Type to search

রবীন্দ্র সাহিত্য ও সমাজে নারীর অবস্থান

সাহিত্য

রবীন্দ্র সাহিত্য ও সমাজে নারীর অবস্থান

বিলাল হোসেন মাহিনী
রবীন্দ্রনাথ! নামটা শুনলেই দৃশ্যপটে ভেসে উঠে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনবদ্য সৃষ্টিগুলো। বিশ্বদরবারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে নতুন উচ্চতায় দাঁড় করাতে রবীন্দ্রনাথের জুড়ি নেই। তিনি একাধারে কবি, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, গীতিকার-সুরকার ও ঔপন্যাসিক। শুধু তাই নয়, বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো দিক ও বিভাগ নেই যেখানে রবি ঠাকুরের হাতের ছোঁয়া লাগেনি। তাঁর কবিতা, গল্প ও গান-উপন্যাসে নারী এক কল্পনাতীত সৃষ্টি। এমন এমন নারী চরিত্র তিনি সৃষ্টি করে গেছেন যার সামাজিক চাহিদা এখনো অক্ষুণœ। তিনি ছোট গল্পের সার্থক স্রষ্টা তাঁর গল্পে উঠে এসেছে গ্রাম বাংলার মূল শিকড় ও রসদ। তিনি কবিতা, গল্প ও উপন্যাসের মাধ্যমে সমাজে প্রচলিত ব্যবস্থার গভীরে গেঁড়ে বসা অপসংস্কৃতি ও অপসংস্কারকে নির্মূল করতে মানুষকে পথ দেখিয়ে গেছেন।

গ্রামের নিপীড়িত, নির্যাতিত সিংহভাগ গোষ্ঠী বিশেষতঃ নারীদের ওপর প্রচলিত অত্যাচার-অবিচার তাঁর সাহিত্যের অন্যতম উপাদান। তিনি সবচেয়ে বেশি মর্মাহত হতেন পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা দেখে। সেই বোধ থেকে নবদ্যুতির আলোকে সৃজনক্ষমতা এক নিরন্তর গতিপ্রবাহকে নিমন্ত্রণ জানান তিনি। তাঁর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের আঙিনা ভরে উঠল এক অপরিচিত ছোট গল্পের মোড়কে। এর আগে বাংলা সাহিত্যে কোন গল্পের ধারা ছিল না। ভাবুক, আবেগপ্রবণ, রোমান্টিক কবি সামাজিক বাস্তবতার টানাপোড়নে হয়ে উঠেন এক বিদগ্ধ সমাজ পর্যবেক্ষক। একেবারে কাছ থেকে অনেকটাই নিজের দেখা বাকিটা সৃষ্টিশীল চেতনায় তৈরি হতে থাকে তাঁর গল্পের সমৃদ্ধ অবয়ব।

নারীর প্রতি বিশেষ দায়বদ্ধতায় এই পশ্চাদপদ অংশের সামাজিক অভিশাপ আর বঞ্চনার যে কঠিন বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে গল্পের মূল আঙ্গিকে সেটাই ছোটগল্পের মাহাত্ম্যক। যা আজ অবধি পাঠক সমাজ নানা মাত্রিকে বিমোহিত আর আলোড়িত হয়ে যাচ্ছে। হৈমন্তী, অপরিচিতাসহ অসংখ্য গল্পে নারীই মূখ্য চরিত্র। ঊনশ শতকের শুরুতে গ্রাম বাংলার নারী সমাজের অবস্থা যে কতো শোচনীয়, মর্মান্তিক এবং বেদনাবিধূর ছিলো, তা তাঁর গল্পে উঠে এসেছে। যা ভারাক্রান্ত অনুভবে পাঠকের হৃদয়ে এখনো আঘাত করে। সমাজের নতুন-পুরাতন দ্বন্দ্বই শুধু নয়, নারী-পুরুষের অসম বিকাশ জাতিকে কতোটা নির্জীব করে তুলতে পারে তা তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন।

যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে রবি ঠাকুরের সাহিত্য ছিলো সমাজের প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে কুঠারাঘাত। ১৮৯০ সালে ‘দেনা-পাওনা’ দিয়েই তার গল্পের শুভযাত্রা। পণ প্রথার আবর্তে নির্বৃত্ত পিতা আর অসহায় কন্যার যে মর্মবেদনা ফুটে ওঠে শতবর্ষ পরেও তার আবেদন আজও সচেতন অংশকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

