Type to search

চৌগাছায় সরকারি খাল দখল করে কংক্রিট ঢালাই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, তিনদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ ইউএনওর

চৌগাছা

চৌগাছায় সরকারি খাল দখল করে কংক্রিট ঢালাই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, তিনদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ ইউএনওর

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ

চৌগাছায় সরকারি খাল দখল করে কংক্রিট ঢালাই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, তিনদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ ইউএনওর

চৌগাছা প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে সরকারি বর্ষাগাড়ি খালে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে বেঁধে অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বাধ তিনদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে
স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (২৪আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর এবং নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজারাখানা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বর্ষাগাড়ি খালের হাজারাখানা বিজ্রের নিচে অবৈধ কংক্রিটের ঢালাই করা ওই বাঁধের স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ, স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আদালত আগামী তিন দিনের মধ্যে ওই ব্রিজের নিচে কংক্রিটের ঢালাই করা বাঁধ নিজ দায়িত্বে উঠিয়ে ফেলার জন্য মাসুদ আহাম্মেদকে নির্দেশ দেন। একইসাথে ওই জলাকারের মাছ বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা ও আদালত সূত্রে জানা যায় এসম অবৈধভাবে কংক্রিটের বাধ দিয়ে দখল করে মাছ চাষকারী মাসুদ আহমেদ আদালতকে বলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথকে টাকা দিয়ে তিনি সেখানে মাছ চাষ করছেন, যা তাঁদের যশোরের উপ-পরিচালকও জানেন। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করলেও মাসুদ আহমেদ তাঁর দাবিতে অটল থাকেন এবং মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ এক পর্যায়ে নিরব হয়ে যান। এমনকি মাসুদ আদালতের সামনেই মৎস্য বিভাগের যশোরের উপ-পরিচালককে মোবাইলে কল করেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার স্বরুপদাহ ও নারায়নপুর ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারনকারী বর্ষাগাড়ি খালটি দিয়ে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা, আন্দারকোটা, চান্দারপোল, খড়িঞ্চা নওদাপাড়া, বাজে খড়িঞ্চা, বৃহৎ গ্রাম টেঙ্গুরপুর, নারায়নপুর ইউনিয়নের বৃহৎ গ্রাম হাজরাখানা ও বুন্দেলীতলা, পাশর্^বর্তী মহেশপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া, যদুনাথপুর, শ্যামনগর, মান্দারবাড়িয়াসহ ১৫/২০টি গ্রামের মাঠের অতিরিক্ত পানি চৌগাছার টেঙ্গুরপুর হয়ে কপোতাক্ষ নিস্কাশন হয়।
গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারি একটি প্রকল্প দিয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে খালের টেঙ্গুরপুর পাশের প্রায় ৫০০ মিটার খনন করা হয়। এরপরই সেটি চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ভাগ্নে পরিচয়ে দখলে নেন জনৈক মাসুদ আহম্মেদ। তিনি আরও কয়েকজনকে নিয়ে খালের ওই অংশকে ভেড়ীতে রুপান্তর করে অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করে আসছিলেন। খালে এমনকি স্থানীয়দের গোসল করতেও নামতে দেননা তিনি। খালের ওই অংশে তাঁর মাছ চাষের সুবিধার্থে টেঙ্গুরপুর অংশের হাজরাখানা ব্রিজের নিচে তিনি কংক্রিটের ঢালাই করে বাঁধ দিয়েছেন। যেন পানি কোনভাবেই কপোতাক্ষ নদে না পড়তে পারে। এতে গত কয়েক বছর ধরে উজানের গ্রামের মাঠের বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি এসে অপেক্ষাকৃত ভাটির হাজরাখানা গ্রামের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত বছর আমনের মৌসুমে এই জলাবদ্ধতায় ওই মাঠের প্রায় একশ একর জমির ধান নষ্ঠ হয়ে যায়। একই অবস্থার সৃষ্টি হয় চলতি বছর বোরো মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে। তখনও হাজরাখানা ও আন্দারকোটা গ্রামের কয়েকশ একর জমিতে চাষের জন্য করা বীজতলা অতিরিক্ত জলাবদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ নষ্ঠ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সেসময় স্থানীয়রা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত এবং মৌখিকভাবে অভিযোগও দেন। তবে সেসময় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় আর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ওই খালে প্রতি মৌসুমেই সরকারিভাবে মাছ অবমুক্ত করা হয়। সেসময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। অথচ তাঁরা দখলমুক্ত করার কোন ব্যবস্থা নেন না।
তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তাঁরা অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করছেন। খাল খননের পর ওইস্থান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইজারা দিলে শুধুমাত্র তারাই ইজারা দিতে পারেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে ওই ব্যক্তি বলেছেন এডি স্যারও বিষয়টি জানেন।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উরুফা সুলতানা বলেন, সেখানে সেতুর নিচে অবৈধভাবে কংক্রিটের বাঁধ দেয়া ছাড়াও কপোতাক্ষ নদের আরও কাছে অস্থায়ী পাটা বাঁধও দিয়েছেন তাঁরা। তিন দিনের মধ্যে ওই অবৈধ কংক্রিটের বাঁধ ও পাটাবাধ উঠিয়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের নায়েবকে (ইউনিয়ন ভূমিসহকারী কর্মকর্তা) ওই অবৈধ জলাকারের মাছ ধরে বিক্রিলব্ধ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি খাল স্থানীয় জনসাধারণের জন্য। কোনভাবেই সেখানে অবৈধ দখলদারদের মাছ চাষ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।