Type to search

বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষকদের সিকি বোনাসের অবসান হবে কবে?

শিক্ষা

বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষকদের সিকি বোনাসের অবসান হবে কবে?

বিলাল হোসেন মাহিনী
দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানের পেশা শিক্ষকতা। এমনকি আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানী দুটোই উন্নতমানের। ব্যতিক্রম আমরা। আমরা আমাদের শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে হস্ত সংকুচিত করে রাখি। একজন (বিএড বিহীন)  মাস্টার্স পাশ এমপিও শিক্ষকের প্রারম্ভিক বেতন স্কেল মাত্র ১২ হাজার ৫শ টাকা। ভাবতেও অবাক লাগে এদেশের একজন শিক্ষকের সম্মানী একজন ৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর চেয়ে কম। শুধু কমই নয়, তাদের নেই কোনো পিএফ/গ্রাচুইটি, নেই যথার্থ বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা। শিক্ষকদের সম্মান প্রদানে রাষ্ট্র ও সমাজ কতটুকু ভূমিকা রাখছে তা বুঝা যায় প্রতিবছর ঈদ-পূজার সময়। ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ ও উৎসব। কিন্তু সেই আনন্দে ভাটা পড়ে এ দেশের বেসরকারি (এমপিও) শিক্ষক সমাজে। কেননা, তাঁরা যে ঈদ বোনাস পান, তা দিয়ে একটি পরিবারতো দূরের কথা; একজন ব্যক্তির ঈদ বা পূজোর কেনাকাটা করাও দুঃসাধ্য। পরিচিত একজন শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার ছাত্ররা আজ কেউ সচিব, উপ-সচিব, ডাক্তার, সরকারি-বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা। তারা আমার ছাত্র হয়ে ঈদ-পূজায় শতভাগ (পূর্ণাঙ্গ) উৎসব ভাতা পেয়ে থাকে। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, আমরা তাদের শিক্ষক হয়েও ২৫% উৎসব ভাতা পেয়ে থাকি। বলতো বাবা, (স্তর ভেদে) এই তিন থেকে ছয় হাজার টাকায় শিক্ষকগণ কীভাবে ঈদ-পূজা উদযাপন করবে? এই সামান্য পয়সায় ছেলে-মেয়ের পোশাক কিনবো, নাকি বাবা-মা-স্ত্রী’র? আর ঈদ বাজারইবা করবো কীভাবে? আর কুরবানী করার কথা তো ভাবাই যায় না।’
এটা ঠিক, বিগত দেড় যুগে দেশের জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে বহুগুণ। দেশ উন্নত হচ্ছে, বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। শিক্ষায়ও বরাদ্দ বেড়েছে, বে-সরকারী শিক্ষকগণ ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতাসহ কিছু সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছেন বর্তমান সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু বিগত ১৮ বছর ধরে চালু থাকা বেশিকদের সিকিভাগ উৎসবভাতা শতভাগে উন্নীত হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অধিকিন্তু, সরকার ও শিক্ষা প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির উদাসীনতায় পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষক পরিবারের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। কেননা, তাদের উদাসীনতায় বিগত ১৮ বছর ধরে বে-সরকারী শিক্ষকগণ মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। যেখানে গেল দু’বছরে শুধু স্বস্থ্যখাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে, সেখানে মাত্র ৫-৬’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি (পূর্নাঙ্গ উৎসব ভাতা) প্রদানে আর্থিক সক্ষমতার দোহাই দেয়া হচ্ছে সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে!
প্রকৃতপক্ষে, যারা বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে চায়, যারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে দিতে চায়, শিক্ষা বান্ধব নয় বলে প্রচার করতে চায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, তারাই শিক্ষকদের শতভাগ উৎসবভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতাসহ জাতীয়করণে বড় বাধা বলে মনে করেন বেসরকারী শিক্ষকসমাজ। উল্লেখ্য, বর্তমানে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীগণ জাতীয় বেতন কাঠামোর মধ্যে থেকেই শতভাগ বেতন-ভাতাদি, সরকারী নিয়মেই বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন, তবে উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্য কেনো? উল্লেখ্য, সদ্য যোগদান করা একজন সহকারি শিক্ষক (বিএড বিহীন) উৎসব ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকেন, মাত্র তিন হাজার টাকা। অপরদিকে একজন বিএড সম্পন্ন শিক্ষক বোনাস পান মাত্র ৪ হাজার টাকা। আর ৯ম গ্রেডের একজন প্রভাষক বা সিনিয়র শিক্ষক বোনস পান মাত্র ৬ হাজার টাকা। তো এই ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা বোনাস পেয়ে কীভাবে শিক্ষকগণ ঈদ-পূজায় উৎসব করবেন?
বাঙ্গালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। সব স্বপ্নের মূলেই কিন্তু শিক্ষা আর শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, এই শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরীর কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক, অথচ শিক্ষক সমাজকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করে, তাদের সামাজিক মর্যাদা ভুলুন্ঠিত করে, শিক্ষক সমাজকে সাধারণ জনগণের নিকট উপহাসের পেশা হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাই শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার (শতভাগ উৎসব ভাতা, সরকারি নিয়মে চিকিৎসা ভাতা ও জাতীয়করণসহ অন্যান্য দাবি) বাস্তবায়নে সরকারের সুদৃষ্টির প্রত্যাশা জাতি গঠনের কারিগরদের।