Type to search

বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি দখল

জাতীয়

বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি দখল

অনলাইন ডেক্স :

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায় ফুলজোর নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ২২ মার্চ নদের তীরবর্তী ধানগড়া এলাকায়
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায় ফুলজোর নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ২২ মার্চ নদের তীরবর্তী ধানগড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ পৌরসভায় ফুলজোর নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী বলেন, সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের আওতায় নিতে শুরু করে।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সহায়তা চেয়ে ২০ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বলেন, সরকার যেখানে গৃহহীন মানুষকে গৃহ তৈরি করে দিচ্ছে, সেখানে তাঁদের গৃহহারা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাপ-দাদার ভিটে অনেকখানি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট অংশ উন্নয়নের নামে কেটে তাঁদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গত সোমবার নদী–তীরবর্তী ধানগড়া ও রণতিথা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর বাঁ তীরের এক পাশ থেকে কাজ করা হচ্ছে। বেশ কিছু বসতভিটার অংশবিশেষ তীর সংরক্ষণের কাজের জন্য কেটে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ও অভিযোগ সূত্র জানা যায়, রায়গঞ্জ উপজেলায় শতবছরের পুরোনো ধানগড়া গ্রাম ও হাটবাজার ফুলজোর নদীর অব্যাহত ভাঙনে আজ হুমকির মুখে। এ কারণে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও বিভাগে আবেদন করে আসছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে নদীর বাঁ তীর ভাঙনরোধে তীর সংরক্ষণ ও নদীশাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদীতীরের অনেক বাসিন্দা ইতিমধ্যে তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যবহারের জন্য নিজেদের জমির অংশও দিয়ে দিয়েছেন।

এলাকাবাসী বলেন, কাজ শুরু হওয়ার পর তাঁদের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলতে শুরু করেছে পাউবো। সম্প্রতি পাউবোর পক্ষ থেকে লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে নদীতীরের বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রায় ৩০টি পরিবারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অথচ আরএস খতিয়ানভুক্ত এসব জমি তাঁরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। পাউবোর পক্ষ থেকে এমন চিঠি পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধানগড়া এলাকার বাসিন্দা ইমরুজ হোসেন। পেশায় ভাড়ার মোটরসাইকেল চালক। মাত্র দেড় শতক জায়গায় একটি মাত্র ঘরে দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে কোনোমতে বসবাস করেন। কয়েক দিন আগে তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য তাঁর বাড়ির অনেকখানি জায়গা দখলে নিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন। এর মধ্যে ১০ মার্চ পাউবোর লোকজন এসে তাঁর বসতঘরের প্রায় পুরোটাই ভেঙে ফেলার জন্য লাল দাগ দিয়ে যান। একই সঙ্গে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে তাঁদের। চিঠিতে বলা হয়েছে, তাঁর বাড়িটি নদীর ঢালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। যা নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার শামিল ও ঝুঁকিপূর্ণ।

রণতিথা এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ বলেন, তাঁরা নদীর ঢালের ওপর কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেননি। এসব জমি তাঁরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। এ জমির জন্য তাঁরা খাজনাও পরিশোধ করছেন। নদীভাঙনের কারণে তাঁদের সম্পত্তি কমতে কমতে আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। অনেকের শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু অবশিষ্ট রয়েছে। সেই জমিও নিয়ে নিচ্ছে পাউবো।

স্থানীয় লোকজন বলেন, বর্তমানে মূল বাড়ির অংশের জমি কেটে সেই মাটি দিয়ে নদীতীরের ঢাল করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।

বাঁধ নির্মাণের জন্য স্থানীয় লোকজনের বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলার অভিযোগের বিষয়ে পাউবোর স্থানীয় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবু জোবায়ের বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী বিদেশে থাকায় আমরা অভিযোগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। তবে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে তাঁদের পুনর্বাসন করা হবে।’

সূত্র : প্রথম আলো :