Type to search

চুয়াডাঙ্গার আতাউরের উপর সকাল-বিকাল চলতো অমানবিক নির্যাতন

অপরাধ

চুয়াডাঙ্গার আতাউরের উপর সকাল-বিকাল চলতো অমানবিক নির্যাতন

চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু||
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের ছেলুন দোকানী আতাউর রহমান। ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়াতে গিয়ে মাফিয়াদের হাতে আটক হয়ে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করার পর অবশেষে দেশে ফিরেছে।  স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত  হওয়ার পর  নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানায় মামলা করা হয় এ দেশীয় দলালদের বিরুদ্ধে। মামলা করার পর গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে।
জানা গেছে, দালালের খপ্পরে পড়ে হারিয়েছেন জীবনের শেষ পুঁজি। স্ত্রী আর দুই মেয়ে নিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আতাউর। প্রবাসে একটু বেশি আয় করে সংসার সচ্ছল করতে পাড়ি জমান উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত লিবিয়ায় যান চুল কাটার সেলুনে কাজ করার উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশী দালালের প্রতারনার স্বীকার হয়ে মেলেনি কাজ উল্টে বাংলাদেশী দালাল আর লিবিয়ার মাফিয়ারা মিলে আটকে রেখে চালিয়েছেন লোমহর্ষক নির্যাতন। পরিবারের কাছ থেকে নিয়েছেন মোটা অংকের মুক্তিপণ। দালালের প্রতারণায় পড়ে ২৮দিন লিবিয়ার কারাগারেও জেল খাটতে হয়েছে আতাউরকে।
ফিরে এসে ভূক্তভোগী আতাউর সেই দুঃস্বপ্নের দিনের লোমহর্ষক গল্পই শুনিয়ে আতাউর বলেন, লিবিয়া ও বাংলাদেশের দালালদের জিম্মি দশায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল নিয়ম করে নির্যাতন করা হতো। যতদিন টাকা পরিশোধ করা না হতো ততদিন নির্যাতন করতো। ঠিকমত খাবার ও পানি দেওয়া হতো না। এক পাশেই শুয়ে থাকতে হতো। অন্যদিকে তাকালেই নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যেতো।
ভুক্তভোগী আতাউরের ছোট মেয়ে লিজা খাতুন বলেন, আমার আব্বু ফিরে আসাতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। আব্বু ওখানে জিম্মি থাকা অবস্থায় অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের কাছের ফোন করে বাবাকে নির্যাতন করা হয় আর সেই নির্যাতন আমাদেরকে শোনানো হতো। আর চাইতো মুক্তিপণ। এভাবে সকাল বিকাল নিয়ম করে নির্যাতন করা হতো। আমরা তখন ভেঙ্গে পড়েছিলাম। ভাবিনি আবার ফিরে পাবো।
তিনি আরও বলেন, কেউ যেন যাচাই না করে কোন ভুয়া এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ না যায়। দালালের প্রতারণার স্বীকার থেকে রক্ষা পেতে যাচাই বাঁছাই করে সঠিক নিয়মে সবাই বিদেশ যাবেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছিল। আতাউর রহমান নামে একজনকে লিবিয়ায় মাফিয়াচক্র আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে এবং পরিবারের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। এরই পরিপেক্ষিতে আমরা ভিকটিমের এলাকা জীবননগর থেকে শামীম শেখ ও নবাব আলী নামের দুইজনকে আটক করি। তাদের আটকের পর আমরা মূল ঘটনাটা জানতে পারি। এর মধ্যে পরিবার থেকে মুক্তিপণের সাড়ে চার লাখ টাকা তাদের দেওয়া একটি একাউন্টে দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত করে আমরা সেই একাউন্টটি আদালতের নির্দেশে ফ্রিজ করি। আর আটককৃত দালালদের মাধ্যমে ওখানকার দালালদের সাথে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সক্ষম হই। গত ১১ই মার্চ আমরা তাকে দেশে আনতে সক্ষম হয়েছি। ভিকটিম আতাউর সুস্থ আছেন। ভিকটিম চাইলে আদালতে আবেদন করে টাকা ফেরত পাবে।
দালালের প্রতারণার শিকার থেকে রক্ষা পেতে যাচাই বাছাই করে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে সঠিক নিয়মে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।