Type to search

বিশ্বনবী’র (সা.) ভবিষ্যৎ বানী : যা ঘটবেই

যশোর

বিশ্বনবী’র (সা.) ভবিষ্যৎ বানী : যা ঘটবেই

 

বিলাল হোসেন মাহিনী
আল্লাহর রাসুল, আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) কতোটা দূরদর্শী ছিলেন,তার অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর বহুসংখ্যক ভবিষ্যৎ বানীর মাধ্যমে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সহীহ হাদিসের মাধ্যমে এখন থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে জানিয়েছেন, কিয়ামতের পূর্বে মহামারি আসবে, একটার পর একটা আযাব-গযব আসবে, একের পর এক ভূমিকম্প আসবে। জমিনটা সংকুচিত হবে। সময় সংক্ষিপ্ত হবে। এক শ্রেণির শাসক দেশের (জনগণের) সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি মনে করবে। আমানতের খেয়ানত করা হবে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আসুন, নবীজি (সা.) এর আরও কিছু ভবিষ্যৎ বানী জেনে নিই। মেশকাত শরীফের কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে রাসুলুল্লাহ’র কিছু ভবিষ্যৎ বানী বর্ণিত হয়েছে, যার সারাংশ হলো, শেষ যামানায় ‘দাসী (মহিলা) তার মনিবকে জন্ম দিবে। জুতাহীন, বস্ত্রহীন (গরিব) মানুষ জনগণের নেতা হবে, আর (নিঃস্ব) রাখালরা উচ্চ দালান নির্মানে পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে।’ (সহীহ মুসলিম) হযরত সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘একদল মুসলিম মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়ে মূর্তিপূজা করবে। নবীজি সা. আরও বলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে আমার পর ত্রিশ জন নবুয়তের দাবি করবে।’ (তিরমিযি ২২১৯)
ইলম (জ্ঞান) উঠে যাবে :

‘আল্লাহ তায়ালা আলেমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) তুলে নেবেন।’ (সহীহ বুখারি-১০০) অন্য হাদিসে এসেছে, বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের পূর্বে ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হবে। মুর্খতা-অজ্ঞতার সয়লাব হবে।’ (সহীহ বুখারি-৭০৬২) যিনা-ব্যভিচার (পরকীয়া) বৃদ্ধি পাবে। মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে। পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে নারীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। (সহীহ বুখারি-৫২৩১) নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আদম সন্তানকে যিনার পরীক্ষা দ্বারা পরীক্ষা করবেন। (বুখারি-৬৬১২) আর কিয়ামতের পূর্বে নানাভাবে যিনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে। মানুষ চোখ, হাত, পা এবং লজ্জাস্থান দ্বারা যিনা করবে। শুধু তাই নয়, ফেতনা-ফ্যাসাদ, সন্দেহ-অবিশ্বাস এতোটাই বৃদ্ধি পাবে যে, ‘কোনো ব্যক্তি সকালে মু’মিন থাকলে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে।’ (জামে তিরমিযি) নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের পূর্বে মানুষের আকৃতির পরিবর্তন করা হবে।’ (তাবারানি- ৫৮১০)

রসুলে আকরাম (সা.) বলেন, (কিয়ামতের পূর্বে) আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু মানুষের আবির্ভাব ঘটবে যারা যিনা-ব্যাভিচারকে হালাল মনে করবে। পুরুষেরা রেশমি পোশাক পরিধান করা হালাল মনে করবে। মদপানকে মানুষ হালাল মনে করবে। কিছু মানুষ ঢোল-তবলা (বাদ্যযন্ত্র) হালাল মনে করবে। (সহীহ বুখারি-৫৫৯০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ দ্বীন (ইলম) শিখবে দুনিয়া পাওয়ার জন্য।’ অর্থাৎ দুনিয়ার আরাম-আয়েশের জন্য। ‘মানুষের দুনিয়ার প্রতি মহব্বত ও মৃত্যুর প্রতি অনিহা বৃদ্ধি পাবে।’ (আবু দাউদ-৪২৯৭) তনি আরও বলেন, ‘লোকেরা পৃথিবীর সম্পদের বিনিময়ে স্বীয় দ্বীন ও ঈমান বিক্রি করে দিবে।’ (জামে তিরমিযি-২১৯৭) সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি সেই আল্লাহার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, কিয়ামত সেই সময় পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না- হিংস্র পশু মানুষের সাথে কথা বলবে। মানুষের চাবুকের গিট ও জুতার ফিতা তার সাথে কথা বলবে। আর মানুষের উরু (রান) তাকে তথ্য জানাবে, তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী (কার সাথে) কী কী কথা বলেছে এবং কী কী কাজ করেছে। (সুনানে তিরমিযী-২১৮১)
সময় দ্রুত ফুরোবে :
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) নবী (সা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের আগে পূর্বে সময় দ্রুত অতিক্রম করবে। মানুষ কম আমল করবে, কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে, ফিতনা (গোলযোগ, বিশৃঙ্খলা) বেড়ে যাবে, হারজ বৃদ্ধি পাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল হারজ কী? তিনি বললেন, ব্যাপকহারে হতাহত হওয়া। (সহীহ বুখারী-৭০৬১) নবী করীম (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের পূর্বে হঠাৎ মৃত্যুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।’ (তাবারানি) তিনি আরও বলেন, ‘কিয়ামতের পূর্বে ভূমিকম্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।’ (সহীহ বুখারি, কিতাবুল ইস্তেসকা) ভবিষ্যৎ বানীতে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জীবনে এমন একটি যুগ আসবে তখন কুরআন পাঠ বেড়ে যাবে, দ্বীন বোঝার মত মানুষ কম হবে।… তারপর এমন একটি সময় আসবে যখন মুনাফিক, ফাসিক (পাপাচারী) ও মুশরিকরা মুমিনদের সঙ্গে ধর্মতত্ব নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে।’ (সুনানে আল মাদারাক-৪/৫০৪ পৃষ্ঠা)
মসজিদ সুসজ্জিত হবে :

সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘঠিত হবে না যতক্ষণ না মানুষ মসজিদগুলোর সুসজ্জিত করার ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। (সহীহ ইবনে খুযায়মাহ- ২/২৮২) রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো জাতির পাপ বেড়ে যায়, তখনই সমাজের মসজিদগুলো সুসজ্জিত করা হয়। আর দাজ্জালের আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে না আসা পর্যন্ত মসজিদগুলো সুসজ্জিত করা বন্ধ হবে না। (আসসুনানুল ওয়াহিদাতু ফিল ফিতান- ৪/৮১৯) মহানবী (সা.) ভবিষ্যৎ বানী করে বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)

কলম (সংবাদ মাধ্যম) বাড়বে :
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের পূর্বে ‘কলমের বিজয় হবে।’ (মুসনাদে আহমদ) এখানে কলমের বিজয় অর্থ হলো, নতুন নতুন প্রচার মাধ্যমের উদ্ভব হবে। যেমন- টিভি, মোবইল, ডিজিটাল নানা ডিভাইস ইত্যাদি। ভবিষ্যৎ বানী করতে গিয়ে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না, যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে।’ অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ ধনী হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম-২২২৯) এক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের পূর্বে মানুষের মধ্য থেকে যখন আমানতদারিতা উঠে যাবে। সহীহ হাদিস থেকে আরও কিছু ভবির্ষৎ বানী জানা যায়, সেগুলো হলো- (কিয়ামতের পূর্বে) লোকেরা কাজকর্মে হালাল-হারামের তোয়াক্কা করবে না। স্বামী তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে। পুরুষ নারীর বেশভূষা গ্রহণ করবে। নারী পুরুষের পোশাক পরিধান করবে। মহিলারা এমন পোশাক পরবে, যে পোশাক থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে উলঙ্গ মনে হবে।’ (সহীহ মুসলিম)
পারিবার ভেঙ্গে যাবে :
রাসুলুল্লাহ’র (সা.) ভবিষ্যৎ বানীর মধ্যে আরও রয়েছে, সন্তান বাবা-মাকে কষ্ট দেবে। বন্ধুকে আপন (কাছের) মনে করবে, পিতা ও রক্তের আত্মীয়কে দূরে ঢেলে দিবে। অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করবে। মিথ্যা সাক্ষ্য বেড়ে যাবে। মানুষ সত্য গোপন করবে। (মুসনাদে আহমদ-৬/৩৮৭০) সমাজ ও মসজিদের নেতা হবে ফাসেক (পাপাচারী) মূর্খরা। বড় বড় নেতারা হবে দুঃশ্চরিত্র ও লম্পট। আর সাধারণ মানুষ তাদেরকে শুধুমাত্র প্রাণ ভয়ে সম্মান করবে। বাদ্যযন্ত্র, নায়ক-নায়িকা ও গায়ক-গায়িকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মাদকের সয়লাব শুরু হয়ে যাবে। মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদেরকে গালি দিবে। ভূমিধ্বস ও অগ্নিবায়ু আসবে। দাজ্জাল  ইয়াজুজ-মাজুজ আসবে। ইমাম মাহদী ও হযরত ঈসা আ. এর আগমন ঘটবে। হত্যা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি নিহত ব্যক্তি জানবে না কেনো তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যাকারী জানবে না কেনো সে নিহত ব্যক্তিকে হত্যা করলো। সুদ-ঘুষের লেনদেন বৃদ্ধি পাবে। মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাস কমে যাবে। রাসুল (সা.) বলেন, মানুষ (বয়সের শুভ্রতা ঢাকতে) কালো খেজাব (কলপ) ব্যবহার করবে। (আবু দাউদ-৪২১২) নবী (সা.)বলেন, শেষ যামানায় লোকেরা শুধু পরিচিতদেরকে সালাম দিবে। (মুসনাদে আহমদ) ইত্যাদি, এমন বহু বিষয়ে আল্লাহর রাসূল (সা.) ভবিষ্যৎ বানী করে উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন।