Type to search

বাঘারপাড়ায় নৌকা সমর্থকদের বেধড়ক মার

যশোর

বাঘারপাড়ায় নৌকা সমর্থকদের বেধড়ক মার

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স

বাঘারপাড়ায় নৌকা সমর্থকদের বেধড়ক পিটিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলু পাটোয়ারীর কর্মীরা। মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে উপজেলার ইন্দ্রা বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
লাঠিসোটার আঘাতে কমপক্ষে ১২-১৩ জন আহত হন। এদের মধ্যে ছয়জনকে বাঘারপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরে সেখান থেকে দুইজনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক।
এই ঘটনায় বাঘারপাড়ায় তীব্র উত্তেজনা চলছে। নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বাঘারপাড়া বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তাদের অনেকের কাছে অস্ত্র দেখেছেন স্থানীয়রা। ঘটনার ব্যাপারে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আইনের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। মধ্যরাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী থানায় অবস্থান করছিলেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মারপিটের ঘটনা ঘটলো। আগামী ১০ ডিসেম্বর এই পদে ভোটগ্রহণ করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজল হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে পদটি শূন্য হয়।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন নিহত চেয়ারম্যান কাজলের স্ত্রী ভিক্টোরিয়া পারভিন সাথী। আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারী তাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলু পাটোয়ারী বিকেলে উপজেলার নারিকেলবাড়িয়ায় যান নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলতে। রাতে তিনি বাঘারপাড়া বাজারের দিকে ফিরছিলেন। রাত সোয়া নয়টার দিকে ইন্দ্রা বাজারে তিনি গাড়ি থামান কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলার উদ্দেশে। ওই সময় সেখানে অবস্থানরত তরিকুল নামে এক নৌকা সমর্থকের সঙ্গে তার বচসা হয়। খবর পেয়ে দিলু পাটোয়ারীর সমর্থকরা সেখানে ছুটে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়।
সংঘাতে অন্তত ১২-১৩ জন আহত হন। তাদের মধ্যে জহুরুল বিশ্বাসের ছেলে আবদুর রব (৪৫), শরিফুল ইসলাম (৪০) ও ফেরদৌস (৩০), মৃত খয়বার মোল্লার ছেলে রবিউল ইসলাম (৫০), মৃত মাহতাব মোল্লার ছেলে শুকুর আলী (৩৫) এবং মোকাম মোল্লার ছেলে বাহারুল ইসলামকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে আবদুর রব ও রবিউল ইসলামকে পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার নাসিম রেজা জানান, ওই দুই ব্যক্তির মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাত লেগেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের যশোরে রেফার করা হয়েছে।
সংঘাতের ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলু পাটোয়ারী বলেন, তিনি ইন্দ্রা বাজারে এলে নৌকার সমর্থকরা তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। খবর পেয়ে তার কর্মী-সমর্থকরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়।
তবে নৌকার প্রার্থী ভিক্টোরিয়া পারভিন সাথীর দেবর ও জামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম টুটুল দাবি করেন, দিলু পাটোয়ারী এবং যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রণজিত রায়ের ছেলে রাজিব রায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের আশ্রয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা আগেই ইন্দ্রা বাজারে লাঠিসোটা মজুদ করে রেখেছিল।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাজিব রায় অবশ্য তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। মধ্যরাতে তিনি সুবর্ণভূমিকে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে ঢাকায় ন্যাম ভবনে অবস্থান করছি। শুনেছি বাঘারপাড়ায় মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত জানি না।
‘আমি ঢাকায় থেকে কীভাবে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হলাম?’- পাল্টা প্রশ্ন করেন রাজিব।
এদিকে, মারপিটের ঘটনার পর বাঘাপাড়ায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নৌকার প্রার্থী সাথীর কয়েকশ’ কর্মী-সমর্থক বাঘারপাড়া বাজারে জড়ো হন। তাদের অনেকের হাতে অস্ত্র দেখেছেন স্থানীয়রা।
রাত ১২টার কিছু সময় আগে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা থানায় জড়ো হন। সেখানে তখন ঘটনার ব্যাপারে এজাহার লেখা হচ্ছিল। মামলায় এমপির ছেলে রাজিবের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে রাজিবও নৌকা প্রতীক চেয়েছিলেন।
বাঘারপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ইন্দ্রা বাজারে যায়। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সূত্র,সুবর্ণভূমি