গ্রাম বাংলার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অতি সাধারণ ঘটনা ও নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো তার গল্পের উপজীব্য হয়ে যে সম্ভার পাঠক সমাজের কাছে আসে তা যেমন অসাধারণ একইভাবে কঠিন বাস্তবের এক অসহনীয় দুর্ভোগ। সাধারণ নিম্নবিত্তের নিঃসম্বল পিতা আর পণপ্রথার যাঁতাকলে পিষ্ট কন্যার যে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট তার শেষ পরিণতি হয় আত্মহননের মধ্য দিয়ে। এসব কিছু রবীন্দ্র সাহিত্যে অন্যতম বিষয়বস্তু। তিনি ১৮৯১ সালে লেখেন ‘কঙ্কাল’। নারী নিগ্রহের এক অভিনব এবং বিচিত্র কাহিনী। এতেও আছে সমাজ ব্যবস্থার প্রাচীন অনুশাসনের মর্মস্পর্শী বিধি। সেই বাল্য-বিবাহ পরিণতিতে অকাল বৈধব্যের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় পিতৃগৃহে ফিরে আসা। গল্পের নায়িকা অনামিকা। নামহীন এই বালিকা কোন এক সময় বৈধব্যকে বরণ করলে দুর্ভাগ্যের কষাঘাতে জীবনটা বিপন্ন অবস্থায় ঠেকে। শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে ‘বিষ কন্যার’ অপবাদ দিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠায়। অলক্ষ্মীর সমস্ত বোঝা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাতে হয়। শুধু তাই নয় বালিকা হতে পরিপূর্ণ যুবতী হওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি ভেতরে শিহরণও জাগায়। বয়ঃসন্ধিকালে যা কোন উদীয়মান কিশোর-কিশোরীর এক নবচেতনার অন্য রকম অনুভব। আর সেটাই কাল হলো এই ঝলমলে তরুণীর।

তাঁর ১৮৯৩ সালে লেখা ‘শাস্তি’ গল্পটি আজও পাঠক হৃদয়ে আলোচিত হয়ে যাচ্ছে। কবির লেখনিতে আছে গল্পের প্রধান দুই পুরুষ চরিত্র দুখিরাম ও ছিদাম তাদের জমিদারির আঙিনায় কামলা খাটত। অর্থনৈতিক সঙ্কটের দুর্বিপাকে পড়া দুই ভাইয়ের নিত্য জীবন। স্ত্রীদের ঝগড়া ঝাটি, অসংযত ব্যবহার, তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ, সংহার মূর্তি সেও জীবনের এক অপরিহার্য ব্যাপার। …অগ্নিমূর্তি দুখিরাম ক্ষোভে, উত্তেজনায় দা দিয়ে স্ত্রীর মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই রাধার মৃত্যু হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় দু’ভাই বিমূঢ় ও স্তব্ধ হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে ছোট ভাই ছিদাম তার বহু যতেœ, আদরে লালিত স্ত্রী চন্দরার ওপর এই খুনের দায়ভাগ চাপিয়ে দেয়।… যাইহোক রবীন্দ্র সাহিত্যে এভাবেই সমাজের ক্ষতগুলো উঠে এসেছে গল্পের অবয়বে।

তবে বাঙালীর জীবনে প্রেম ভালবাসা, ভাললাগা, মন্দলাগা, নানা আবেগ অনুভূতি, নারী-পুরুষ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কোন বিষয় নেই যা রবীন্দ্র সৃষ্টিকর্মে খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ বাঙালীর জীবনে যা কিছু ঘটে তা নিয়েই যদি রবীন্দ্র রচনায় তালাশ করা যায় তবে তা খুঁজে পাওয়া যাবে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম না হলে সাহিত্যে, সঙ্গীতে এতো বিষয় বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যেত কি-না সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ আমাদের সামনে রবি ঠাকুরের বাইরে একমাত্র কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়া উল্লেখ করার মতো অন্য কোনো উদহারণ এখন পর্যন্ত দাঁড়ায়নি।  হ্যাঁ- রবীন্দ্র পরবর্তী সময়ে শরৎ, বঙ্কিম, আবু ইসহাক, মীর মশাররফ, হুমাউন আহমেদ, আল মাহমুদসহ আধুনিক বহু গুণী লেখক জন্মেছেন এই বঙ্গে। তবে,  নারী মুক্তি এবং নারী স্বাধীনতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে রবীন্দ্র যুগে।

