিজানুর রহমান খান, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জহুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক ইউনুচ আলী, যুগ্ম আহবায়ক ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসানসহা উপজেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের কেউই স্বনামে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তারা এককথায় বলেছেন আমরা স্তম্ভিত ও বিব্রত। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন ‘এটা তার স্বভাব দোষ’। তারা বলেন বিষয়টি নিয়ে আপনারা নিউজ করেন। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। এ নিয়ে আমরা চরম লজ্জা ও অপমানের স্বীকার হচ্ছি। কয়েকজন নেতা বলেন,“সম্মান দেয়ার মালিক আল্লাহ। কেউ যদি নিজের সম্মান না রাখতে পারেন, তবে আমাদের কি’ই বা বলার আছে”।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার সকাল ১০.৪৭ মিনিট থেকে বেশ কয়েকবার এমএ সালামের ব্যবহৃত মুঠো ফোন ০১৭৩৬-২০২২১৬ নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *