Type to search

পিতার পা কেটে ফেলার পর সংসার চালতে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেছে শিশু মুর্শিদা

অভয়নগর

পিতার পা কেটে ফেলার পর সংসার চালতে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেছে শিশু মুর্শিদা

কামরুল ইসলাম
গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত পিতার দুই পা কেটে ফেলার পর সাত জনের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে ১০ বছর বয়সী শিশু মুর্শিদা খাতুনকে। আর্থিক সাহায্যের আশায় সে পিতাকে নিয়ে ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালিয়ে দূর – দূরান্তে ছুটে চলেছে।
শনিবার দুপুরে অভয়নগন উপজেলার ধোপাদী নতুন বাজারে দেখা মেলে ক্ষুদে ওই ভ্যান চালক মুর্শিদা খাতুনের সাথে। সে ভ্যানের হাতল ভালকরে ঠাঁই পাচ্ছে না, অনেকটা বাঁকা হয়ে নাগালের মধ্যে হাতল টেনে ধরে ভ্যান চালাতে হচ্ছে। ভ্যানের উপরে বসে আছে তার দুই পায়ের হাটু পর্যন্ত কেটে ফেলা ৩৩ বছর বয়সী পিতা তৌহিদুল ইসলাম, পিতার এক পাশে মা তাসলিমা খাতুন(৩০) মায়ের কোলে ১১ মাস বয়সী বোন তাসফিয়া ও পিতার কাছে বসে আছে মুর্শিদার সাত বছর বয়সী তৃতীয় নাম্বর বোন তাসমিয়া (৭)। এ ছাড়া মিম নামে ১৫ বছর বয়সী তার আরো একটি বোন আছে। অভাবের তাড়নায় তাকে কিছু দিন আগে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা চিকিৎসা ও সংসার চালানোর জন্য এলাকার দোকান-পাট ও মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্যর জন্য হাত পাতছেন।
এক সাক্ষাতকারে মুর্শিদার পিতা তৌহিদুল ইসলাম জানান, তার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার রামন্গর ইউনিয়নের চাউলিয়া গ্রামে। রাজ মিস্ত্রীর কাজ করে অনেক সুখে তার সংসার চলতো। চার বছর আগে একদিন কাজ করার সময় তার দুই পায়ে উপর থেকে ইট পড়ে। এতে তার দুই পয়ের পাতা থেতলে যায়। সেই থেকে সে অসুস্থ্য হয়ে নানা রকম চিকিৎসা নিতে থাকে। চিকিৎসায় একটু সুস্থ্য হলে সে সহজ কাজ হিসাবে ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালাতে শুরু করে। কিছু দিন ভ্যান চালানোর পর আবার তার পায়ে ব্যাথা শুরু হয়। ক্রমে তার পায়ে প্রচন্ড যন্ত্রনা হতে থাকে। রাতে তার চিৎকার চেচা-মেচি শুনে পাড়ার লোকের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে নিজের পা নিজেই কেটে ফেলতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে গত জুন মাসের ৮ তারিখে ঢাকার বে-সরকারি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অপারেশন করে তার ডান পায়ের উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলা হয়। এর এক মাস পর তার আরো একটি পা যশোরের বে-সরকারি ছকিনা হাসপাতাল থেকে কর্তণ করা হয়। এখন তার পায়ে আর কোন জ¦ালা যন্ত্রনা নেই। সে অনেকটা সুস্থ্য।
তৌহিদুল ইসলাম বিভিন্ন সরকারি বে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ করেছে। চিকিৎসার জন্য তার বসতবাড়ি সহ সহায় সম্বল যা কিছু ছিলো সব বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এখন সে তার এক বোনের আশ্রয়ে থাকে। সংসারে তার চার মেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ পিতা সহ সাতজন সদস্য। চাল তরি-তরকারি সহ প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশত টাকা খরচ হয়। তাছাড়া তার প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য ওষুদ বাবদ ব্যয় দুইশ টাকা। এলাকার এক হ্রদয়বান ব্যক্তি তাকে ভ্যান চালিয়ে সাহাস্য তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন, তাকে ভ্যানের মূল্য বাবদ প্রতিদিন দুই টাকার কিস্তি দিতে হয়। এখন সে অসহায়। এলাকার লোকের কাছে হাত পাতলে যা হয় তাই দিয়ে তার সংসার চালাতে হয়। লোকের কাছে যাওয়ার অন্য কোন উপায় না পেয়ে সে শিশু কন্যা মুর্শিদাকে ভ্যান চালানো শিখিয়েছে। মুর্শিদা তাকে দূর-দূরান্তে ভ্যান চালিয়ে নিয়ে যায়।
শিশু মুর্শিদা খাতুন জানায়, সে স্থানীয় জিরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার বিদ্যালয়ে সকাল ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়। দুপুরে খাবার পর দুইটার দিকে সে পিতাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। প্রতিদিন তাকে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূর- দূরন্তে যেয়ে সাহায্য তুলতে যেতে হয়। হাই ওয়ের ওপর দিয়ে ভ্যান চালাতে তার ভয় করে। সংসার চালানোর জন্য তাকে ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করতে হয়।
স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: রাজু আহম্মেদ বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলাম একজন খেটে খাওয়া ছেলে। পা কেটে ফেলার পর সে এখন অসহায় পড়েছে। তিনি এলাকাবাসীর কাছে তৌহিদুল ইসলামকে সাহায্যে করার জন্য আহবান করেছেন।’