Type to search

চৌগাছায় রাজাকারের বাবার নামে বাজারের নামে সাইনবোর্ডে উপজেলা প্রশাসন লেখার জবাব চান মুক্তিযোদ্ধারা

অভয়নগর

চৌগাছায় রাজাকারের বাবার নামে বাজারের নামে সাইনবোর্ডে উপজেলা প্রশাসন লেখার জবাব চান মুক্তিযোদ্ধারা

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

যশোরের চৌগাছা সদর ইউনিয়নের কড়ইতলা বাজারের নামের সাইনবোর্ডে মুজাহিদ আলী ওরফে চুন্টে রাজাকারের পিতা ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত তৎকালীন পিস কমিটির সদস্য আহমদ আলীর নামে ‘আমহমদ নগর’ নামের সাইনবোর্ডে “বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন” লেখা দেখে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

মঙ্গলবার রাজাকারের পিতা ও পিস কমিটির সদস্যের নামে বাজারের নামকরনের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চৌগাছা শহরে দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা এবং কড়ইতলা বাজারের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেন। মঙ্গল ও বুধবার বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং সংবাদপত্রে এ সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি এলাকার টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়। এরপর বুধবার সকালে সকালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ওই বাজারটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা সাইনবোর্ডে ‘আহমদ নগর’ ‘বাস্তবায়নেঃ উপজেলা প্রশাসন’ লেখা দেখে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

এবিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ৭১’র বীর সন্মুখযোদ্ধা ডা. নুর হোসেন বলেন, আহমদ আলী ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী একজন মুসলিম লীগের লোক। ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পিস কমিটির সদস্য। তার ছেলে এম মুজাহিদ আলী ওরফে চুন্টে ছিল একজন ট্রেনিং প্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকার। উপজেলার রাজাকারের তালিকায় সে ৮ নম্বরে আছে। খুলনায় বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রাজাকার মুজাহিদ স্বাধীনতার পরে (সম্ভবত ১৯৭২ সাল) জেল খেটেছেন বলেও জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন তার (মুজাহিদের) পিতা এবং পুরো পরিবার স্বাধীনতা বিরোধী হয়েও কিভাবে সেই স্বাধীনতা বিরোধীর নামে একটি বাজারের নামকরন হয় সেটি আমি বুঝলাম না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৭১’র বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন মুজাহিদ আলী একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতকৃত তালিকায় ৮ নম্বরে নাম থাকা এই রাজাকারের পরিবার স্বাধীনতা বিরোধী। তার নামে কিভাবে বাজারের নামকরন হলো সেটা আমার বুঝে আসে না।

৭১’র মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) লিডার মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেল হোসেন বলেন ১৯ নভেম্বর ১৯৭১ চৌগাছা বাজার স্বাধীন করে (বর্তমান তহসিল অফিস) কালিতলায় বিকাল ৩টার সময় প্রথম আমার সঙ্গী যোদ্ধাদের নিয়ে স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করি। আধা ঘন্টা পরে যশোরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল মালেক মুজিব বাহীনির আজিজকে নিয়ে চৌগাছা ডাকবাংলোতে পাকিস্থানী পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুজাহিদ সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন সে আমার (ক্লাসফ্রেন্ড) স্কুল বন্ধু। মুজাহিদ ছিল ট্রেনিং প্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকার। তার পিতা আহমদ আলী ছিলেন মুসলিম লীগার। সে সময় মুসলিম লীগাররা প্রায় সকলেই ছিল পিস কমিটির সদস্য। আর এই পিস কমিটির সভাপতি ছিলেন চৌগাছা উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। সেই রাজাকারের বাপ স্বাধীনতা বিরোধী একজন ব্যক্তির নামে কিভাবে একটি বাজারের নামকরন হয়?

রনাঙ্গনের আরো একজন মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন মুজাহিদ আমাদের তালিকায় একজন সশস্ত্র রাজাকার। তার পরিবারের কোন লোক মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত নয়। জিয়াউর রহমান যখন ছাত্রদলের কমিটি করেন তখন মুজাহিদ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তো। মুজাহিদ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিল। সূর্যসেন হলে থাকাবস্থায় এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতা হওয়ায় সে তার আপন ভাই শওকত আলীকে জিয়াউর রহমানকে দিয়ে বিশেষ সুপারিশ করিয়ে স্কলারশিপে বিদেশে লেখাপড়া করতে পাঠায়। আর এই আহমদ আলী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ছিলনা বরং তিনি পাকিস্থানিদের সাথে ছিলেন। পিস কমিটির সদস্যের নাম ঠিকানা আমাদের কাছে না থাকলেও স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে তার গভীর আতাত ছিল। আজ পর্যন্ত তাদের পরিবারের কোন লোক স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। স্থানীয় মানুষজন ওই বাজারকে মুক্তিযোদ্ধা নগর বলে ঘোষণার সাথে আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) একাত্মতা ঘোষনা করছি এবং এই সঠিক সংবাদটি যেসকল গনমাধ্যমকর্মীরা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছেন আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও চৌগাছাতে কোন মুক্তিযোদ্ধার নামে কোন সড়ক বা বাজার বা কোন প্রতিষ্ঠান না থাকলেও একজন রাজাকারের পিতা যে কিনা নিজেই স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন তার নামে বাজারের নামকরন হয় কিভাবে? সেই সাইনবোর্ডে আবার বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন লেখা তার মানে কি? তিনি প্রশ্ন রাখেন এই জন্যে কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? এই দিনটি দেখার জন্যে কি ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন?

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এস এম হাবিবুর রহমান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুস সালাম চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হকের সাথে কথা বলে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বলেও নিশ্চিত করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের এই নেতা।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন আমি এখানে নতুন এসেছি। এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে যা জানতে পেরেছি তাতে অফিসিয়ালি এমন কোনো দলিল আমি পাইনি। তিনি আরও বলেন সরকারি নির্দেশনা ছাড়া কোন কিছুর নামকরন করার এখতিয়ার কারো নেই। উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা হয়েছে নিশ্চিত করে তিনি বলেন উনারা এসেছিলেন। আমি তাদেরকে বলেছি এরকম কোন সরকারি দলিল এখনও আমার দৃষ্টিগোচর হয়নি। কিভাবে উপজেলা প্রশাসনের কথা সাইন বোর্ডে লেখা হলো সেটি তদন্ত করে দেখছি। বৃহস্পতিবার ওই বাজারে সরজমিনে তদন্তে যাবেন বলেও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ এবং সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক।

এদিকে একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকারের পিতা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী একজন ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে বিষেশায়িত করে তার নামে বাজারের নামকরনের পক্ষে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ঘিরে উপজেলাতে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। তাচ্ছিল্যের সাথে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানতে চান ওই পত্রিকাগুলির স্থানীয় প্রতিনিধিরা কি তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের থেকেও বেশি জানেন? তা না হলে একজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অস্ত্রধারী রাজাকারের পিতা ও স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত পিস কমিটির একজন সদস্যের পক্ষে এভাবে সংবাদ লিখলেন কিভাবে? একইসাথে বাজারটির নাম “কড়ইতলা মুক্তিযোদ্ধা নগর” করার দাবীতে গ্রামবাসীর সাথে উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *