ফজর থেকেই হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মুসল্লি-আলেমদের ভিড়
ডেস্ক রিপোর্টঃ চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের জানাজা আজ শনিবার দুপুর ২টায় তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। আজ শনিবার ফজরের পর থেকেই হাজার হাজার আলেম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছেন। কুমিল্লা, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বহু কওমী মাদ্রাসা থেকে বিপুল শিক্ষার্থী ও আলেমরা জানাজায় অংশ নিতে আসছেন।
ঢাকা থেকে রাত ২টায় সড়ক পথে রওনা হয় আল্লামা শফীর মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আজ শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ তাঁর মরদেহ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে পৌঁছায়।
হাটহাজারী মাদরাসার দক্ষিণ গেটে শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ছাত্রদের প্রিয় হুজুরকে দর্শনের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হবে। জোহরের নামাজের পর মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল জামেয়ার গোরস্থানে দাফন করা হবে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরকে।
গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় আহমদ শফীর বড় ছেলে ও রাঙ্গুনিয়ার পাখিয়ারটিলা কওমী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি বলেন, ‘উনাকে (আহমদ শফী) রাতেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। শনিবার বাদ জোহর মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মাদ্রাসার কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।’
পরে দাফনের কর্মসূচি জানিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন আহমদ শফীর ছোট ছেলে আনাস মাদানী। তিনি ও তাঁর পরিবার আহমদ শফীর জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আহমদ শফী মারা যান। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘বড় হুজুর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আহমদ শফী বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হেফাজতের আমিরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাঁকে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠের পাশে অবস্থিত আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তির কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে শুরা কমিটির সভায় মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও শুরা সভার প্রধান হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছিল।
আল্লামা আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মরহুম বরকত আলী ও মায়ের নাম মরহুমা মেহেরুন্নেছা।
আহমদ শফী ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির নির্বাচিত হন। তিনি ইসলামী শিক্ষালাভের উদ্দেশে ১০ বছর বয়সে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায়। সেখান থেকে হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৪১ সালে চলে যান ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায়। সেখানে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর প্রেসিডেন্ট আল্লামা সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানীর কাছে আধ্যাত্মিক শিক্ষালাভ এবং তাঁর খেলাফতপ্রাপ্ত হন।
ভারত থেকে দেশে ফিরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৮৬ সালে এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব নেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০০৮ সালে আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আল্লামা আহমদ শফি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর লেখা ‘হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব’, ‘ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা’, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’, ‘হাদিসসমূহের ব্যাখ্যা’সহ ২২টি প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছেন, দেশ-বিদেশে ৫০ লাখের বেশি মুরিদ ও ভক্ত রয়েছে আল্লামা আহমদ শফীর।