Type to search

যুব উদ্যোক্তা ফোরাম যশোরের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঝিকরগাছার মেঘনা ইমদাদ

ঝিকরগাছা

যুব উদ্যোক্তা ফোরাম যশোরের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত ঝিকরগাছার মেঘনা ইমদাদ

 

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছার সফল উদ্যোক্তা, ইয়ুথ ফোকাস্ড সংস্থা পেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী মেঘনা ইমদাদ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর স্বীকৃত যশোর যুব উদ্যোক্তা ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আজ ১৬ আগস্ট ২০২৩ খ্রি. তারিখ বুধবার সকালে যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়ার ও টেকনোলজি পার্কে অনুষ্ঠিত অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. শাহীদুল ইসলাম এ ঘোষণা করেন। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এ্যাবাকাস সফ্ট বিডি লিমিটেড যশোরের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জহির ইকবাল।
মেঘনা ইমদাদ অনেক চড়াউ উতরায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। চাকরি না করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেছেন। বর্তমানে পেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, কপোতাক্ষ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক, মেঘনা নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রী, রুপান্তর হস্তশিল্প এন্ড ফ্যাশন পার্কের পরিচালক, সেন্টার ফর রিচার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর ইয়াংবাংলা, জাগ্রত নাগরিক কমিটি, জাতীয় যুব কাউন্সিল এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। ইতোমধ্যে তিনি কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। সমাজ উন্নয়ন অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৭ সালে ঝিকরগাছা উপজেলার জয়িতা পুরস্কার অর্জন, ২০২০ সালে জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন, ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোরের শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠন হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং ২০২২ সালে শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলেন্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী এবং ২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে সমাজসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেছেন। তার জীবন সংগ্রাম ও স্বপ্ন জয়ের গল্প: মেঘনা ইমদাদ ২০০৫ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাটশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ২০০৭ সালের ঝিকরগাছার সম্মিলনী মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ থেকে ২০১১ সালে ভূগোল বিষয়ে বিএসসি অনার্স ও ২০১২ সালে মাস্টার্স পাস করেন। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরণের পর স্বামী ইমদাদুল হক ইমদাদের অনুপ্রেরণায় শুরু করেন উন্নয়নমূলক কাজ। তিনি চাকরি তথা আয়ের সুযোগ থাকলেও তা পরিহার করে মানবসেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। মেঘনা ইমদাদ বলেন, ২০১৭ সালে যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসদরে কৃষ্ণনগর মাঠপাড়ায় যখন পারিবারিক কাজে যেতাম, তখন দেখতাম বেশ কিছু ছেলে মেয়ে এলোমেলো খেলাধুলা করছে। অথচ তাদের তখন স্কুলে পড়াশুনা করার কথা। আমি তাদের তাছে জানতে চাইলাম কেন তারা স্কুলে না যেয়ে খেলাধুলা করছে? তারা জানালো তারা স্কুলে যায় না। তাদের অনেকেরই মা-বাবা ফেলে রেখে অন্যত্র চলে গেছে, কারোর মা নেই, কারোর বাবা নেই। অভিভাবকদের মধ্যে অনেকেই অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করেন। কারো বাবা শ্রমজীবী। তাদের পরিবারের শিশুরা পড়াশোনার স্বপ্ন দেখেনি, পড়াশুনা না করে ঘোরাফেরা করে। তারা একটু চলার মত বড় হলেই শিকার হয় শিশুশ্রম। তখন মনে আইডিয়া আসলো, এদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দিতে পারলে হয়ত স্কুলমুখী হবে। তারা লেখাপড়া শুরু করবে। লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে পারবে। পরিবারের অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে পারবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। শুরু করলাম সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ২০১৭ সালেই প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “স্বপ্নলোকের পাঠশালা”। এই শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশুনার মনোভার সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের অভিভাবক মা বা দাদী/নানী অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ বা স্থানীয় কোন ছোট ফার্মে নিশ্চিন্তে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। নিজের উদ্যোগে ঝিকরগাছায় অবস্থিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বপ্নলোকের পাঠশালা’র দুটি ক্যাম্পাসে বর্তমানে মোট ১৭০জন শিক্ষার্থী সম্পূর্ণভাবে বিনামূল্যে লেখাপড়া করছে। এ পর্যন্ত ৬১০জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম সহযোগিতা প্রদান করেছি। মেঘনা ইমদাদ বলেন, যশোর অঞ্চলের অনগ্রসর, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অভিভাবক ও বেকার মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দফতরের সহযোগিতায় মোট ১ হাজার ৫৭০ জন বেকার, হতদরিদ্র, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা ও হতদরিদ্র যুব মহিলাকে দর্জিবিজ্ঞান, এমব্রয়ডারী, ব্লকবাটিক ও হস্তশিল্প বিষয়ক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের মাঝে সেলাই মেশিন, ব্লকবাটিক উপকরণ, হস্তশিল্প তৈরীর উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৬৫০ জন মহিলাকর্মী নিজেরাই হাতের কাজের থ্রিপিচ, নকশীকাঁথা, শাড়ী, বেডশীট, পাঞ্জাবীসহ নানান রকম হস্তশিল্প পণ্য তৈরী করছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের লেখাপড়ার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য এবং স্বপ্নলোকের পাঠশালার হতদরিদ্র অভিভাবকদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তাদের তৈরী হস্তশিল্পপণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। বিক্রয়লব্ধ অর্থের লভ্যাংশ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় ব্যয় করি। এখানেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বপ্নলোকের পাঠশালার অভিভাবকগণ স্বাবলম্বী হয়েছে। ঝিকরগাছা সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাসমূহের বেকার, অদক্ষ যুব ও যুব মহিলাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিশেষ করে বেকার, অসহায়, অদক্ষ ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে ২০০৫ সাল থেকে ০৬ মাস মেয়াদী অফিস এ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেস প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ভূমি জরিপ, ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কোর্সে সর্বমোট ৩ হাজার ৮৫০ জনকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। যা দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীতে অভূতপূর্ব সাফল্য। মেঘনা খাতুন প্রতিষ্ঠিত রূপান্তর কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার মনোরম পরিবেশে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি অত্র অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সৃজনশীল, সর্বাধুনিক ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। মেঘনা ইমদাদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দিবস পালন ও সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রম, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা ও অনগ্রসর, অবহেলিত, বেকার যুব ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান, ক্রীড়া উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক চর্চা, পরিবেশ উন্নয়ন, প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়ন; নারী ও শিশুদের পাচার ও নির্যাতন প্রতিরোধ; প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন; কারিগরি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ; এইডস প্রতিরোধ প্রকল্প; ধুমপান ও মাদক বিরোধী কার্যক্রম; তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলা প্রকল্প/কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকেন।