Type to search

চাকাও ঘোরে না, খাবারও জোটে না

জেলার সংবাদ

চাকাও ঘোরে না, খাবারও জোটে না

ছবি : ইন্টারনেট

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: গল্পটা কিছু হত দরিদ্র মানুষের। সবাই ওদের কে রিকশাওয়ালা বলেই চিনে। একটা সময় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতেন। দিন শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর নিয়ে ঘুমাতেন। আবার সকাল হলে তিন চাঁকার যানবাহন নিয়ে বেড়িয়ে যেতেন।মোটামুটি ভালো আয়ের ব্যবস্থা করে বাসায় বাজার নিয়ে ফিরতেন। রান্না হলে বাড়ির সবাইকে নিয়ে খেয়ে ঘুমাতে যেতেন। এভাবেই চলছিল জীবনের গল্পটা।

হঠাৎ করেই এই গল্পের ছন্দপতন হয়ে গেল। একটি ভাইরাস, একটি অভিশাপ যেন সারা পৃথিবী স্তব্ধ করে ফেলেছে আর ভাইরাসের কারণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরো বেশি কু-প্রভাব ফেলেছে তিন চাকার রিকশাওয়ালাদের উপর।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশা নিয়ে ক্ষুধার অগ্নিচক্ষু, অপলক দৃষ্টিতে মলিন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রিকশা চালকেরা। দু-একজন যাত্রী এলেই সবাই একযোগে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এ ধরনের দৃশ্য যেন ইতিপূর্বে খুব কমই চোখে পড়েছে। এসব রিকশাচালকদের মধ্যে হঠাৎ করেই চোখ পরল এক বৃদ্ধ লোকের দিকে তিনি যেন চাতক পাখির মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

কাছে গিয়ে কথা বলে জানা গেল, তাঁর নাম নূরুল ইসলাম। সকালে মুড়ি খেয়ে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। কিছু রোজগার করে বাজার নিয়ে বাসায় ফিরলে স্ত্রী দুপুরের রান্নার আয়োজন করতে পারবেন। ওই সময় পর্যন্ত রোজগার হয়েছে মাত্র ৭৫ টাকা। তা থেকে রিকশার মালিককেই কি জমা দিবেন আর নিজের জন্য বাজারই বা কি করবেন ।

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রিকশাচালক রফিক তিনি বলেন, ‘ঘরে মা-বাবা, বউ ও দুটি মেয়ে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার। রিকশার চাকা না ঘুরলে তাদের পেটে খাবার যাবে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৩০০ টাকাও কামাই হয় না। করোনার আগে এমনও দিন ছিল এক হাজার টাকা পর্যন্ত কামাই হতো। এখন রিকশার জমার টাকা দিয়ে কোনোমতে খাবারের ব্যবস্থা হলেও ঘর ভাড়া দিতে পারছি না।’

পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় পেশা পরিবর্তন করে পেটের দায়ে রিকশা চালাচ্ছেন আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘১৬ হাজার টাকা বেতনে গাজীপুরে একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে কাজ করতাম। করোনার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপায় না পেয়ে রিকশা চালাচ্ছি। গ্রামের বাড়িতে বাবা, দুটি ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। একমাত্র আমার রোজগারে সংসার চলে। কিন্তু সারা দিন রিকশা চালিয়েও জমা আর নিজের খরচই জোগাতে পারি না। বাড়িতে টাকা পাঠাব কিভাবে?’

কালিয়াকৈর জুড়ে এমন হাজারো রিকশাচালক রয়েছেন, যাঁরা পেটের দায়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন। কিন্তু যাত্রী মিলছে না। বেশির ভাগ রিকশাচালককেই অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। লকডাউন থাকার কারণে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে একেবারেই যাত্রী পাচ্ছেন না রিকশাচালকরা।

সারা দিন রিকশা চালিয়ে জমা (ভাড়া রিকশার দিনপ্রতি খরচ) ১৫০ টাকা দেওয়ার পর অবশিষ্ট তেমন কিছু আর থাকে না। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের। এদিকে চাকরি হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করে অনেকে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।

কালিয়াকৈরের এক বেসরকারি হিসাব মতে, কালিয়াকৈরে প্রায় ১৮ হাজার রিকশা রয়েছে। তবে এদের কোন বৈধতা নেই। এসব রিকশার পেডাল ঘোরান একবারেই হতদরিদ্র মানুষগুলো। তাঁদের শ্রম-ঘামে উপার্জিত অর্থের বড় একটা অংশই চলে যায় জমার নামে মালিকদের পকেটে। অন্য সময় উপার্জন থেকে সেই জমার টাকা নিয়মিত দিতে পারলেও বর্তমান সময়ের এই করোনা সংকটে অনেকেই আর পারছেন না।

কিন্তু তা দেখার সময় ও মানসিকতা কোনোটাই নেই মালিকদের। আয় হোক না হোক জমার টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। নইলে পরদিন থেকে আর রিকশা মিলবে না।

এ ব্যাপারে কথা হয় বিশ্বাস পাড়া রোডের রিকশার গ্যারেজ মালিক কালু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাধ্য হয়েই প্রতিটি রিকশায় আমরা এক শ টাকা জমা নিচ্ছি। কারণ গ্যারেজ ভাড়া ও মিস্ত্রি খরচ আছে। করোনার কারণে আমরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমার গ্যারেজে ২৮ টি রিকশা রয়েছে। এর অর্ধেকই চলে না। আয় কম দেখে রিকশা রেখে গ্রামে চলে গেছে অনেকেই।’

কালিয়াকৈর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকদার বলেন, পায়ে চালিত প্রায় পনেরো শত রিকশা কে পৌরসভার প্লেট প্রদান করা হয়েছে। এরা প্রত্যেক বছর নবায়ন করে থাকে। বাকিসব অবৈধ রিকশার ব্যাপারে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর। করোনা কলীন সময়ে এসব নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে নগদ অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ও করা হবে।

সূত্র,বিডি২৪লাইভ.কম