Type to search

ছাদ চাষে মেটানো যায় সবজির চাহিদা

অন্যান্য

ছাদ চাষে মেটানো যায় সবজির চাহিদা

হাজার দুয়েক বর্গফুটের ছাদ। তাতে ৫ লিটারের পানির বোতল থেকে শুরু করে হাফ ড্রামেও লাগানো হয়েছে হরেক গাছপালা। দেখা যাবে আধুনিক ‘গ্রো ব্যাগ’ও। একেকটি ব্যাগে পাওয়া যাবে ৫-৮ কেজি করে আলু। এক কোণায় মাচায় বড় হচ্ছে কুমড়োর লতা। মাঝ বরাবর রাখা তাকে সাজানো আছে লেটুস, পুদিনা, পুঁই। মোটকথা, একটু মাথা খাটিয়ে ছাদবাগান করতে পারলেই অল্প জায়গায় মেটানো যায় একটি বড় পরিবারের সবজির চাহিদা। তারওপর আবার ড্রামে লাগানো ফলগাছ থেকে মৌসুমী ফল তো মিলবেই।

মিতুল-মিন্তি দম্পতি রাজধানীর কল্যাণপুরে নিজেদের বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন এমনই এক বাগান। ফল, ফুল, সবজি থেকে মসলা গাছও আছে। একশ’রও বেশি গাছ লাগিয়েছেন তারা। মাঝে মাঝেই তৃপ্তি করে খান ছাদবাগানের সবজি। তাদের মতে, চাইলে মাসের দশটা দিনই ছাদবাগানের সবজি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যায়।

মিতুল-বিন্তির মতো রাজধানীতে এখন শহুরে চাষী অনেক। বাড়িওয়ালা ছাদে বাগান করলেও ভাড়াটিয়ারা করছেন বারান্দায়। উন্নত বীজ ও অনলাইনে অর্ডার করা জৈব মাটির কল্যাণে লালশাক, পালংশাক থেকে মুলাশাক, ডাঁটাশাকও এখন দেখা যায় রাজধানীর টবগুলোতে।

কলাবাগানের বাড়ির ছাদে বাগান করেছেন মোহাম্মদ শরীফ। তার পছন্দ অবশ্য ক্যাকটাস। পাশাপাশি লেবু, চেরি, আঙ্গুর ও পুঁইশাকও দেখা গেল। শরীফ জানালেন, এখন আর অন্তত পুঁইশাকটা কিনতে হয় না। মাঝে শিম, সজনে, ডাটাও খেয়েছি। তবে মানুষকে আমার বাগানের ক্যাকটাস উপহার দিয়ে বেশ আনন্দ পাই।

ফল-সবজি আর ফুলের বাগান করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক ফখরুল আবেদীন মিলন ও শারমিন হোসাইন দম্পতি। তাদের বাগানে দেখা গেল টমেটো, মরিচ, লাউ, বেগুন, কুমড়ো, পুঁই, লালশাক,  পুদিনা, ঢেঁড়শসহ আরও হরেক শাক-সবজি। ফল ও ফুলের গাছও বাদ রাখেননি।

মিলন বললেন, ছাদে ফুল গাছ থাকলে কিন্তু আপনার মন ভালো থাকবে। সুতরাং শুধু পুদিনা বা লালশাক নয়, এক হিসেবে ফুলগাছও আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। ওটাকে বলতে পারেন মনের ভিটামিন। ফলের মধ্যে এখন বিদেশি জাতের কিছু আম আছে যা ড্রামে বেশ ভালো ফল দেয়। শীতে যখন মুকুল আসে, তখন আপনার মন ফুরফুরে থাকবে। টেনশন কমাতেও কিন্তু ছাদবাগানের জুড়ি নেই। আমার ছাদে সবজি যা হয় তা দিয়ে সারা বছরে চাহিদা মেটানো যায়।’

শারমিন জানালেন, ‘শীতে এক ধরনের শাক হয়, আবার গরমে আরেক ধরনের। প্ল্যান করে চাষবাস করা হচ্ছে। তাই ফলনও পাচ্ছি ভালো। প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে দুয়েকটা বরবটি, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা তুলে আনছি। একেকদিন একেকটা দিয়ে চালানো যায়। সেভাবে হিসাব করেই বীজ বা চারা বপন করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমার পরিবার নয়, আমার বিল্ডিংয়ের অন্য বাসিন্দাদেরও মাঝে মাঝে দেই। এটি আসলে নিজে খাওয়ার জন্য নয়, ছোট্ট একটা গাছ বড় হচ্ছে, সেখানে ফুল হচ্ছে, ফল হচ্ছে; এটার আলাদা একটা আনন্দ আছে। সে আনন্দ আপনি কাঁচাবাজারে কিনতে পারবেন না।’

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিনের মতে, ‘একটুখানি পড়াশোনা করে যদি পরিকল্পনা মাফিক ছাদবাগান করা হয় তবে তাতে অন্তত একটি পরিবারের সবজির জোগান আসবে।’ তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শহুরে মানুষের অবসর বিনোদন নেই। তাই ছাদবাগান এখন হতে পারে আদর্শ বিনোদন। ব্যক্তি যখন নিজে ফসল তোলে, তখন তার মনও ভালো হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, সমন্বিত ব্যবস্থায় ভার্টিকেল পদ্ধতিতে চাষ করলে ১০০ বর্গফুট জায়গাতেও ৪ জন সদস্যের সবজির যোগান দেওয়া সম্ভব। তবে পেঁয়াজ রসুনের মতো কিছু মসলা ছাদবাগানের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই ওগুলোর পেছনে সময় নষ্ট না করে বাইরে থেকে কেনাই ভালো।

সূত্র,  বাংলা ট্রিবিউন