এমন দিনে জন্মদিন বলে কিছু নেই : ববিতা
অনলাইন ডেস্কঃ
জীবন্ত কিংবদন্তি ফরিদা আক্তার ববিতার জন্মদিন আজ। সাধারণত দিনটিতে বিশেষ কোনো আয়োজন করেন না তিনি। সারাদিন বাসায় সময় কাটান। একমাত্র ছেলে অনিক কানাডায় আছেন, ছেলে থাকলে কিছুটা আয়োজন করেন। তবে দেশে বর্তমানে বন্যার উপদ্রব, অন্যদিকে বিশ্ব কাঁপছে করোনার প্রকোপে। যে জন্য জন্মদিন নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই পারছেন না ববিতা।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ববিতা বলেন, ‘আসলে আমরা কেউ এখন ভালো নেই। বিশেষ করে আমরা বাংলাদেশের মানুষ মনে হয় একটু বেশিই বিপাকে পড়েছি। কারণ একদিকে করোনার প্রকোপ, অন্যদিকে আমাদের দেশে শুরু হয়েছে বন্যা। এমনিতেই মানুষের হাতে কাজ নেই। বন্যার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে মানুষ। এমন সময় কীভাবে জন্মদিন নিয়ে ভাবব। এমন দিনে জন্মদিন বলে কিছু নেই।’
প্রতি বছর রাত ১২টায় কেক-ফুল নিয়ে ববিতার বাড়িতে হাজির হতেন অনেকেই। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উপস্থিত হতেন তিনি। তবে এবারের জন্মদিনে নিজের বাসায় কাউকে যেতে দিচ্ছেন না। সোশ্যাল মিডিয়া আর মুঠোফোনেই উদযাপন সীমাবদ্ধ।
ববিতা বলেন, ‘করোনার এ সময়ে বন্যায় নাজেহাল মানুষ। যে কারণে কাউকে বাসায় অ্যালাউ করছি না। তবে অনেকে মোবাইলে কল করছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। শুনেছি সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই উইশ করছে। ছেলে কানাডা থেকে ফোনে কথা বলেছে। এর বেশি কিছু নেই আমার এ জন্মদিনে।’
জন্মদিনে মজার স্মৃতিচারণ করে এ অভিনেত্রী বলেন, “চলচ্চিত্রে আমি তখন পপুলার। ‘টাকা আনা পাই’, ‘শেষ পর্যন্ত’ সিনেমাগুলো খুব চলছিল। এ সময় তখনকার পূর্বাণী হোটেলে আমি ঘটা করে জন্মদিন পালন করেছিলাম। তখন আমি গেন্ডারিয়া থাকতাম। বাসায় এত মানুষকে ইনভাইট করা কঠিন ছিল। তাই হোটেলে অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। সেখানে চলচ্চিত্রশিল্পী, কলাকুশলী, সংবাদমাধ্যমের লোকজন সবাই এসেছিলেন। খুব নাচ-গান হয়েছিল। সেদিন আমি ও জাফর ইকবাল নেচেছিলাম। তখন তো জাফর ইকবাল-ববিতা সুপারহিট! অনুষ্ঠান শেষে আমরা সবাই বসে উপহারগুলো খুলে দেখছিলাম। তখন আমার ‘রাতের পর দিন’ সিনেমাটি সুপারহিট। সিনেমায় আমার আর সাইফুদ্দিন ভাইয়ের একটা গান ছিল। সেখানে তিনি নানা আর আমি নাতনি। দৃশ্যটিতে আমরা ডাব কেটে মানুষজনকে খাওয়াই আর গান করি। গানের কথাগুলো ছিল এমন—কচি ডাবের পানি, দু আনাতে খেয়ে নাও। তো জন্মদিনে একটি উপহার বক্স খুলে দেখি, দুটো কচি ডাব! এ নিয়ে বন্ধু-বান্ধব সবাই খুব হাসাহাসি করেছিল।”
সর্বশেষ ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায় ববিতাকে। এরপর নতুন কোনো সিনেমায় অভিনয় করেননি।
ববিতা ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন ববিতা। ১৯৬৯ সালে নায়িকা হিসেবে ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবিতে কাজ শুরু করেন তিনি। জহির রায়হান পরিচালিত ‘টাকা আনা পাই’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনিসংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।