Type to search

৫৫ হাজার তাল বীজ রোপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন

অভয়নগর

৫৫ হাজার তাল বীজ রোপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন

অভয়নগরে চিত্তরঞ্জনের জীবনব্যাপী তাল গাছ রোপনের ঘোষণা

কামরুল ইসলাম
নাম তার চিত্তরঞ্জন দাস, বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী(দক্ষিণ) গ্রামে তার জন্ম হয়। চিত্তরঞ্জন দাসের মূল পেশা কৃষি। তিন একজন বর্গা চাষী। কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি তাল গাছের ব্যবসা করনে। ত্রিশ বছর ধরে তিনি এলাকার গ্রাম থেকে তালগাছ কিনে দেশের দূর -দূরান্তে সরবরাহ করেন ও স্থানীয় বাজারে তাল কাঠ বিক্রি করেন।তাল গাছের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি ২০০৮ সাল থেকে সড়কের পাশে ও সরকারি পতিত জমিতে তালের বীজ রোপন শুরু করেন। প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে তিনি নিজ অর্থ ব্যয় করে এলাকা থেকে তাল বীজ সংগ্রহ করে তা নিজ হাতে ও মজুর কিনে রোপন করেন।

এ পর্যন্ত তিনি ৫৫ হাজার তালবীজ রোপন করেছেন। তার রোপনকৃত তালগাছ এখন দৃশ্যমান। সম্প্রতি তার জনহিতৌসী কর্মকান্ডের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দূর -দূরান্ত থেকে অনেকে আসছেন তার তালগাছ দেখতে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তার তাল সা¤্রাজ্যের খোঁজ নিতে শুরু করেছেন। গত শুক্রবার(১/৯/২৩) স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ তার রোপনকৃত তালগাছ ও বীজ রোপন কর্মকান্ড পরিদর্শনে উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামে ছুটে আসেন। তিনি চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে কয়েকটি বীজ রোপনও করেন। এ সময় এক সাক্ষাতকারে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, চিত্তরঞ্জন দাস দেশের জন্য এক মহাৎ উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বজ্রপাত রোধে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে তিনি জানান। তিনি সেখানে উপস্থিত লোকজনদের চিত্তরঞ্জন দাসকে সহযোগিতা করার আহবান করেন। পরে তিনি চিত্তরঞ্জন দাসের রোপনকৃত তাল গাছ পরিদর্শণ করে সন্তষ্ট্য প্রকাশ করেন।
এক সাক্ষাতকারে চিত্তরঞ্জন দাস জানান, এ পর্যন্ত তিনি ৫৫ হাজার তালের বীজ রোপণ করেছেন। তার রেপন করা তালগাছ এখন দৃশ্যমান। দু‘এক বছর পরেই অনেক গাছে ফল ধরবে। এত গাছ থাকতে তিনি তালগাছ লাগানে কে কেন গুরুত্ব দিয়েছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাল গাছের কোন কিছুই ফেলনা নয়, পাকা তাল, চোখ তাল, তালের আঁটির শাঁশ, তালের রস-গুড় গ্রামবাংলার মানুষের প্রিয় খাবার। তাছাড়া তাল পাতার পাখা, পাতা ও ডাটার জ¦ালানী গ্রামে বেশ গুরুত্ব বহন করে। সর্বপরি বাড়ি ঘর বানানোর কাজে তাল কাঠের জুড়ি নেই। তার দৃষ্টিতে উঁচু তালগাছ না থাকায় বাবুই পাখিরা আর বাসা বাঁধেনা। এসব দিক বিবেচনায় তিনি তাল সা¤্রাজ্য বিস্তারের সংকল্প করেছেন। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন তত দিন তালবীজ রোপন করে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
উপজেলার ধোপাদী গ্রামের সড়কগুলোতে গেলে দেখা যায় তার লাগানো সারি সারি তালগাছ মাথা উঁচু করে শোভা বর্ধণ করছে। এছাড়া, বুইকারা, সরখোলার, সড়াডাঙ্গা, ভবদহের চোমরডাঙ্গা সহ এলাকার প্রায় ৪০টি সড়কে রয়েছে তার রোপন করা তাল গাছ। অনেক স্থানে অসাধু লোকজন তার তাল চারা কটে ফেলে ক্ষতি করেছে।
চিত্তরঞ্জন দাস জানান, বিভিন্ন কারণে অনেক গাছ বড় হতে পারেনি। গাছ একটু বড় হলেই অনেকে ডাল-পাতা ছেঁটে নিয়ে যায়। তালপাখা বানানোর জন্য এক শ্রেণির অসাধু লোক পাতা কেটে নিয়ে যায়। আমি একদিন থাকব না, কিন্তু এই তালের চারা আমার স্মৃতি বহন করবে এমন কামনায় তিনি এলাকায় এ তাল সা¤্রাজ্য বিস্তার করে চলেছেন। এ বছর তিনি ২০ হাজার তালের বীজ কিনেছেন। প্রতিদিন তিনি বীজগুলো রোপন করে চলেছেন।
ধোপাদী গ্রামের আয়ুব খান জানান, আমরা বিলে কাজ করতে যাই। পরিশ্রম হলে তার রোপন করা তালগাছের ছায়ায় বিশ্রাম নি।
ধোপাপাড়া গ্রামের হরে কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, চিত্ত দাসের লাগানো সারি সারি তালগাছ দেখে আমার খুব ভাল লাগে। তাকে সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তার দাবি করেন তিনি।