Type to search

মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

জাতীয়

মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স-দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে গতকাল মঙ্গলবার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ২৮ আগস্ট এ রুলের চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। সেদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কেইস ডকেটসহ (সিডি) সশরীরে হাজির হতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আদালতে মিন্নি যেদিন স্বীকারোক্তি দেন, সেদিন তার স্বীকারোক্তি প্রদানের আগে বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। এ সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে ব্যাখ্যা
তলব করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তদন্তকালে বিভিন্ন মামলার আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে, এরও সমালোচনা করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত।
হাইকোর্ট বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে এ মামলাটিতেই নয়, অহরহ দেখছি মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হচ্ছে, আসামি দোষ স্বীকার করেছে। মামলার তদন্ত পর্যায়ে তাদের এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? মিডিয়ার সামনে কতটুকু বলার আছে? পত্রপত্রিকায় দেখলাম এসপি বলল মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে। আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার আগেই যদি এসপি বলে ফেলে সে দোষ স্বীকার করেছে, তা হলে সংশ্লিষ্ট অধস্তন পুলিশের দায়িত্ব হয়ে যায় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করার। আর এসপি বলার পর তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব হয়ে যায় তা যথাযথভাবে প্রমাণ করার। এটা হলে মামলার তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। শুধু এ মামলায় নয়, প্রায় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এমনভাবে ব্রিফিং করে, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে একটি ধারণা জন্ম নেয়। সে (মিন্নি) স্বীকার করলেও তো তা বলা উচিত হয়নি।
এ সময় হাইকোর্ট আরও বলেন, প্রথমে ধরেই নিই যে, সাক্ষী হিসেবে মিন্নিকে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এভাবে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে গেলে পরিষ্কার চিন্তা করার সুযোগ থাকে? তাকে তো গ্রেপ্তার করেননি! এগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। মিডিয়া পেলে সবাই কথা বলে। এগুলো মামলাকে প্রভাবিত করে। আদালত বলেন, ২০১৫-১৬ সালের দিকে গাজীপুরে গ্রেপ্তার জঙ্গি ও উদ্ধার হওয়া বোমাসহ প্রেস ব্রিফিং করতে গিয়ে তা বিস্ফোরণ হয়। তখন আমরা একটা রায় দিয়ে এভাবে আসামিদের মিডিয়ার সামনে হাজির করে প্রেস ব্রিফিং বন্ধ করতে বলেছিলাম। কিন্তু এখনো দেখছি, আসামিদের জ্যাকেট পরিয়ে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হচ্ছে। জানি না পৃথিবীর কোথাও এভাবে প্রেস ব্রিফিং হয় কিনা। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে একটা নীতিমালা থাকা দরকার।
এর আগে শুনানিতে মিন্নির আইনজীবী জেডআই খান পান্না আদালতে বলেন, ১৬ জুলাই মিন্নিকে পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়। সেখানে সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই দিন রাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরের দিন তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ১৯ জুলাই মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে ১৮ জুলাই বরগুনার এসপি সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় মিন্নির আইনজীবী বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, এসপি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং মিন্নির কথা থেকে পাওয়া সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে এ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকা- ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের মিটিং করেছেন হত্যাকারীদের সঙ্গে। হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথন হয়েছে।
এর পর রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, এ মামলায় রিফাত ফরাজী, টিকটক হৃদয়সহ চার আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার আগে ও পরের বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে দেখা যায় এ ঘটনার মূল নকশাকারী ও ষড়যন্ত্রকারী হচ্ছেন মিন্নি। এটা একটা স্পর্শকাতর মামলা। নির্মমভাবে রিফাত শরীফকে হত্যা করা হয়েছে।
এর পর মিন্নির পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিনউদ্দিন আদালতে বলেন, মিন্নিসহ ৫ জন এ মামলায় দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাই এ পর্যায়ে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। মিন্নি একজন ১৯ বছরের নারী। যে কোনো শর্তে জামিন চাচ্ছি। আদালত যে শর্ত দেবেন তাই মেনে নেওয়া হবে। জামিন দিলে মিন্নি পালাবে না। সে তার পিতার জিম্মায় থাকবে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, আগামী ২২ আগস্ট এ মামলায় বিচারিক আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। সেখানে সব উঠে আসবে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেন।
এর আগে গত ৮ আগস্ট হাইকোর্টের একটি অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ মিন্নিকে জামিন দেননি। সেদিন মিন্নির আইনজীবীরা জামিন আবেদনটি ফেরত নেন। এর পর গত রবিবার হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি দাখিল করেন। গত সোমবার মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। সেদিন অল্প শুনানি করে হাইকোর্ট বলেন, এসপির সংবাদ সম্মেলন ও মিন্নির গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসহ সম্পূরক আবেদন করতে। সে অনুযায়ী গতকাল সম্পূরক আবেদন দাখিলের পর শুনানি হয়।