Type to search

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি ঘর নির্মাণ

জাতীয়

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি ঘর নির্মাণ

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স : প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্প (২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে) ‘জমি আছে ঘর নেই’ তাদের নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ উপ-খাতের আওতায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নে ৫৪টি ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুনীর্তি হয়েছে। এই দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। অথচ এখনো কোনো স্থানে ঘর নির্মাণ শেষ করা হয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারছেন না অনেকেই। এদিকে তালিকায় নাম থাকলেও অনেককে ঘর না দিয়ে পুরো টাকাটাই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নের মাকোরকোল গ্রামের গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।
প্রতিটি ঘরে ১৭টি পিলাল, চারটি জানালা, চালায় ০.৩৬ মিমি এবং বেড়ায় ০.৩৬ মিমি টিন দেওয়ার কথা থাকলেও ১৪টি পিলার, দুইটি জানালা, টিনের চাল ০.১৯ মিমি এবং টিনের বেড়ায় ০.১৩ মিমি দেওয়া হয়েছে।

মাকোরকোল গ্রামের নিরঞ্জন ঘোষ স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সরকারি জমির উপর নির্মাণ করা ছোট একটি টিনের ঘরেই কোনোভাবে বসবাস করছেন। যমুনার ভাঙনে তার বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ায় একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। তার সবকিছু বিবেচনা করে স্থানীয় এমপির মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এক লাখ টাকা মূল্যের একটি ঘর পান। কিন্তু তাকে ঘর দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ঘরটি থাকার উপযোগী না করায় এখন পর্যন্ত এই অসহায় পরিবারটি ঘরে বসবাস করতে পারছেন না।

তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বারবার ঘরটির কাজ শেষ করে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও কোনো লাভ হয়নি।

নিরঞ্জন ঘোষের স্ত্রী দীপা ঘোষ জানান, দেড় বছর আগে ঘরটি নির্মাণ করা হলেও আজ পর্যন্ত ঘরের মেঝে ও ডোয়া পাকা এবং ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়নি।

একই গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী অফেলা বেগম। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পেয়েছেন তালিকা অনুযায়ী। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তাকে আজ পর্যন্ত কোনো ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

অফেলা বেগম জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন ঘর পাওয়ার জন্য। পরে তিনি ১০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হন। কিন্তু আজ পর্যন্তও তিনি ঘর না পেয়ে অন্যের বাড়িতে থাকছেন।

একই গ্রামের আব্দুল হামিদ। তিনিও ঘর পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন। প্রকল্প শুরু হওয়ার পরপরই তিনি মারা যান। এ কারণে তার পরিবর্তে স্ত্রী ফতে বেগমকে ঘর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দীর্ঘ দেড় বছরেও ঘর না পেয়ে অন্যের বাড়িতে থাকছেন ফতে বেগম।

ধুলচর গ্রামের মাহালমও ঘর পেয়েছেন। তার ঘর পুরোপুরি থাকার উপযোগী করে দেওয়া হয়েছে দেড় বছর আগেই। কিন্তু দেওয়া হয়নি কোনো ল্যাট্রিন।

মাহালম জানান, যে ঘর দেওয়া হয়েছে এটি নির্মাণ করতে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পের ঘরের সঙ্গে কোনো প্রকার ল্যাট্রিন ধরা ছিল না। এ কারণে ল্যাট্রিন দেওয়া হয়নি। আর তার ইউনিয়নের ৫৪টি ঘরের মধ্যে প্রায় বেশিরভাগই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন নতুন করে কোনো ঘর মেরামত বা বাকি কাজগুলো করার সুযোগ নেই। কারণ সব ঘরগুলো প্রকল্প কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র,  বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম