Type to search

খেতেই পঁচে যাচ্ছে তরমুজ

সাতক্ষীরা

খেতেই পঁচে যাচ্ছে তরমুজ

শ্যfমনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খুলনা ও সাতক্ষীরার উপক‚লীয় এলাকার তরমুজ চাষিরা। পানি জমে যাওয়ায় পচন ধরে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে শত শত তরমুজ। ফলে লোকসানের শঙ্কায় ভুগছেন তরমুজ চাষিরা।
সাতক্ষীরার উপক‚লীয় উপজেলা শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর, কৈখালী ও কাশিমাড়ি ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষ করছেন কৃষকরা। দেশের অন্য এলাকার তরমুজ যখন প্রায় বিক্রি হয়ে যায় ঠিক তখনই বাজারে উঠতে শুরু করে সাতক্ষীরার এই তরমুজ। অন্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। তবে হঠাৎ বৃষ্টিতে ক্ষেতেই পঁচে যাচ্ছে তরমুজ।
ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের কৃষক আলম মোল্ল্যা সাংবাদিকদের বলেন, আমার ক্ষেতের অল্প কিছু তরমুজ বৃষ্টির আগে বিক্রি হয়ে গেছে। তবে বড় অংশ এখনো ক্ষেতে রয়ে গেছে। কয়েকদিন পর এসব তরমুজ বিক্রি করার কথা ছিল। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে অনেক তরমুজ একবারে পঁচে গেছে। এখনো অনেক তরমুজ পচার পথে।
তিনি বলেন, ‘দুই লাখ টাকা খরচে ৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। ফলনও এবার ভালো হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সব শেষ। এবার প্রায় এক লাখ টাকার ক্ষতি হবে।
এ বছর ৭ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন একই এলাকার কৃষক বিকাশ মÐল। বৃষ্টির পানিতে তার ক্ষেতের অনেক তরমুজ পঁচে যাচ্ছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর করোনার কারণে লকডাউন থাকায় তরমুজের ভালো দাম পাইনি। এবার শুরু থেকে ভালো দাম পেয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়ে গেলো।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জেলায় এ বছর প্রায় দেড়শ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে খুলনার কয়রা উপজেলা সদর হতে কয়রা-পাইকগাছা প্রধান সড়ক ধরে ২৫ কিলোমিটার গেলেই উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের সংগ্রাম মোড়। মোড়েই তরমুজের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমিরুল ইসলাম। তিনি পার্শ্ববর্তী পাইগাছা উপজেলা থেকে এসে তিনি ১১ বিঘা জামিতে তরমুজের চাষ করেছেন কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা ছিলো এবার তরমুজ চাষে ভালো টাকা পাবেন। তার ১১ বিঘার থেকে ৬ বিঘা ক্ষেত সাতক্ষীরা আড়তে বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকা পেয়েছে। আর ৫ বিঘার তরমুজ রাস্তার ধারে নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন বিক্রির জন্য। গত বছর ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায় তার ক্ষেত বিক্রি হয়। অল্প দিনে ভালো লাভ হওয়ায়। এবছর তিনি আড়ৎ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে ১১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন।
সেখান থেকে একই ইউনিয়নের পাটনি খালি গ্রামে রাস্তার ধারে তরমুজ নিয়ে বসে ছিলেন অজিত সরদার। তিনি একটি গরু ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ও ধান বিক্রি করে ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। নিজের সাড়ে তিন বিষা জমি ও দেড় বিঘা জমি লিচ নেন তিনি। লিচ নিতে গুনতে হয় বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা। এবছর তার ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যাপারি তরমুজের দাম বলেনা। এক ব্যাপারি তার ২ বিঘা জমির তরমুজ ১০ হাজার টাকা দাম বলেন। খরচের টাকা তুলতে চিন্তায় রয়েছেন তিনি। এজন্য তিনি সাতক্ষীরার একটি আড়তে তার তরমুজ নিয়ে যাবেন। গত বছর তার নিজের ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ভালো লাভ হওয়ায় এবছর ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন।
একই গ্রামের কৃষক বিমল সরকার তরমুজ ক্ষেতের দু’চালা বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। সেখানে শাহাজান, বাবু, নরেশ বসে গল্প করছিল। তাদের সাথে বিমল সরকার বলেন, ভাই এখন আর ঘুম হয় না, প্রতিদিন ঘুমের বড়ি খেয়ে তরমুজ ক্ষেতে ঘুমাই। ৮ হাজার টাকা করে লিচ নিয়ে ৩৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা তার খরচ হয়েছে। এলাকায় কোন তরমুজের বেপারি তরমুজ কিনছেন না। তাই ৩ বিঘা জমির তরমুজ সাতক্ষীরা একটি আড়তে নিয়ে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। বাকি ৩৩ বিঘার তরমুজ ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে।
হতাশা ও বিরক্ত হয়ে তিনি জানান, গত বছর আর এক জনকে ভাগি নিয়ে ২৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১২ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। তার ভাগে ৬ লাখ টাকা পায়। তাই এবার নিজেই ৩৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। নিজের জমানো টাকা আর এলাকার মানুষের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা সুদে নিয়ে তরমুজ চাষ করেন তিনি।
নরেশ ঢালী বলেন, আমি দু’টা সমিতি থেকে ৮৫ হাজার টাকা ঋত নিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাটনিখালি গ্রামে সাড়ে চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে বেপারীরা বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা বলছে। জমির হারি ও ক্ষেতের খরচ সব মিলিয়ে ৮৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বেপারীরা খরচের টাকাও দাম বলছে না। গত বছর ৩ তিন বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম।
বিমল, নরেশ, আমিরুলের, শাহাজান ও বাবুর মতো শত শত তরমুজচাষীর কাঁধে এখন কষ্টের ভার। হঠাৎ দরপতনে তরমুজ বিক্রি না হওয়ায় তরমুজ নিয়ে স্বপ্ন দেখা চাষীদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। উপক‚লীয় কয়রার চাষীরা খরচের টাকা তুলতে পারা না পারাটা এখন ছেড়ে দিয়েছেন ভাগ্যের ওপর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ঈদের পরে হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায়, অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা কৃষকদের অফ সিজনে তরমুজ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি, আশা করছি কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে।