Type to search

নড়াইলের কালিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে বীরনিবাস নির্মাণকাজ বন্ধ করার অভিযোগ

অন্যান্য

নড়াইলের কালিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে বীরনিবাস নির্মাণকাজ বন্ধ করার অভিযোগ

 

নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার এস আই মো.আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে
একটি বীরনিবাসের নির্মাণ কাজ গত ৪ দিন ধরে বন্ধ করে মৃত মুক্তিযোদ্ধার
পরিবারের সাথে অশালীন আচরণসহ হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বাঐসোনা
গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলীর বিধবা স্ত্রী রেহানা পারভীনের
বাড়িতে গত ২৬ সেপ্টেম্বরের এই ঘটে। তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর ইউএনও ও
নড়াইলের পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ঘটনাটিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অস্বচ্ছল
মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্প ২ এর আওতায় রেহেনা পারভীনের নামে
একটি বীরনিবাস বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যায়
বরাদ্দ দিয়ে মেসার্স রুমা এন্টার প্রাইজকে কার্যাদেশ দেন উপজেলা প্রকল্প
বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। ঠিকাদার রেহানার নিজস্ব জমিতে নির্মাণ সামগ্রী জমা
করার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার ফুলবদিনা গ্রামের মৃত
বাবু মোল্যার ছেলে হাসিবুর মোল্যা ও গোপলগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া
গ্রামের মৃত হোসেন মোল্যার ছেলে হাবিবুর রেহানার বাড়িতে গিয়ে বীরনিবাস
নির্মাণ বাবদ ১লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা হিসাবে দাবি করলে রেহানা টাকা
দিতে অস্বীকার করেন। তখণ তাকে বীরনিবাস নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি
দেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এরপর গত ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ঠিকাদারের
শ্রমিকরা এই বীরনিবাসটির নির্মাণ কাজ শুরু করলে দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ
কালিয়া উপজেলা নড়াগাতি থানার এস আই মো.আসাদুজ্জামান ওই দুই জনকে সাথে
নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঠিকাদারের শ্রমিকদের আটকের হুমকি দিয়ে নির্মাণ
কাজ বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয় এস আই আসাদুজ্জামান মৃত মুক্তিযোদ্ধার
স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সাথে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করাসহ আশালীন আচারণ
করেন। এখানেই বিষয়টি থেকে থাকেনি ওই পুলিশকর্তা গত শুক্রবার (২৯
সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫ টায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নড়াগাতি থানায় হাজির হয়ে
তার সাথে সমাধান না করা পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশ
দিয়ে চলে যান বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেসার্স রুমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো.লিটু শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে
বলেন, পুলিশ তাঁর নির্মাণ কাজের স্থলে এসে জোর করে তাঁর শ্রমিকদের উঠিয়ে
দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় শুক্রবার বিকালে
মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে থানায় নিয়ে এস আই আসাদুজ্জামান ও তার সহযোগিদের
সঙ্গে আপোষ না করা পর্যন্ত বীর নিবাসের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার মৌখিক
নির্দেশ জারি করেন।
রেহানা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, বীরনিবাস নির্মাণের মালামাল আসতে শুরু
করার পর থেকে হাবিবুর মোল্যা ও হাসিবুর মোল্যা গত কয়েক দিন ধরে তার কাছে
১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা না দিলে সে পুলিশ দিয়ে
আমার বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে আসছিল। তারই জের ধরে এস আই
আসাদুজ্জামান ওই দুই জনের সাথে যোগসাজসে তার বাড়ির নির্মাণ কাজ আটকে দিয়ে
থানায় ডেকে নিয়ে মিমাংশার নামে তাদেরকে হয়রানি করেছে।
হাবিবুর মোল্যার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে হাসিবুর মোল্যা চাঁদা
দাবির সত্যতা অস্বীকার করে বলেন,তারা ওয়ারিশ হিসাবে জমির একটি অংশ দাবি
করেন। তাই ওই নির্মাণ কাজ ঠেকাতে তার ভায়রা হাবিবুর এস আই আসাদুজ্জামানকে
ফোনে ডেকে নেন এবং ১ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ কাজটি বন্ধ করে শালিশের
কথা বলেছে।
নড়াগাতি থানার এস আই আসাদুজ্জামন বীর নিবাসের কাজ বন্ধ করার সত্যতা
স্বীকার করে ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে আশালীন আচরণের অভিযোগ
অস্বীকার করে বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে তাই
তিনি কাজ বন্ধ করে থানায় মিমাংশার জন্য যেতে বলেছিলেন। তবে কাজটি বন্ধ
করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা ছিল না বলে জানান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মাকলুকার
চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে একটি বীর
নিবাসের কাজ বন্ধ করা ও একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের
সাথে আশোভন আচারণ খুবই দুঃখ জনক। তিনি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি
করেন।
নড়াগাতি থানার ওসি সুকান্ত সাহা বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি আগে কিছু জানতেন
না। পরবর্তীতে ইউএনওর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। বিষয়টি যথাযথ সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন।
কালিয়ার ইউএনও রুনু সাহা অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,একটি
অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।