Type to search

জমির খাজনা দিতে আসলেই তার প্রশ্ন কত টাকা এনেছেন?

চৌগাছা

জমির খাজনা দিতে আসলেই তার প্রশ্ন কত টাকা এনেছেন?

চৌগাছা প্রতিনিধি:
যশোরের চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে জমির খাজনা দিতে আসা বা কাজে নিতে আসা ব্যক্তিদের নানাভাবে হয়রানী এবং অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৪মে) ইউনিয়নের বাঘারদাড়ী গ্রামের সোহরাব হোসেন শ্রাবন এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, তার বিরুদ্ধে এরকম আরও অভিযোগ রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযোগ কারীর মুখোমুখি করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে।
লিখিত অভিযোগে সোহরাব হোসেন বলেন, ‘‘আমি পাশর্^বর্তী আন্দারকোটা ইঞ্জু মিয়ার ছেলে মফিজুর রহমানের কাছ থেকে আন্দারকোটা মৌজার ৩০৩ নম্বর খতিয়ানের ১৪৯৫ দাগ এবং ৬৪১ খতিয়ানের ১৫৫২ দাগের কিছু জমি ক্রয় করতে ইচ্ছা পোষণ করি। ওই জমির খাজনা পরিশোধ না থাকায় তিনি স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে খাজনা পরিশোধের জন্য যোগাযোগ করেন। গত প্রায় তিনমাস ধরে বৃদ্ধ (প্রায় ৭৫ বছর বয়স) মফিজুর রহমান (মৃত ইঞ্জু মিয়ার ছেলে ও জমির ওয়ারেশ) খাজনা পরিশোধের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেয়ে চেষ্টা করেও পরিশোধে সফল হননি। এরপর আমি নিজে গত রমজান মাসে একবার সহ মোট তিনবার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার নিকট যায়। তিনি আমাকে বলেন দুটি দাখিলার জন্য ৯ হাজার টাকা দিতে হবে। একপর্যায়ে গত রোববার (২২মে) বিকাল তিনটার দিকে আমি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে তিনি জানতে চান কত টাকা এনেছেন। আমি বলি কত দিতে হবে। তিনি বলেন, আগেই তো বলে দিয়েছি। আমার কি মনে থাকে না? ৯ হাজার টাকা বলে দিয়েছিলাম। একপর্যায়ে আমি পাঁচ হাজার টাকা আদায় করে তিনি দুটি দাখিলা প্রদান করেন। ৫ হাজার টাকা নিলেও তিনি আমাকে একটি দাখিলার ৬৬৬ টাকা এবং অন্য দাখিলার ১৮২ টাকার অনলাইন দাখিলা সনদ প্রদান করেন। আমি জাহাঙ্গীর আলামের এহেন অপকর্মের বিচারসহ আমার অতিরিক্ত নেয়া টাকা ফেরৎ পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’
জানতে চাইলে সোহরাব হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই বৃদ্ধ এবং আমি প্রায় তিনমাস ধরে তাঁর পিছনে ঘুরছি। প্রতিদিন ভ্যানে চড়ে বৃদ্ধ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান, আর নায়েব তাঁর সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। পরে আমি গেলে তিনি বলেন খতিয়ানের সব জমির খাজনা পরিশোধ করতে হবে। আমার কাছে তিনি ৯ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি দিতে না চাওয়ায় তিনি ঘুরাতে থাকেন। পরে গত রোববার পাঁচ হাজার টাকা দিলে তিনি বলেন এ নিয়ে আবার উপরে কোথাও যাবেন নাতো। আমি যাবো না বলার পর তিনি আমাকে ৮৪৮ টাকার দুটি অনলাইন দাখিলা প্রদান করেন। সোহরাব হোসেন আরও বলেন, একই সময়ে অন্য এক ব্যক্তির নিকট থেকে এক/দেড় হাজার টাকার খাজনা দেয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।
বাঘারদাড়ী গ্রামের কৃষক অহেদ আলী বলেন, এই নায়েব (ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) টাকা ছাড়া কিছু চেনেন না। তাঁর কাছে জমির খাজনা দিতে গেলেই বলেন ‘কত টাকা এনেছেন’। এ কারনে একান্ত বাধ্য না হলে জমির মালিকরা খাজনা দিতে চান না।
ইউনিয়নের অন্য একটি গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ওনার কাছে আমি এ বছর তিন দিন গিয়ে জানতে চেয়েছি শতাংশ প্রতি খাজনা কত। উনার কাছ থেকে উত্তর আমি পায়নি।
ইউনিয়নের স্বরুপদাহ গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাশের স্বরুপদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাহিদুজ্জামান সবুজ বলেন টাকা ছাড়া তিনি কোন কাজ করেন না।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত চৌগাছা পৌরসভার তারনিবাস গ্রামের বাসিন্দা ও তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হাসিবুল ইসলাম বলেন, এরআগে যিনি ছিলেন, তিনি খুব ভালো লোক ছিলেন। তবে জাহাঙ্গীর আলমের নামে অনেক বদনাম।
স্বরুপদাহ গ্রামের সোহেল রানা বলেন, শুধু টাকা আর টাকা ছাড়া ইনি কিছুই চেনেন না।
ইউনিয়নের জিওলগাড়ি-বেলেমাঠের বাসিন্দা এবং ইতালি প্রবাসী বিশ^াস ফারুক হোসেন লাল্টু বলেন, তিনি টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না। চরম দুর্নীতিগ্রস্থ এই জাহাঙ্গীরকে স্বরুপদাহ থেকে দ্রæত অপসারণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযোগকারীকে ডেকে মুখোমুখি করে অভিযোগ প্রমানিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই কর্মচারীদেরকে দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে পাঠান।
তবে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম অনেক্ষণ চুপ থেকে বলেন, এমন ঘটনা আমার স্মরণে নেই। একইদিন অন্য একজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেয়ার কথা বলা হলে তিনি বলেন ‘মাশাআল্লাহ’। এক পর্যায়ে তিনি জানতে চান আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক? ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগের কথা বলা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। ইউএনও আপনাকে ডেকে পাঠাননি? বা আপনার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাননি? প্রশ্নে তিনি বলেন না আজকে ইউএনও আমাকে ডাকেননি বা কিছু জানতেও চাননি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *