Type to search

ভয় ও আতঙ্কে আছেন ভুক্তভোগী পরিবার! ২৭ দিন ধরে হাসপাতাল ছাড়লেন সেই গৃহবধূ

নড়াইল

ভয় ও আতঙ্কে আছেন ভুক্তভোগী পরিবার! ২৭ দিন ধরে হাসপাতাল ছাড়লেন সেই গৃহবধূ

নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইল সদর উপজেলার পলইডাঙ্গা গ্রামে স্বামীকে মাদকসেবনে বাঁধা দেয়ায়
স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসাধীন গৃহবধূ কাজী সুমাইয়া
ইসলাম ২৭দিন পর বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নড়াইল সদর
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন তিনি। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বামী আশিকসহ
শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ গৃহবধূ সুমাইয়াকে বেদম মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় ওইদিন হাসপাতালে ভর্তি হন সুমাইয়া। তবে সুমাইয়াকে নির্যাতনের
মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়েছেন
বলে জানান তার (সুমাইয়া) বড় ভাই কাজী রমজান। এমনকি জনপ্রতিনিধি,
রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক পরিচয়েও মামলা তুলে নেয়ার জন্য বারবার বলা হয়েছে।
সুমাইয়া বাড়িতে ফেরার আগে বুধবার সকালে এক ব্যক্তি ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে
হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে সুমাইয়ার ভাই রমজানসহ তার পরিবারের সঙ্গে এলোমেলো
কথা বলেন। সাংবাদিক পরিচয়ধারী ওই ব্যক্তি মোবাইল ফোনেও সুমাইয়ার ভাই
রমজানের সঙ্গে উল্টোপাল্টা কথা বলেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
তাই ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন সুমাইয়াসহ তার পরিবার। আগামি ৬ নভেম্বর
অনুষ্ঠেয় এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন সুমাইয়া।
এদিকে সুমাইয়ার স্বামী আশিক খান, বাবা মুনসুর খানসহ চারজনের নামে
দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে নির্যাতিতার বাবা (সুমাইয়া) কাজী নজরুল ইসলাম
বাদশাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৪
সেপ্টেম্বর দুপুরে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বাদশা সদর থানায় জীবনের
নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে নজরুল ইসলাম উল্লেখ
করেছেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শহরের শেখ রাসেল সেতুর কাছে পৌঁছালে বিবাদিসহ
(সুমাইয়ার শ্বশুর) অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজন লোক মামলা তুলে নেয়ার জন্য
হুমকি দেয়। মামলা তুলে না নেয়া হলে খুন-জখম করবে মর্মে শাসিয়ে যায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ মাস আগে নড়াইল সদরের পলইডাঙ্গা
গ্রামের মনসুর খানের ছেলে আশিক খানের সঙ্গে লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা
গ্রামের নজরুল ইসলাম বাদশার মেয়ে কাজী সুমাইয়া ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর
সুমাইয়া জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত। সংসারে সুখের কথা বিবেচনায়
স্বামীর মাদকাসক্তের বিষয়টি গোপন রাখলেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়।
স্বামীকে মাদক থেকে দুরে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সুমাইয়া।
এ কারণে প্রায়ই সুমাইয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো। এরই
জের ধরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আশিক তার স্ত্রীকে কিল-ঘুষি ছাড়াও রড
দিয়ে বেদম মারধর করে পালিয়ে যায়।
এদিকে, আশিকের বাবা-মা ছেলে শাসন করেন না বলে অভিযোগ করেন গৃহবধূ
সুমাইয়া। বরং সুমাইয়ার শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ তাকে প্রায়ই শারীরিক এবং
মানসিক নির্যাতন করেন।
অন্যদিকে, প্রায় ছয় মাস আগে হঠাৎ করে আর-ওয়ান ফাইভ মোটরসাইকেলের জন্য
বাহানা শুরু করে অভিযুক্ত আশিক খান। মোটরসাইকেলের এ আবদার পূরণ করতে দেরি
হওয়ায় সুমাইয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
গৃহবধূ সুমাইয়া বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নজরুল ইসলাম বাদশা বলেন,
বিয়ের দুই মাস পর থেকেই আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। জামাই আশিক
প্রায়ই সুমাইয়াকে মারধর করে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার পারিবারিক ভাবে শালিস
হয়েছে। তবে আশিকের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর আমার
মেয়েকে রড দিয়ে বেদম মারধর করে আশিক। এতে তার তিনটি দাঁত ভেঙ্গে গেছে।
ঠোঁটে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। মাথা, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত
রয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। সুমাইয়ার স্বামী আশিক নড়াইলে
নির্মাণাধীন রেলওয়ে প্রকল্পে চীনাদের সঙ্গে দোভাষী হিসেবে কাজ করত।
সুমাইয়ার বড় ভাই কাজী রমজান বলেন, আমার বোনকে নির্যাতনের ঘটনায় আশিকসহ
তার বাবা-মা ও বোনের নামে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে সদর থানায় মামলা হয়েছে।
এরপর আসামিরা গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হলে মূল অভিযুক্ত আশিককে
বিজ্ঞ বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলেও অন্যরা জামিন পান। আদালত থেকে
বের হয়ে ওইদিনই (১৮ সেপ্টেম্বর) আশিকের বাবা মনসুর খান আমার বাবাকে (কাজী
নজরুল ইসলাম) মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। বিভিন্ন সময় আশিকের
আত্মীয়-স্বজন আমাকেও মামলা তোলার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার পার্থ সারথি রায় জানান, সুমাইয়ার
মাথা, ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাকে অনেকদিন
চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নড়াইল সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) মাহমুদুর রহমান বলেন, ভূক্তভোগী
গৃহবধূর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তারা আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। মূল
অভিযুক্ত আশিক খান এখনো কারাগারে আছেন।