রবীন্দ্রনাথ সমগ্র নারী জাতিকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে যে কতোটা জোর দিয়েছেন তাঁর রচিত ‘কালান্তর’ গ্রন্থের ‘নারী’ প্রবন্ধে খুব জোরালোভাবেই তা পাওয়া যায়। এটি প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ঠিক ক’বছর আগে ১৯৩৬ সালে। ওই সময়েই রবীন্দ্রনাথ তাঁর চার পাশটাকে দেখে উপলব্ধি করেছিলেন যে নারীর অগ্রগতির প্রশ্নে বিদ্যাবুদ্ধি হয় এমন পাঠ একান্ত আবশ্যক। আর এজন্যই তাঁর ছোটগল্পে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন যৌতুক প্রথা এবং বাল্য বিবাহের মতো অভিশাপ সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারীর বিদ্রোহী সত্তা। ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর প্রতিবাদে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ‘বোস্টমী’ গল্পে বা ‘পয়লা নম্বরের’ অনিলা নারী সত্তার মুক্তির লক্ষ্যে ঘর ছেড়েছে। ‘মানভঞ্জন’ গল্পে গিরিবালার স্বামীর প্রতি যে প্রতিশোধের চিত্র তা ওই সময়ের প্রেক্ষিতে সত্যিই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। ‘বদনাম’ গল্পের সৌদামিনী বা ‘শাস্তি’র চন্দরা যেন এক বিস্ময়। ‘স্ত্রীর পত্র’তো পাশ্চাত্যের নারীদের ছায়া। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ নারীমুক্তির প্রসঙ্গ টেনেছেন ব্যক্তিত্ব সচেতন মৃণালিনীর জবানীতে আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে। ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পের সোহানীর যে বিদ্রোহ তা রবীন্দ্র রচনার পূর্বাপর সতীত্ব-পতœীত্ব ও দাম্পত্য প্রেমের এক মাত্রিক ধারণাকে স্বয়ং তিনি ভেঙেচুরে দূরে ফেলে দেন। জীবনের শেষপ্রান্তে লেখা এ গল্প সত্যিই পাঠকমনকে অভিভূত করে। কবিতায় রবীন্দ্রনাথ নারী ভাবনায় আরও এগিয়ে। যেখানে নারী নির্যাতনের ছবি বা ব্যক্তি সত্তার প্রকাশ ‘বলাকা’ ও ‘পলাতকা’ কাব্যে পাওয়া যায়। ‘পলাতকা’ কাব্যের ‘মুক্তি’ কবিতায় নারীর কষ্ট ফুটে উঠেছে। ‘সাধারণ মেয়ে’ কবিতায় শরৎ বাবুকে মালতির অনুরোধ নারীকে জিতিয়ে দেয়ার আকুতি খুঁজে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই মেয়েদের ভর্তি এবং নারী শিক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ তার গল্পের মাধ্যমে স্ত্রীকে চিঠি লিখতেও শিখিয়েছিলেন। আজ থেকে প্রায় শত বর্ষ বা তারও আগে সৃজনশীল দুনিয়ার এই মহান কারিগর তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রকে যে সম্মান এবং সুমহান মর্যাদার আসনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন তা সত্যিই এই সময়ে এসে ভাবতেও অবাক লাগে। কী ব্যক্তি জীবনে কী সৃষ্টিকর্মে দুই জায়গাতেই নারী মুক্তির প্রয়াস চালিয়ে গেছেন সমানতালে। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে নারীরা বরাবরই আধুনিক, রুচিশীল ও সৌন্দর্যবোধে পরিপূর্ণ আদর্শ চরিত্র। ঊনিশ শতকে ‘নারী অধিকার’ শব্দটির সঙ্গে যখন কেউ পরিচিত নয়, তখন কবিগুরু নারীকে উপস্থাপন করেছেন স্বাধীনচেতা, ব্যক্তিত্ববান ও সাহসী হিসেবে। কখনো রক্তকরবীর সাহসী নন্দিনী, কখনো আত্মসম্মানবোধে পরিপূর্ণ শেষের কবিতার লাবণ্য, কখনো বা নষ্টনীড়ের স্বাধীনচেতা গৃহবধূ চারুলতা- রবিঠাকুরের কলমে নারী কেবল আর অবলা থাকেনি বরং হয়ে উঠেছে দিগি¦জয়ী, বিজয়ী লক্ষ্মী। তাছাড়া তার সৃষ্ট বেশিরভাগ নারীই ছিলেন শিক্ষিতা এবং সামাজিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। এ কারণে তাদের চলনবলন, পোশাক পরিচ্ছদ ও অলংকারের মাঝেও ছিল অপেক্ষাকৃত আধুনিকতা।

রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাস যখন ঋতুপর্ণা ঘোষ সিনেমায় রূপ দেন, সেখানে উপন্যাসের নারী ‘হেমনলিনী’র সাজসজ্জা, পোশাকপরিচ্ছদ মুগ্ধ করে সকল দর্শককেই।
রবীন্দ্র গল্প-উপন্যস ও কবিতায় নারী কখনো কণ্যা, কখনো যৌবতী আবার কখনো মা বেশে এসেছে। রবি সাহিত্যে ‘মা’ হিসেবে নারী আরেক অপরূপ সৃষ্টি। ‘শিশু ভোলানাথ’ এর ‘মনে পড়া’ কবিতাটি আমাদের কবির সেই অভিমানকেই মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে রবি কবি যখন চোখ ছলছল অবয়বে বলে, ‘মাকে আমার পড়ে না মনে। শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে একটা কী সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে, মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে।’ ররীন্দ্রনাথের মায়েদের মধ্যে সত্যিকারের এক মায়ের চরিত্র ‘আনন্দময়ী’। আনন্দময়ী পূজা-অর্চনা ও ধর্মীয় ছুঁৎমার্গ বিষয়ে শতভাগ গোঁড়া। কিন্তু সেই মায়ের কোলে যখন গোরা মানে গৌরমোহনের আগমন ঘটল, তখন মাতৃত্বের মমতায় তার সেই ধর্মীয় সংস্কারের সবটুকু আগল ভেঙে গেলো। আমরা পেলাম তখন শাশ্বত এক বিশ্বজননীকে, যিনি কোলে ও অন্তরের মাঝে ধারণ করতে পারেন জগতের সব সন্তানকে।

‘মালিনী’ কাব্যনাটকে রাজকন্যা মালিনীকে স্নেহের ফলগুধারায় সিক্ত করে রাজমহিষী মা বিচলিত হয়ে ওঠেন। তার বৈরাগ্য সাধনের সংকল্পে মা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের সম্মুখীন হন। তিনি মেয়েকে সজ্ঞানে ফিরিয়ে আনতে বলেন, মা গো মা, কী করি তোরে লয়ে। ওরে বাছা, এ-সব কি সাজে তোরে কভু, এই কাঁচা নবীন বয়সে? … ‘শেষের কবিতা’র যোগমায়া এক মায়াবতী মমতাময়ী মা। বাস্তবে তিনি অমিত রায় বা লাবণ্য-কারুরই মা নন। কিন্তু তার মাঝে মাতৃত্বের ফলগুধারা বয়ে চলেছিল অন্তরজুড়ে।

রবীন্দ্রনাথ তার রচনায় মা-হারাদের কথাও আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। মাতৃহীন হৈমন্তী ঋষিতুল্য বাবার কাছে বড় হলেও, মায়ের শিক্ষা ও মমতা না পাওয়ায় তার বয়স সমাজের ষোল হয়ে গেছে বটে তবে সে তার স্বভাবে পরিণত হয়ে ওঠেনি। অর্থাৎ সে ষোল স্বভাবের ষোল হয়ে ওঠেনি। আবার মাতৃপিতৃহীন অনাথ রতনকেও তিনি চিত্রিত করেছেন মা-হীনতার দুর্দশা দেখিয়ে।

অন্য মায়েদের চেয়ে বাঙালি মায়েরা একটু বেশি স্নেহময়ী। রবীন্দ্রনাথের রচনায় বর্ণিত মায়েরাও তাই। রবীন্দ্র-রচনায় মায়েরা গরিব হলেও আদর্শবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও মমতাময়ী। সবমিলিয়ে রবি সাহিত্যে নারী এক উজ্জ্বল প্রতিভু। রবির হাতের পরশে নারী হয়ে উঠুক মানুষ। সম্মানিতা, অধিকারপ্রাপ্তা। এই প্রত্যাশায়।