Type to search

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে

জাতীয়

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স-চলতি জুলাই মাসের ২৮ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৫শ ১০ জন। ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরের হিসাবে দেখা গেছে, রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০১৮ সালে। সে বছর
ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। অথচ সেই রেকর্ডের প্রায় সমপরিমাণ মানুষ চলতি বছরের এক মাসেরও কম সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তদুপরি এটি সরকারি হিসাব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিবেশিত তথ্য। বাস্তবে আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তথাপি সরকারের এ পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার, দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এদিকে জোর অভিযোগ রয়েছে যে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সরকারের হিসাবে তা অনেক কম দেখানো হচ্ছে; মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে চলছে এক ধরনের লুকোচুরি।
এই যখন দশা, যখন ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে, সাধারণ মানুষ যখন এ নিয়ে খুবই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন, তখনো এ রোগ থেকে নিস্তারে নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ। ডেঙ্গু রোগবাহী এডিস মশার নিধন চলছে শুধু দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের মুখে মুখেই। অথচ দিন যত যাচ্ছে, ততই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।
এদিকে ঢাকা নগরীর মশা নিধনে গত পাঁচ বছরে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেটে বরাদ্দ ছিল ২৩৩ কোটি টাকা। মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে মশার বিস্তার। প্রতি বছরই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আর চলতি বছর মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ অনেকটা মহামারী রূপ নিয়েছে।
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, ফেনী, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, বগুড়া, নাটোর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, শেরপুর, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর আসছে। জানা গেছে, আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে নিজ জেলাতে গিয়ে জানতে পারেন আক্রান্ত হওয়ার কথা।
বিভিন্ন জেলা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর থেকে জানা গেছে, সিলেটে ৭, চাঁপাই নবাবগঞ্জে ৩, ফেনীতে ২৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গাজীপুরে ৬১, কুষ্টিয়ায় ১৫, শেরপুরে ৫, মৌলভীবাজারে ৯, বরিশালে ২৫, নাটোরে ৭, বগুড়ায় ৩৬, সাতক্ষীরায় ৯ এবং বরগুনার আমতলীতে একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদিকে মাগুরা প্রতিনিধি জানান, আসিফ হোসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মাগুরা সদর উপজেলার খালিমপুর গ্রামের বাবর আলী মোল্লার পুত্র আসিফ ঢাবির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
রাজধানীজুড়ে এখন আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গুজ্বর। প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারের দ্বারস্থ হচ্ছেন। একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এ রোগ থেকে নিস্তার মিলছে না কারোরই; আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সও।
রাজধানীবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন মশা নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় এডিস মশার উৎপাত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগী কমাতে হলে এডিস মশা নিধন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
রাজধানীর রামপুরা হাজীপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকায় থাকি। কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এ বছর মশার ওষুধ দিতে দেখিনি আমি।
মগবাজার নয়াটোলার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, শনিবার দুপুরে আমার বাড়ির সামনে মশার ওষুধ ছিটিয়েছে সিটি করপোরেশনের লোকজন। কিন্তু রেজাল্ট তো পাচ্ছি না।
রমনা থানার ডাক্তার গলির এক বাসিন্দা হতাশার সঙ্গে বলেন, বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, গত এক মাসের মধ্যে কোনোদিনও দেখিনি সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ দিতে।
আজিমপুরের বাসিন্দা নাজমা খাতুন বলেন, গত দুদিন রাস্তায় মশার ওষুধ দিতে দেখেছি। তবে মশার উৎপাত কমেনি।
যদিও সিটি করপোরেশনের ভাষ্য, প্রতিনিয়তই করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। মশা নিধনে তাদের কার্যক্রম অনেক জোরদার করা হয়েছে। মশার নতুন ওষুধ ক্রয়ের জন্য ইতোমধ্যেই কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এডিস মশা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। ডেঙ্গু মশা নিধন করা খুবই জরুরি। এ কাজটি সিটি করপোরেশনকেই করতে হবে। কিন্তু নিধন কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। মশার ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ জন্য প্রথমেই দরকার সিটি করপোরেশন থেকে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, সে ওষুধের মান ঠিক আছে কিনা; ওষুধে ভেজাল আছে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়া। এর পর মনিটরিং করতে হবে ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হয় কিনা। এ কাজগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে না।
ডা. কামরুল হাসান খান আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগী কমাতে মশা নিধনের কোনো বিকল্প নেই। এখন মশা নিধনে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত কার্যক্রম চালানো দরকার। এ কাজে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, কাউন্সিলর, স্কাউট, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে যুক্ত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি, সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে। এটি তাদের কাজ না। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। তবে বাড়ির ভেতর পরিষ্কার করার দায়িত্ব অবশ্য সিটি করপোরেশনের নয়, এটি নাগরিকদের নিজ দায়িত্ব। এ দায়িত্ব খুব সচেতনভাবে আমাদের পালন করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে চারদিকে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ফলে মানুষের সচেতনতাও বাড়ছে। এ মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেছেন, ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণ এডিস মশা নিধন ছাড়া সম্ভব নয়। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করতে হবে। প্রথমত, ঢাকার যে ৪২টি খাল দখল হয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করতে হবে, যেন বৃষ্টি হলে পানি আটকে না থেকে খালগুলো দিয়ে নেমে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, বৃষ্টির পানি যেসব স্থানে জমে সেগুলো চিহ্নিত করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাই সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রকে এখন প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দিতে হবে যেন তারা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের লোকজনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে মশা নিধনের কাজে নেমে পড়েন। এর পাশাপাশি পরপর তিনদিন ওষুধ ছিটাতে হবে। তবে মশার ওষুধও মানসম্মত হতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, আমরা সিটি করপোরেশনকে মশা নিধনের পরামর্শ দিয়েছি। কারণ ডেঙ্গু রোগী কমাতে হলে মশা নিধনের বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চেয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে দুজন বিশেষজ্ঞ আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ৩০ জুলাই (আগামীকাল) তারা বাংলাদেশে আসবেন। এখানে এসে তারা ডেঙ্গুবিষয়ক পর্যবেক্ষণ করবেন; আমাদের পরামর্শ দেবেন। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু রোগী কমাতে হলে মশা মারতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি করপোরেশনকে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মশা নিধনে সেনাবাহিনী, এয়ারপোর্ট এলাকার মশা নিধনে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এবং পিলখানা এলাকার ক্ষেত্রে বিজিবিকেও সম্পৃক্ত করতে হবে সিটি করপোরেশনের। এছাড়া শহরের বাসাবাড়ির মশা নিধনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ কাজগুলো যথাযথভাবে করা গেলে মশা নিধন সম্ভব।
দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম। রাজধানীর ১২টি সরকারি এবং ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে।
কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় (রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২৪ রোগী। গত ১ থেকে ২৮ জুলাই সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৫১০ জন। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭২৫ জন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন। অবশিষ্ট ২ হাজার ৯২১ রোগী এখনো চিকিৎসাধীন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত এ বছর ১১ হাজার ৬৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৭, ফেব্রুয়ারিতে ১৯, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৮৪, জুনে ১৮২০ এবং জুলাইয়ের ২৮ দিনে ৯ হাজার ৫১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৮ জন মারা গেছেন। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মৃত্যুর সংখ্যা ৩২ জন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকল মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষ ও পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের দিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের ফলোআপ করা হবে। ঢাকায় ৫০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে টিম গঠন করে সকল হাসপাতালে ন্যাশনাল গাইডলাইন দেখানো হবে। সেই গাইডলাইন অনুসরণ করে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা সেবা ফ্রি। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু ইউনিট চালু হয়েছে। সব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষায় ৫শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলো যেন আইসিইউসহ অন্যান্য জরুরি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে বিনামূল্য বা নির্ধারিত হারের চেয়ে কম ফি ধরে, এ জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছে এটি একটি মানবিক সংকট, এই বিবেচনায়।
