Type to search

নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা, পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন!!

নড়াইল

নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা, পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন!!

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা, পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে ফেসবুকে কঁটুক্তিকারী ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে নড়াইলের মির্জাপুর কলেজের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে নড়াইল জুড়ে। হয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষথেকে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । স্পর্শ কাতর এ বিষয়টি নিয়ে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাইতারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, সাম্প্রতি অভিযুক্ত ছাত্র রাহুল দেব ও  কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। যা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।  ছবিতে দেখা গেছে দুই জনের গলায় জুতার মালা পড়ানো। কয়েকজন পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনাটি এখন নড়াইলের টক অব দ্যা ডেতে পরিণত হয়েছে। পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরণের দাবি তুলছেন। কেউ কেউ প্রকৃত ঘটনার আড়াল করতে চাচ্ছেন । তবে, বিষয়টি নিয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার । কোনো ধরণের অপ্রতিকর ঘটনাকে ছাড় দেয়া হবে না বলে স্পষ্ট ভাবে ঘোষনা দিয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানাযায়, সোমবার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার্থে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিভিন্ন মসজিদ ও  মাদ্রাসার ঈমাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষেরা অংশ নেন।
সভায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বলেন , ঘটনার দিন তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সহিংসতা এড়িয়ে সবাইকে নিরাপদে বাঁচিয়ে আনা।
তারা সেটিই করেছেন ।  সভায় জানানো হয়,  তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জুবায়ের হোসেন চৌধুরীর ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর সার্বিক বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের উস্কানি তারা মেনে নিবেন না।
এ সভায় অধিকাংশ বক্তারা অভিযুক্ত ছাত্রের বিচার দাবি করেছেন। তবে আইন হাতে তুলে নিয়ে তিন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পোড়ানো এবং নিরাপরাধ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরানোর বিষয়টি নিয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। ।
তবে, কয়েক বক্তা সরাসরি বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেন। তারা আরও বলেন, তার নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক আক্তার হোসেন টিংকু। তার উদ্দেশ্য স্বপনকে সরিয়ে ওই পদ দখল করা।
এদিকে অভিযোগের তীর তোলা মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের প্রভাষক আক্তার হোসেন টিংকু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনা শুরুর আগে একটি ক্লাস নেই। পরে অপর ক্লাস নেওয়ার সময় অধ্যক্ষ আমাকে ডাকলে সেখানে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করি। এখানে অধ্যক্ষ হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। যারা এসব কথা ছড়াচ্ছেন তারা জামায়াত-বিএনপির সমর্থক।
মির্জাপুর  ইউনাইটেড কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সদর উপজেলা আ. লীগ সভাপতি অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, ঘটনার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। শুনেছি কলেজের অধ্যক্ষকে জুতোর মালা দেওয়া হয়েছে, যা  দুঃজনক। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর কলেজ বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে পরিস্থিতি বিবেচনায় ঈদের পর কলেজ খুলবে।
প্রসঙ্গত, মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে  নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে মন্তব্য করেন, “প্রনাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রী রাম”। গত ১৮ জুন রাহুল কলেজে আসার পর তার সহপাঠিরা বিষয়টি কলেজ অধ্যক্ষকে জানালে তিনি উপস্থিত  শিক্ষকদের পরামর্শক্রমে  রাহুলকে স্থানীয় বিছালী পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের ৩টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলে। একপর্যায়ে পুলিশের লাঠিচার্জ ও এলাকাবাসীর ইটপাটকেল নিক্ষেপে কলেজ শিক্ষক, পুলিশসহ সহ ১২জন আহত হয়। বিকেলে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়সহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ সময় অভিযুক্ত রাহুলকে পুলিশ আটক করে  এবং ১৯ জুন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে।