Type to search

ভবদহবাসীকে জিম্মি করে পানিউন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ধান্দা করছে

যশোর

ভবদহবাসীকে জিম্মি করে পানিউন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ধান্দা করছে

কামরুল ইসলাম, নওয়াপাড়া অফিস :
ভবদহ এলাকার ১০ লক্ষাধিক জনগণকে জিম্মীকরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ধান্দা করছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এমনটি মন্তব্য করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের ভবদহ অঞ্চলে সেচ প্রকল্পের নামে ৪৫ কোটি টাকা অনুমোদনের চেষ্টা করছে। বর্তমানে ছোট আকারের সেচ প্রকল্প চালু আছে। একাজে বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু জল নিষ্কাশন হচ্ছে না। বর্ষকাল এলেই শুরু হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা বাড়ি ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি সব পনিতে ডুবে থৈ থৈ করে। মৃতদেহ কবর বা সৎকার করার জায়গা পর্যন্ত থাকে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বিগত দিনে নদী খনন করে এ অঞ্চলের নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে।কিন্তু নদীর নাব্যত ফেরাতে পারেনি। গত ১৯৯৭ সালে এলাবাসী হরি নদীর ভরতভায়না বিলে উন্মুক্ত জোয়ারাধার করে শুকনো নদী ৪০ থেকে ৫০ ফুট নাব্যতা ফিরিয়ে আনে। তখন এলাকাবাসীর উন্মুক্ত জোয়ারাধারকে মডেল করে পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পিত জোয়ারাধার(টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিল খুকশিয়ায় টিআর এম চালু থাকায় এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত ছিলো। পরর্বতীতে পরিকল্পনা ছিলো বিল কপালিয়ায় টিআর এম বাস্তবায়ন করার। কিন্তু বিল কপালিয়া এলাকার জনগন আন্দোলন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে। তাদের মারধর করে ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর থেকে টিআরএম কর্মসূচি স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা খরচ করে নদী খলন প্রকল্প চলছে। কিন্তু নদী নাব্য হওয়ার পরির্বতে ভরাট হচ্ছে। এখন ভবদহের শ্রী হরি নদী মৃত্য প্রায়।
এঅবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বিএডিসির মাধ্যমে দুই কোটি টাকা খরচ করে সেচ প্রকল্প চালু করে।গত দুই বছর ধরে ভবদহের ২১ ভেন্টর উপর ১৯টি পাম্প দিয়ে এ সেচ কাজ চলছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা সুন্দলী গ্রামের কানু মন্ডল জানান, সেচ দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না প্রতিবছর বাড়ি ঘর ডুবে যাচ্ছে। পানি উন্নয় বোর্ড আরো বেশি পাম্প বসিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের ধান্দা করছে। তিনি আরো জানান অতীতে এ ধরনের প্রল্পের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। তিনি মন্তব্য করেন এখানে টিআরএম ছাড়া বিকল্পে কিছু কাজে আসবে না।
এ ছাড়া গত কয়েক দিন আগে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি শ্রী নদীর তীরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান,ভবদহ অঞ্চলের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে পানি সেচ প্রকল্প গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকা তছরূপ করার পাঁয়তারা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই জনপদের মানুষের শ’ শ’ কোটি টাকার ফসল, বসতবাড়ি নষ্ট ও মানবিক বিপর্যয়ের স্থায়ী ব্যবস্থা করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গত মৌসুমে সেচের মাধ্যমে ব্যাপক ফসল উৎপাদনের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল হয়নি। বর্তমানে তারা ৪৫ কোটি টাকা খরচ করে আরো বড় করে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাতিলের প্রস্তাব দিলেও তা অনুমোদনের পাঁয়তারা করছে সংশ্লিষ্টরা।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে স্রেফ ব্যবসা করার জন্য। এই ৪৫ কোটি টাকা ভবদহ এলাকার মানুষের কোনো কাজে আসবে না। টিআরএম ছাড়া আর কোনো প্রকল্প এখানে নিয়ে কাজ হবে না বলে দাবি করেন।
সংগঠনের সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল বলেন, সরকার ভবদহ অঞ্চলের মানুষকে ডুবিয়ে মারার স্থায়ী ব্যবস্থা করার নীতি গ্রহণ করেছে। যে কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁচানোর পরিবর্তে নদীকে হত্যা করছে। সেইসাথে হরি নদী নাব্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলা হলেও সেটি মিথ্যা বলে সরজমিনে দেখা যায়। তাছাড়া এখনো বিলগুলো পানির নীচে। অনেক স্কুল ও বসতবাড়ি জলাবদ্ধ।
সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের নামে বছরের পর বছর তালবাহানা করে চলেছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও টিআর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এখন আবার নতুন করে ৪৫ কোটি টাকা নষ্টের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গবেষণা করেই ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো ভুল নেই।