Type to search

কুশিলব যখন ডিরেক্টর!

সাহিত্য

কুশিলব যখন ডিরেক্টর!

গল্প : কুশিলব যখন ডিরেক্টর!

বিলাল মাহিনী

পিচঢালা সড়ক। পায়ে সাদামাঠা একটা স্যান্ডেল আর অগোছালো একটা বোরখা পরে যেনো কারো অপেক্ষায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। পাতাবাহারি কালো-খয়রি ওড়নায় মুখ ঢাকা তার। মুখায়ব ও শারীরিক গঠন দেখে মনে হলো একাদশী বা দ্বাদশী পাঠের শিক্ষার্থী। পায়ের কাছে একটি মাঝারি সাইজের ব্যাগ। অনুমান করা গেল, বাবা-মা’র স্নেহ ভিন্ন অন্য কারো প্রতি অনুরাগের মাত্রাটা ঢের বেশি। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, একটি পালসার বাইক নিয়ে একটি ছেলে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি তাকে হাত ইশারায় থামতে বললো। সে থামলো। কী কথা হলো তা শুনতে না পেলেও রকি ও জনি তাদের পিছু নিলো। মোবাইলে ওদের গাড়িতে উঠা ও চলে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ করলো।

মেয়েটির নাম যুথি। জনি দীর্ঘদিন তার পিছু নিয়েও তার পক্ষ থেকে সাড়া না পেয়ে প্রতিশোধের অনলে জ্বলছিলো। তাই সবুজের গাড়িতে মেয়েটিকে ওভাবে যেতে দেখে সুযোগ হাতছাড়া করলো না। স্টিল পিক ও ভিডিও ছড়িয়ে দিল এলাকায়। গুজব রটে গেল যুথিকে নিয়ে পালিয়েছে সবুজ।
সবুজ শান্ত স্বাভাবের ছেলে। সবে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তরে। নিম্নবিত্ত বাবার সংসারে প্রাইভেট পড়িয়ে ও খাল-বিলে মাছ ধরে কোনো রকমে চলে তার দিন। গাড়িটিও তার নয়, বন্ধু মাহি’র কাছ থেকে নিয়ে অসুস্থ ফুফুকে দেখতে বের হয়েছিলো। এদিকে অপবাদ আর মেয়েলি রটনায় নিজেকে সামলাতে পারলো না সে। রকি ও জনির দুষ্টুমিতে দুটি জীবন বিপন্ন হতে চললো।

উপরের গল্পটি আমাদের গল্প নয়; গল্পটি নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল নাটক তৈরির কাজ করছিলো। দৃশ্যধারণের এক পর্যায়ে ঘটে নানা অঘটন। সেটাই আমাদের গল্প।

নাটকের মাঝ দিকের একটি দৃশ্যে গল্পের নায়ককে দিয়ে ডিরেক্টর এমন একটি অভিনয় করাতে চায়, যেখানে সবুজ দড়ি হাতে নিয়ে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বের হবে, পথিমধ্যে বন্ধু মাহি’র সাথে দেখা হবে এবং সেখানে দু’জনের কিছু সংলাপ থাকবে। ঝামেলাটা এখান থেকে..। সুবজ কিছুতেই আত্মহত্যার জন্য হাতে দড়ি নিতে চায় না। বরং সংলাপের মাধ্যমে বুঝাতে চায়, সে তার জীবন আর রাখতে চায় না, তার কলঙ্কিত মুখ আর কাউকে দেখাতে চায় না। কিন্তু ডিরেক্টরের তাতে হবে না। লেগে গেল তর্ক। পক্ষ হলো দুটো। এক পক্ষ ডিরেক্টরের অন্যটা নায়কের।
যাইহোক পরিশেষে দু’পক্ষ আলোচনায় বসলো, সমাধানের লক্ষ্যে। কিন্তু যা হবার তাই হলো। নাটক ভেস্তে গেল! কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। ডাক্তারের চেয়ে রোগি বেশি পাণ্ডিত্য দেখালে যা হয়। দেখা গেল, আসলে এই ইউটিউব ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের কারোর-ই ড্রামা, ফিল্ম বা সিনেমাটোগ্রাফির ওপর স্টাডি নেই। একাডেমিক পড়াশোনা তো নেই-ই।
একজন প্রযোজক, পরিচালক ও অন্যান্য কলাকুশলী কার কী দায়িত্ব সেটাই জানে না কেউ। অনলাইন থেকে দশটা নাটক দেখে নিজেদের মতো করে নাটক বা শর্ট ফিল্ম বানানোর বাসনা থেকেই এই ইউটিউব ভিত্তিক চ্যানেলের আমদানি। শুধু তাই নয়, একটা নির্দিষ্ট পরিমান সাবস্ক্রাইব হলে আয়ের সুযোগও আছে। আর নিজেকে জানান দেয়ার যে কুটিল অভিপ্রায় তা আর বলতে!

নাটক-সিনেমা বা শর্ট ফিল্ম যে জীবনে প্রতিচ্ছবি তা ক’জন জানে? জীবনের অতীত ও বর্তমানকে দূরদর্শী কল্প-কাহিনীর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যে নাটকের মূল উদ্দেশ্য সেটাই তো জানে না অনেকে। অভিনয়ের কাজ হলো, হাসি-আনন্দ-কৌতুক, দুঃখ-বেদনা এবং নানা ট্রাজেডির মাধ্যমে দর্শককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া সমাজের ক্ষত ও উত্তরণের পথ। সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ হলো, কুশিলব ও পরিচালকের দায়িত্ববোধ, তাদের কর্মদক্ষতা ও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ এবং সিনেমাটোগ্রাফির ওপর বিশেষ স্টাডি থাকা।