দুই সিটির বরাদ্দ বেড়েছে; বেড়েছে মশাবাহিত রোগও
রাজধানী ঢাকার মশা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩৩ কোটি টাকা (অবশ্য চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত হলেও কোনো সিটি করপোরেশনই এ পর্যন্ত তা প্রকাশ করেনি)। মশা নিধনে বছর বছর যেমন বরাদ্দ বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে মশার বিস্তারও। প্রতি বছরই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আর চলতি বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ অনেকটা মহামারী রূপ নিয়েছে।
ডিএসসিসির বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে মশা নিধন কার্যক্রমে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৬ কোটি টাকা। সেখানে বাস্তবায়ন হয় ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার কার্যক্রম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৫ কোটি ৬০ লাখ, ব্যয় হয় ১২ কোটি; ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ডিএনসিসির মশক নিধনে চলতি বছরের বাজেট এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে মশক নিধনে বাজেটের পরিধি এবার বাড়ানো হচ্ছে। করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের বাজেটে প্রায় ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ কোটি টাকা, তবে সংশোধিত বাজেট ছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ২০ কোটি, সংশোধিত বাজেটে ছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট ছিল ১৪ কোটি টাকা।
মশার ওষুধ নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ডেঙ্গুর ভাইরাস বাহক এডিস মশা প্রচলিত কীটনাশকে নিধন হচ্ছে না। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে করা গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এমন ফল পান।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র থেকেই জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ‘লিমিট’ নামের একটি কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ নিলেও তা মানহীন প্রমাণ হয় বেশ কয়েকবার। এর পর করপোরেশন ভাগ হলে লিমিট থেকে ওষুধ নেয় দুই সিটি করপোরেশনই। কিন্তু উত্তর সিটি করপোরেশনের পরীক্ষায় লিমিটের ওষুধ মানহীন প্রমাণিত হয়। এর পর এ ওষুধটি নিষিদ্ধ করা হয় উত্তরের তরফে। পরে নোকন নামের একটি কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ নেয় উত্তর নগর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সাম্প্রতিক পরীক্ষায় ওই কোম্পানির ওষুধও মানহীন ও অকার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়। মানহীন ও ভেজাল ওষুধের পরিবর্তে জরুরি ভিত্তিতে নতুন ওষুধ সংগ্রহ করতে কয়েক দফা সভা হলেও এ পর্যন্ত এর সমাধান হয়নি। এমন পরিস্থিতির মুখে মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক নির্বাচন, কার্যকারিতা পরীক্ষা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা মনিটরের জন্য ডিএনসিসি ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ডিএনসিসি মেয়র এ কমিটির সভাপতি এবং প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সেই কমিটি গঠনের পর ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি নেই। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন লিমিট কোম্পানির ওষুধই ব্যবহার করছে। যদিও কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তাদের পরীক্ষায় লিমিটের ওষুধ মানসম্পন্ন বলে প্রমাণিত হয়েছে। দক্ষিণ সিটি সরাসরি এ কোম্পানির ওষুধ ক্রয় করে না। অন্য একটি কোম্পানিকে ওষুধের টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। সেই কোম্পানি লিমিট থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে ডিএসসিসিকে সরবরাহ করে।
সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য ৫ থেকে ৬ জন করে কর্মী নিযুক্ত আছেন। তারা দিনে দুবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন। তবে সিটি করপোরেশন এমন দাবি করলেও নগরবাসীর অভিযোগ, তারা কালেভদ্রে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরিফ আহমেদ বলেন, আমরা কাজ করছি। যত দ্রুত সম্ভব নতুন ওষুধ আনা হচ্ছে।
অন্যদিকে একই বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিএসসিসির দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি আমাদের সময়কে বলেছিলেন, আমরা ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষার পর ব্যবহার করি। কীটতত্ত্ব বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগ এর মান পরীক্ষা করে। এ ক্ষেত্রে মানহীন পণ্য ব্যবহারের সুযোগ নেই।
সুত্র- আমাদের সময়