দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ অশুভ লক্ষণ

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট, মানবাধিকার বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু করেছে প্রভাবশালী দেশগুলো। এটিকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রত্যেকটি দেশেই কিছু গোপনীয়তার বিষয় থাকে তা কূটনৈতিক মহলে যাওয়া উচিত নয়।
সম্প্রতি জাপান, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বাংলাদেশের ভোট ও মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আগামী নির্বাচনে তারা সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চেয়েছে। দাবি তুলেছে স্বচ্ছ নির্বাচনের।
ছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এর আগে গত ১৩ জুলাই ইইউ রাষ্ট্রদূত এবং ১২ জুলাই জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাও রুটিন করে এখন দূতাবাসগুলোতে নিয়মিত সাক্ষাৎ করছেন।
এদিকে গত নির্বাচন নিয়ে ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তির দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোথাও শুনিনি। আমরা বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং বিরোধীরাও এতে অংশ নেবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আমি শুনেছি, গত নির্বাচনে পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। বাংলাদেশে এখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার। এটিই আমার দৃঢ় প্রত্যাশা থাকবে।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন চ্যানেল 24 অনলাইনকে বলেন, নির্বাচন এলেই আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে কিছু কথা আসে। সেটি অতীতেও হয়েছে, এবারও হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই বিদেশিদের আমাদের দেশীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ নয়। বাংলাদেশের কিছু নিজস্ব বিষয় রয়েছে সেটি দেশের জনগণই ঠিক করবে। আমরা দেখেছি ভারত-ফিলিপাইনসহ অনেক দেশেই অনেক কিছু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে। কিন্তু সেখানে বিদেশিরা তেমন হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণ কী চায় তা দেশের নাগরিকরা ঠিক করবে। যেমন অতীতেও আমাদের বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি নিয়ে অনেকগুলো দেশ বিরোধিতা করেছে, আবার কেউ পক্ষেও ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ভালো-মন্দ বাংলাদেশকে ঠিক করতে হয়েছে। জীবন, রক্ত, ইজ্জত দিয়ে। এখন বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে এ রকম তৎপরতা কোনোভাবেই করা কূটনৈতিকদের উচিৎ নয়।