Type to search

জুময়া’বারের নিবন্ধ দুরুদ পাঠে প্রশান্তি

ধর্ম

জুময়া’বারের নিবন্ধ দুরুদ পাঠে প্রশান্তি

 বিলাল মাহিনী  : ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ায় মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। পৃথিবীতে মানুষকে প্রেরণ করা হয়েছে স্রষ্টার বিধানানুযায়ী সে কতটুকু নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছে সেজন্যে। মানুষ হিসেবে আমরা জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে গুনাহ তথা পাপকর্ম করে চলেছি। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে সবটুকু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছি। তাই নিজ নিজ আমল দিয়ে যখন আমরা নিষ্কৃতি পাব না, তখন দান-সদকা, নেক সন্তান, উপকারি ইলম (জ্ঞান) ও বিশ্বনবীর স. প্রতি প্রেরিত সালাম ও দুরুদ আমাদের ক্রান্তিকালে সফলতার চাবি হিসেবে পরিগণিত হবে, ইন-শা-আল্লাহ। আসুন জেনে নিই, নবী মুহাম্মদ স. এর প্রতি প্রেরিত দোয়া ও দুরুদ কী এবং এর মমার্থ-ই বা কী। দুরুদ অর্থ দোয়া ও শান্তি কামনা। মহান প্রভুর দরবারে প্রিয় নবীজি স. এর জন্য রহমতের দোয়া। দুরুদ বিশ্ব মুমিনের পক্ষ থেকে রহমাতুল্লিল আলামিনের প্রতি ‘হাদিয়া’। দুরুদ প্রিয় হাবিবের প্রতি আমাদের নিখাদ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, হৃদয়-গহিনের একান্ত প্রেম নিবেদন। এই প্রেম নিবেদন মহান আল্লাহই আমাদের শিখিয়েছেন। নবীজি স. এর ভালোবাসায় মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বয়ং তার প্রিয় হাবিবের প্রতি দুরুদ পাঠান। দুরুদ পাঠ করেন নূরের ফেরেশতারাও। মোমিনদেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে সেই মহামানবের প্রতি দুরুদ পাঠ করে ধন্য হতে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন (অর্থাৎ, আল্লাহ রহমত প্রেরণ করেন, ফেরেশতারা রহমত নাজিলের জন্য দরখাস্ত পেশ করেন), হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার প্রতি দুরুদ পাঠ করো (রহমতের দোয়া করো) এবং সশ্রদ্ধচিত্তে সালাম নিবেদন করো (শান্তির দোয়া করো)। (সুরা আহযাব : ৫৬)। আমাদের দুরুদ পাঠ ছাড়াও আল্লাহর হাবিব স. সর্বক্ষণই মহান আল্লাহর অবারিত রহমত-বরকত এবং অনাবিল শান্তির বারিধারায় সিক্ত হন। আমরা দুরুদ পড়ি নিজেরা ধন্য হতে। প্রিয় হাবিবের ভালোবাসা পেতে। মহান আল্লাহর রহমতের সুশীতল ছায়াতলে জায়গা করে নিতে। আল্লাহর রাসুল স. এর প্রতি কেউ একবার দুরুদ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। আবু হুরাইরা র. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন।’ (সহীহ মুসলিম : ৪০৮)। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, আনাস র. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরুদ শরিফ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি ১০টি রহমত বর্ষণ করেন, ১০টি পাপ মোচন করেন এবং ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। (সুনানু নাসায়ি : ১/১৪৫, মুসনাদে আহমদ : ১/১০২)। মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় রয়েছে সাহাবি আবু তালহা র. বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ স. (আমাদের কাছে) এলেন, তার চেহারায় আনন্দের দ্যুতি ছড়াচ্ছিল। তিনি বললেন, আমার কাছে একজন ফেরেশতা (জিবরাইল) আগমন করে বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনার প্রভু আপনাকে বলেছেন, আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে, আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আপনার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে, আমি তার প্রতি ১০ বার রহমত প্রেরণ করবেন এবং যে আপনার প্রতি একবার সালাম পেশ করবে, তিনি তার ওপর ১০ বার শান্তি বর্ষণ করব? (মুসনাদে আহমদ : ১৬৩৬১)। মুসতাদরাকে হাকেমে রয়েছে, এ কথা শুনে নবীজি (সা.) আনন্দে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। (মিরকাত : ৭৪৬/২)। রাসুলুল্লাহ স. এর প্রতি বেশি বেশি দুরুদের হাদিয়া প্রেরণের মাধ্যমে প্রিয় নবীজির সঙ্গে ভালোবাসার অদৃশ্য সেতুবন্ধন দৃঢ় থেকে সুদৃঢ় হয়। এ সেতুবন্ধনই পরকালে দরুদ পাঠকারীকে পৌঁছে দেবে রাসুলুল্লাহ স. এর একান্ত সান্নিধ্যে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার কাছে অতি উত্তম হবে ওই ব্যক্তি, যে আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে। (তিরমিজি : ৪৮৪)। মোল্লা আলী কারি রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, যে ব্যক্তি রাসুল স. এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে, সে কেয়ামত দিবসে আল্লাহর রাসুলের সর্বাধিক নৈকট্য ও সান্নিধ্যপ্রাপ্ত হবে এবং শাফায়াত লাভে ধন্য হবে। (মিরকাত : ৭৪৩/২)। মহান আল্লাহর কুদরতি ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুমিনের আবেগ-ভালোবাসা মিশ্রিত দরুদের হাদিয়া পৌঁছে যায় প্রিয় নবীজি স. এর রওজা মুবারকে। ফেরেশতারা আমাদের দুরুদগুলো পৌঁছে দেন অতি যতেœর সঙ্গে। রাসুলুল্লাহ স. এর ইন্তেকালের পর তার দরবারে পাঠানোর মতো এটাই অভাগা উম্মতদের একমাত্র সম্বল। আবু হুরাইরা র. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স. বলেছেন, তোমরা আমার প্রতি দরুদ পাঠ করো, তোমরা যেখানেই থাকো তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়। (আবু দাউদ : ২০৪২)। বিশ্বনবী স. আরও বলেছেন, জমিনে আল্লাহর একদল বিচরণশীল ফেরেশতা রয়েছে, যারা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছিয়ে দেয় (নাসায়ি ও দারেমি)। তিনি আরও বলেন, আমার প্রতি কেউ দরুদ পাঠ করলে আমি তার উত্তর দিই। (আবু দাউদ, বায়হাকি)। হজরত আবু হুরায়রা র. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ স. বলেন, কেউ আমার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দিলে আমি তা শুনতে পাই। আর দূর থেকে সালাম দিলে আমাকে তা পৌঁছানো হয়। (বায়হাকি)। প্রিয় নবীজি স. এর পাক দরবারে দুরুদের হাদিয়া পৌঁছাতে পারা এ উম্মতের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। এ মহান নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা প্রত্যেক মুমিনের একান্ত কর্তব্য। তাই আসুন, সবুজ বাংলার প্রান্ত হতে প্রিয় হাবিবের তরে লক্ষ-কোটি দরুদ ও সালামের হাদিয়া পেশ করি। আমাদের হৃদয় জগতের তপ্ত ভাবাবেগ, পরম অনুরাগ আর নিখাদ ভালোবাসার বার্তাটি পৌঁছে দিই প্রিয় নবীজির পবিত্র রওজায়। কাল কঠিন কিয়ামতে যখন আমরা পরিত্রাণের জন্য হাহাকার করতে থাকবো, তখন এই আবেগভরা দুরুদ ও নবীর স. এর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা যেনো নাজাতের উসিলা (মাধ্যম) হয়। আল্লাহুম্মা আমিন।