Type to search

৭১ এর এই দিনে মাগুরায়২৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়

জাতীয়

৭১ এর এই দিনে মাগুরায়২৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স: স্বাধীনতা যুদ্ধে   আত্মোৎসর্গ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা শ্রদ্ধাভারে স্মরণ করি। মুক্তিযুদ্ধ কালিন আজকের এই দিনটিতে মনে পড়ে মাগুরার কামান্না গ্রামের কথা। এই দিনে মাগুরার সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার কামান্না নামক স্থানে  ঘটেছিল এক মর্মান্তিক ঘটনা।
১৯৭১ সালের এই দিনে বর্বর পাকবাহিনীর গুলিতে মাগুরা সদরের হাজীপুর গ্রামের ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান।
এই দিনে ভোর হওয়ায় সেন্ট্রিরা ডিউটি ছেড়ে চলে যান ঘরে। আবুল বাসার বাঁশী বাইরে পায়খানা সেরে গাড়ু হতে ক্যাম্পে ফিরছিলেন। একটা কদবেলও পেয়েছিলেন। অনতিদূরে পাকিস্তানি সেনাদের দেখতে পান। দ্রুত এসে আলী হোসেনকে খবরটা দেন। কিন্তু আলী হোসেন বিশ্বাস না করে দরজা খুললেই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি ছুঁড়তে থাকে। উত্তর দিক ছিল জনবসতি। গুলির শব্দে জেগে ওঠে মুক্তিযোদ্ধারা। সকলেই অপ্রস্তুত। তারপরও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিহত করার জন্য পাল্টা গুলি ছুঁড়তে থাকেন। ওই সময়ে এসএম আব্দুর রহমান ও আব্দুর রশিদ মোল্যা ডিউটি কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। ইছাখাদার আব্দুল মোতালেব ফায়ার শুরু করেন। দুর্ভাগ্য যিনিই বাইরে যেয়ে ফায়ার দিতে থাকেন, তিনিই গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢলে পড়েন। আব্দুল মোতালেবের ভাগ্যেও জোটে এমন মর্মান্তিক ঘটনা। দুর্ভাগ্যক্রমে আব্দুর রহমানের এমএমজি ছিল লিয়াকত আলীর কাছে। ওটা নিয়ে গিয়েছিলেন নিজ গ্রাম গৌরীচরণপুরে। ফলে তিনি ছিলেন নিরস্ত্র। আব্দুর রহমানের পায়ে গুলি লাগে। প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে রক্তক্ষরণ ও জ্বালাপোড়া শুরু হলে সহযোদ্ধা আলমগীর মৃধা লুলুকে গামছা দিয়ে পা বেঁধে দিতে বলেন। একটু ঘরের বাইরে গেলে দেখতে পান পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্র হাতে তাক করে এগিয়ে আসছে। নিরুপায় হয়ে ঘরের মধ্যে বসে পড়েন আব্দুর রহমান। গুলিটা মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। হামাগুড়ি দিয়ে অতিকষ্টে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠেন। দরজা দিয়ে কাঠের ক্যাশ বাক্সের ডালার আড়ালে মৃতের মতো পড়ে থাকেন। রাজাকাররা ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে। ৬ মুক্তিযোদ্ধা সারেন্ডার করলে ৫জনকে গুলি করে মেরে ফেলে তারা। একজনকে ছেড়ে দেয়। নিচ থেকে একজন পাকিস্তানি সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করে – উপর দেখলিয়া? উত্তর আসে- ওস্তাদ দেখলিয়া।
একপর্যায়ে আব্দুর রহমান উল্লেখ করেন – তাদের সহযোদ্ধা গোলজার খাঁ অত্যন্ত সাহসী মুজাহিদ ছিলেন। বিষয়খালীর যুদ্ধে আব্দুল আজিজ শহিদ হলে ১টি গুলি দেখিয়ে বলেছিলেন- আমি আর খান সেনাদের গুলিতে মরবো না। প্রয়োজনে এই গুলিটা দিয়েই আত্মহত্যা করবো। বাস্তবে ঘটলোও তাই। নিজে পা দিয়ে ট্রিগার চেপে আত্মহত্যা করেন। শহিদ গোলজারের দেশাত্মবোধ এবং আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে রইবে। তার রক্ত ও মাথার ঘিলু চারিদিক ছিটিয়ে পড়ে। সেই রক্ত ও ঘিলু গায়ে মেখে মরার মতো পড়েছিলেন গোলাম রসুল মিয়া। পাকিস্তানি সেনারা উপরে এসে সবাইকে বায়োনেট দিয়ে ঘুচিয়ে খুচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। গোলাম রসুল মিয়াকে মৃত ভেবে পা দিয়ে মাড়িয়ে যায়। তখন তার হুঁশ ছিল না। ওই সময়ে পূর্বদিক বগুড়া থেকে মুজিববাহিনী লুৎফর হোসেনের দল গুলি ছুঁড়তে থাকলে পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। পরে স্থানীয় জনগণ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা শহিদদের আত্মীয়স্বজন, শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক আকবর হোসেন ও তার লোকজন এসে শহিদদের কামান্নাতেই গণকবর দেন।
শহিদদের স্মরণে মাগুরার হাজীপুরে ও ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কামান্না নামক স্থানে একটি স্মৃতি সৌধ করা হয়েছে। এখানে প্রতিবছর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করা হয়। এবছরও আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র : সুবর্ণভূমি