Type to search

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটা ৫২ বছর অরক্ষিত

নড়াইল

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটা ৫২ বছর অরক্ষিত

নড়াইল প্রতিনিধি
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের
সন্তানেরা ১বছরের বেশি সময় ধরে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবের ভাতা পাননা।
স্বাধিনতার ৫২বছর পরেও অরক্ষিত বসতভিটা। নূর মোহাম্মদের বসতভিটায় একটি
রেস্টহাউজ বা বিশ্রামাগার নির্মাণ, ও স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন
দুই মেয়ে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬
সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন
নূর মোহাম্মদ। তার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ ‘নূর
মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। তবে দুই মেয়ে সিসেস সুফিয়া বেগম,মোসাঃ রোকেয়া
বেগম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ এলাকাবাসীর দাবি, নূর মোহাম্মদের বসতভিটায়
একটি রেস্টহাউজ বা বিশ্রামাগার নির্মাণের। পাশাপাশি নূর মোহাম্মদের
জীবনভিত্তিক বই-পুস্তক, ব্যবহার্য ও স্মৃতি বিজড়িত জিনিসপত্র সংরক্ষণের।
নড়াইল শহর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দূরে নূর মোহাম্মদ নগরে নির্মিত
হয়েছে-বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও
স্মৃতি জাদুঘর’। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ জাদুঘরটির উদ্বোধন করেন। এছাড়াও নূর
মোহাম্মদের বসতভিটায় নির্মিত হয়েছে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’। নড়াইল ও যশোর শহরে
নূর মোহাম্মদের সন্তানদের জন্য বাড়ি তৈরি, স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন উন্নয়ন
কাজ করেছে সরকার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো বিস্তারে ভূমিকা রাখছে
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং
কলেজটি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর ২০২১ সালের অক্টোবরে
কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। আর ২০১০ সালে স্কুলটি নি¤œ-মাধ্যমিক পর্যায়ে
এমপিওভুক্ত হয়েছে।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা জানান,এখানে আইসিটি ল্যাব নাই। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে
হলে আমাদের আইসিটি ল্যাব প্রয়োজন।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষক শিক্ষিকারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সাহসী সন্তান
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের নামে যে কলেজ ও বিদ্যালয় আছে সেগুলো
জাতীয়করণ এবং অবকাঠামো ও আইসিটি ল্যাব নির্মান করলে বীরশ্রেষ্ঠের যথাযথ
মুল্যায়ন হবে।
এলাকাবাসীরা বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটা অরক্ষিত রয়েছে।
এখানে চারপাশে সিমানা প্রাচীর ও একটি রেস্টহাউজ করলে তার স্মৃতিগুলো
দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বড় মেয়ে সিসেস সুফিয়া
বেগম বলেন, আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন আমরা গর্র্বিত। আমার মা
বেগম ফজিলাতুন্নেছা ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর মৃত্যবরন করেছেন। আমার বাবার
বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরমুক্তিযোদ্ধার দুইটা খেতাব আছে। গত বছর ১বছরের বেশি সময়
বীরশ্রেষ্ঠের বাৎসরিক (৪ভাইবোন সবমিলে) বাৎসরিক ৩লক্ষ ৬০হাজার টাকা ভাতা
পাচ্ছিনা। তার আগে ৩ বছর ধরে নিয়মিত যশোর বিজিবি রিজিওনাল অফিস আমাদেরকে
চেক দিয়েছে। আমাদের সরকার করে দেওয়া বাড়ি মেরামতের জন্য আবেদন করেছি সেটা
ও গত বছরেও মেরামতের কোন ব্যবস্থা হয়নি। হিসাব করে নিয়ে যায় কোন কাজ করে
দেয়া হয়না। জেলা পরিষদের থেকে যে বীরশ্রেষ্ঠদের জমি বা বাড়ি করে দেয় সেটা
আমাদের করে দেয়নি। আমাদের দাবি জেলা পরিষদ যেন বাড়ি করে দেয়।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ছোট মেয়ে মোসাঃ রোকেয়া
বেগম বলেন, অনেক দুরদুরান্ত থেকে অনেকে দেখতে আসেন তাই আমার বাবা দাদার
পৈত্তিক ভিটায় একটি সরকারী রেস্টহাউজ ও একটি লোক থাকলে ভালো হয়। আমার
মেয়ে জাকিয়া রুখসানা জলি বরিশাল সরকারী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ
করেছে। একটা সরকারী চাকুরী হলে ভালো হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোঃ গোলাম কবির
বলেন,আমরা নড়াইলবাসী গর্বিত যে ৭জন বীরশ্রেষ্ঠের ১জন নড়াইলের বীরশ্রেষ্ঠ
শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। এবং সারাদেশের ভীতর
মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যায় নড়াইল দ্বিতীয়। সুতরাং সরকারের কাছে দাবী
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের বসতভিটা সংরক্ষনের
উদ্যোগ নেওয়া। সেক্ষেত্রে রেষ্টহাউজ সিমানা প্রাচীরসহ যা যা করা দরকার
অনতিবিলম্বে তাই করার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স
নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মভিটা ও তার স্মৃতিসংরক্ষনে রাষ্ট্রীয় ভাবে
অনেক কাজ হয়েছে। তবে তার পৈত্তিক ভিটায় চারপাশে সিমানা প্রাচীর করা ও
ওয়াশরুম করার বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। সারা বছর যারা ভিজিটে আসেন তাদের
জন্য বসার ব্যবস্থা করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সচিব মহোদয়কে জানানো
হয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার
গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন।
এদিন পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হলেও হাতে
এলএমজি এবং আহত নান্নুকে কাঁধে নিয়ে শত্রু পক্ষের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকেন
নূর মোহাম্মদ। হঠাৎ পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে তার হাঁটু ভেঙ্গে যায়।
তবুও গুলি চালাতে থাকেন তিনি। এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নূর মোহাম্মদ
শেখ। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন
তিনি। লাল-সবুজের মাঝে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের
হৃদয়ে আজো বেঁচে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।