Type to search

ইফতার গ্রহণের ফজিলত

ধর্ম

ইফতার গ্রহণের ফজিলত

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স : মুহাম্মদ মিজানুর রহমান: ইফতার একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ-উপবাস ভঙ্গ। একজন রোজাদার সারাদিন সিয়াম পালন করার পর সূর্যাস্তের সাথে সাথে সুন্নত তরিকা অনুযায়ী যে খাবার গ্রহণ করে তা-ই ইফতার। আর আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি রোজা থেকে মুক্ত হয়। আল্লাহর প্রতিটি হুকুম পালনই ইবাদত। তাই রোজা রাখা যেমন ইবাদত, ইফতার করাও তেমনি ইবাদত।

ইফতারি সামনে নিয়ে বসা : রোজা একটি ধৈর্য ও সংযমের কঠিন পরীক্ষা। তাই ইফতারের আগে কিছু সময়ের জন্য ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা একটি সুন্নতি আমল। কারণ এই সময়ে আল্লাহ তায়ালা তার ফেরেশতাদের ডেকে ডেকে বলেন- ওহে ফেরেশতারা! দেখে যাও, আমার বান্দারা খাবার সামনে বসে আছে। পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আমার ভয়ে তা গ্রহণ করছে না। আল্লাহ বান্দার এহেন আচরণে খুশি হয়ে যান। তাই ইফতার গ্রহণ করা যেমন সুন্নত তেমনি কিছু সময় ইফতারি সামনে নিয়ে বসাও সুন্নত। এই সময় নিজের গুনাহ মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে হবে। কারণ এই সময়ের দোয়া কবুলের ব্যাপারে রাসূল সা: হাদিস শরিফে উল্লেখ করেছেন।

দোয়া কবুলের সময় : ইফতারির আগে ইফতার সামনে নিয়ে রোজাদার যখন দোয়া করে আল্লাহ তায়ালা সে দোয়া কবুল না করে পারেন না। কারণ বান্দা একমাত্র তাঁর আনুগত্যের কারণেই তাঁরই সার্বভৌমত্বের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে। তাই সারাদিন সে রোজা রেখেছে। যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে দূরে থেকেছে। নিষিদ্ধ কাজগুলো করেনি। কারণ সে রোজাদার। তাঁকে আল্লাহর সামনে অনুগত বান্দা হিসেবে পেশ করতে হবে। পেটে ক্ষুধা তবুও ধৈর্য নিয়ে বসে আছে। আল্লাহর নির্দেশিত হুকুমের অপেক্ষায়। এমন বান্দা যদি আল্লাহর কাছে দু-হাত তুলে প্রার্থনা করে আল্লাহ কি সেই বান্দাকে ফিরিয়ে দিতে পারেন? সুতরাং বান্দাকে দোয়া চাইতে হবে আল্লাহর শেখানো পদ্ধতিতে। আশা করা যায় এমন দোয়া বিফলে যাবে না। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল না হয়ে পারে না। এক. ন্যায়পরায়ন শাসকের দোয়া দুই. ইফতারের আগ মুহূর্তে রোজাদারের দোয়া তিন. মাজলুমের দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

রাসূল সা: আরো বলেছেন, ইফতারের সময় আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। সুতরাং এই ফজিলত হাসিলের জন্য সবাইকে এই পবিত্র রমজান মাসে এ সুন্নতটির উপর আমল করা আবশ্যক।

সময়মতো ইফতার করা : ইফতারের সময় হলে কোনো প্রকার বিলম্ব না করে সময়মতো ইফতার করা উত্তম। হজরত সাহল ইবনে সা’দ রা: থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন,‘মানুষ ততদিন কল্যাণ লাভ করতে থাকবে যতদিন তারা ঠিক সময়মতো ইফতার করবে।’ (বুখারি)। ইফতারের সময় হলে অবিলম্বে ইফতার করে যথাসময়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে হবে। কারণ হজরত আবু আতিয়্যাহ রা: থেকে বর্ণিত মুসলিম শরিফের এক হাদিসে মহানবি সা: এরূপ করেছেন বলে হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে।

সুন্নত পদ্ধতিতে ইফতার : প্রথমে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। এরপর প্রয়োজনীয় অন্যকিছু গ্রহণ করতে হবে। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূল সা: এর ইফতার করার পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: নামাজের আজে সবসময় তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি কখনো তাজা খেজুর না পাওয়া যেত তাহলে তিনি শুকনা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর না মিলত তবে কয়েক ঢোঁক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ)। তাই সবসময় সুন্নতি তরিকা অনুযায়ী খেজুর দিয়ে ইফতার করার চেষ্টা করতে হবে। আর যদি তা করা সম্ভব না হয় তাহলে সবার আগে পানি দিয়ে ইফতার করতে হবে। রাসূল সা: এমনটি করতেন। কারণ পানি পাক-পবিত্র একটি বস্তু।

ইফতার করানোর সওয়াব : কোনো রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর মধ্যে অনেক সওয়াব। তবে সেটা লোক দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দেশে না হয়ে রাসূল সা: এর সুন্নত অনুযায়ী হতে হবে। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, যে ব্যক্তি এ রমজান মাসে কোনো রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাবে এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। যে ইফতার করালো তাকে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে। কিন্তু এ কারণে রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হবে না। সাহাবায়ে আজমাইন রা: রাসূল সা: কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যে অনেকের তো রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। তাহলে আমরা কী করবো। রাসূল সা: বললেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে একটি মাত্র খেজুর, পানি বা এক ঢোঁক দুধ দিয়ে ইফতার করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকেও এই একই সওয়াব দান করবেন।সূত্র,আমাদের সময়.কম