Type to search

ভবদহের মৃত্যুতে বিপন্ন ৫২টি বিলের কৃষি

অভয়নগর

ভবদহের মৃত্যুতে বিপন্ন ৫২টি বিলের কৃষি

 

প্রিয়ব্রত ধর,ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: চিনের দুঃখ বলা হত হোহাংহো নদীকে,আজ ভবদহকে বলা হয় যশোরের দুঃখ।

মনিরামপুরে ৩ হাজার হেক্টর,অভয়নগরে ৪ হাজার ৮৩৪. কেশবপুরে ৩ হাজার হেক্টর জমি এখনো বোরো চাষের অনুপযোগী প্রায়, ফলে হতাশায় কৃষক।

যশোর জেলার অভয়নগর,মনিরামপুর,কেশবপুর উপজেলার ও খুলনা জেলার ডুমরিয়া উপজেলার বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে গঠিত এ ভবদহ অঞ্চল। ভবদহ মূলত একটি স্থানের নাম,আর হরি নদীর উপর বৃটিশদের নির্মীত স্লুইচ গেট। এই স্লুইচ গেট দিয়ে পার হতো ৫২টি বিলের পানি। ষাটের দশকে এখানে এ স্লুইচ গেট স্থাপন করা হয়েছিল। কৃষি আর কৃষক বাঁচাতে,তখন কার সময় জোয়ারের পানি যাতে ভবদহের ৫২টি বিলে প্রবেশ করতে না পারে তার একটা ব্যবস্থা ছিল মাত্র।
আর ৫২টি বিলের পানি নিষ্কাশণ প্রয়োজন হলে তখন পানি বের করে দেওয়া হত এ স্লুইচ গেট ব্যবহার করে । পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ৫২ টি বিলে কৃষক ফলাতো সোনার ফল,কী ফসল ফলতো না এ সকল বীলে, ধান,পাট,তরমুজ,বাদাম,শরিষা,তিল,ভুট্টা তামাক ইত্যাদি।
নগত টাকার অভাব থাকলেও অন্তাত ঘরের খাবার নিয়ে কাউকে চিন্তা করতে হতো না। সমায়ের ব্যবধানে সেই ভবদহের কারণে এ ৫২টি বিল পরিণত হয়েছে জলাবদ্ধতায়। কৃষক আর কৃষিতে নামছে বিপর্যয়। দীর্ঘ ৬ বছর ভবদহ স্লুইচ গেট দিয়ে জোয়ারাধার বন্দ থাকায় নদীতে জমছে পলি,তৈরি হয়েছে ভরাট প্রকৃয়া।
প্রতি নিয়ত উজান থেকে পলি আসায় আর সে পলি পুনরায় সমুদ্রে ফিরতে না পেরে বা কোন বিলে প্রবেশ না করতে পারায় নদীতে পলি জমে হয়েছে নদী ভরাট।

যার প্রভাব আজ হাজার হাজার কৃষকের উপর,সাম্প্রতিক সরজমিনে ভবদহ অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় নদীতে বিন্দু মাত্র জোয়ার ধারা নাই,ফলে ৫২টি বিলের পানি নিষ্কাশনের ও কোন সম্ভাবনা নাই,ফলে ভবদহের মৃত্যুতে বিপর্যস্ত ৫২টি বিল ও কৃষি ব্যবস্থা।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায় ভবদহ অঞ্চলের প্রায় ৬০ হাজার লোক পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষি কাজ হয়ে থাকে কিন্তু দীর্য দিন বিল গুলো পানির নিচে থাকায় চরম বিপদে এ অঞ্চলের কৃষক।
মনিরামপুর উপজেলার বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তর বীল বোকড় এখনো পুরোটাই পানিতে পরিপূর্ণ। অভয়নগরের চলশিয়া বীল পানির নিচে,সুন্দলী ইউনিয়নেন জিক্কের বীলে এখনো কুলে কুলে পানি।
সরজমিনে দেখাগেল ৫২ টি বিলেই বর্তমানে পানিতে পরিপূর্ণ। কোথাও বিন্দু মাত্র ধানের উৎপাদন নাই,মনিরামপুরের পাজিয়া,শুভলকাঠি,ও হরিদাসকাঠি ইউনিয়নে বেশি পরিমাণে বোর চাষ হয় কিন্তু সেখানেও এবার নাম মাত্র ধানের চাষ হচ্ছে।
যে সকল স্থানে ধান রোপনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা নিজ অর্থায়নে পানি সেচের মাধ্যমে করানো হয়েছে। দেখা জাচ্ছে পানি সেচের জন্যই ১৫০০- ২০০০ টাকা প্রদান করতে হচ্ছে। এ মত অবস্থাতে কৃষিতে কোন অবস্থাতে লাভের মুখ দেখার সুযোগ থাকছে না কৃষকের।
২০১৬ সাল থেকে এই ৫২ টি বিলে কোন প্রকার ফসল ফলানো সম্ভাব হয় না।

এ বিষয়ে ভবদহ পানি নিষ্কাশণ সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন সরকার দলীয় লোকই আমাদের এ সমস্যার কারণ । ভবদহের সমস্যা সমাধানে প্রতি বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয় তার কোন সঠিক কাজ হয় না।নদী কেটে খাল তৈরি করে। ভবদহে পুনরায় টি আর এম চালু না করতে পারলে স্থায়ি জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। অচিরেই আমাদের বসত বাড়ি ত্যাগ করতে হবে।
ডহর মশিয়াহাটি গ্রামের হরিনাথ বিশ্বাস বলেন গত ৫ বছর বীল বোকড়ে কোন প্রকার ফসল ফলাতে পারি না,যে স্থানে মাছের চাষ করতাম তাও পানিতে তলিয়ে যায়,প্রতি বছরই লস করতে হয়।
পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সুন্দলী ইউনিয়ন সদস্য সচিব কানু বিশ্বাস বলেন কৃষি নষ্ট করে জলাভুমি তৈরি করার েকক গভীর সড়যন্ত্র চলছে।