Type to search

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

অন্যান্য

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

অনলাইন ডেক্স:

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে স্কুলের পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২১ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের সান্দিয়ারা বাজার ও বশীগ্রাম ব্রিজ এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত এবং বেশকিছু ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর থেকে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর গ্রুপের সাথে পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন মিঞা গ্রুপের বিরোধ চলে আসছে। যে কোন ঘটনায় এলাকায় দুটি পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

গত রবিবার পান্টির ডাঁসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুমন মিঞা গ্রুপ প্যানেল জয় লাভ করে। এ নিয়ে উত্তেজনা চলছিল এলাকায়। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনে বিজয়ী গোলাম নবী সোমবার সকালে সান্দিয়ারা বাজারে প্রতিপক্ষের ডাঁসা এলাকার নেতৃত্বদানকারী ব্যবসায়ী মামুনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম দুলালকে কটূক্তি করে। এ সময় মামুনের সমর্থকরা গোলাম নবীকে পিটিয়ে আহত করে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর পর সুমন গ্রুপের এক সমর্থক বশীগ্রাম ডাঁসা মসজিদে ইজ্জতের লড়াই দাবি করে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে লড়াই-এ অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সান্দিয়ারা বাজার ও বশীগ্রাম ব্রিজ এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাম দা, ঢাল, সুরকি, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আহতদের কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল থেকে তিন জনকে আটক করেছে।

সংঘর্ষের বিষয়ে পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন বলেন, রবিবার স্কুল ভোটে তাঁর প্যানেল জয় লাভ করে। সোমবার সকালে বিজয়ী গোলাম নবী সান্দিয়ারা বাজারে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মারপিট করে আহত করে। পরে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে তাঁর পক্ষের গোলাম নবী, হৃদয়, হাসান, মহব্বত, টিপুসহ ১০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের জৈষ্ঠ্য সহ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর বলেন, স্কুল নির্বাচন ও পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষ আওয়ামী লীগের লোকজন বলে তিনি দাবি করেন।

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, হঠাৎ বশীগ্রাম ডাঁসা জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, ‘আর বসে থাকবেন না। সম্মানিত গ্রামবাসী। আর কেউ বসে থাকবেন না। বশীগ্রাসের ইজ্জত গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের উপর সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে।’ এই ঘোষণা শুনে অনেকে দ্রুত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের সমর্থক আহত হয়েছেন। তবে আহতের সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। এ ঘটনায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাববাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনও কোনো পক্ষ এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন