Type to search

ঝিকরগাছায় মাস্টারের কর্মকান্ডে কর্তৃপক্ষ নিরব : দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন মুত্র ত্যাগের স্থান

ঝিকরগাছা

ঝিকরগাছায় মাস্টারের কর্মকান্ডে কর্তৃপক্ষ নিরব : দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি এখন মুত্র ত্যাগের স্থান

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

যশোরের ঝিকরগাছায় অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, সংবাদকর্মীদের হুমকি প্রদানকারী রেলস্টেশনের মাস্টার নিগার সুলতানার কর্মকান্ডে ধারাবাহিক ভাবে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়াতে প্রকাশিত সংবাদের জেরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নীরব দেখা যাচ্ছে। মাত্র বছর দেড়েক আগে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ও পরিচ্ছন্ন ঝিকরগাছা রেলস্টেশনের সৌন্দর্য্য হানি করতে স্টেশনে কর্মরত একটি স্বার্থান্মেষী মহল উঠে পড়ে লেগেছে এবং দৃষ্টিনন্দন স্টেশনটি মুত্র ত্যাগের স্থানে পরিণত করে ফেলেছে। রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত মাস্টার নিগার সুলতানা স্টেশনের মূল ভবন, প্লাটফর্ম সংলগ্ন ও রেল স্টেশন এলাকায় জায়গা ব্যক্তি নামে বরাদ্দ নিতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তদরির বা সুপারিশ করেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। ইতিমধ্যে বিষয় গুলো নিয়ে ব্যাপক নিন্দা, সমালোচনার জন্ম দিলেও অলিখিত ক্ষমতার জোর দেখিয়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে দায়িত্ব পালন না করেই বাসায় থেকে অফিস করছে । রবিবার(১২ ফেব্রæয়ারী) সকাল ১০টার সময় গিয়েও সংবাদকর্মীরা তাকে অফিসে উপস্থিত পায়নি। আর স্টেশনের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণের বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সত্য সংবাদ প্রকাশ করতে গেলেও তিনি সংবাদকর্মীদের হুমকি প্রদান কারেন । ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তর অভিযোগের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রথায় ইভটিজারদের দৌরাত্ম্য। প্রতিনিয়ত উঠতি বয়সী ইভটিজারদের ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন আমাদের সমাজের কারও মা, কারও বোন বা কারও সহধর্মিনী। স্টেশনে কর্মরত স্টেশন মাস্টার অথবা কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনুপস্থিতির সুযোগে এসব ইভটিজারদের দীর্ঘ সময় প্লাটফর্মের উপর অযাচিত আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছ। ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নকে বলা হয় বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী। ফুলপ্রেমী পর্যটক ও রেলযাত্রীরা এই সব ইভটিজারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ রেলস্টেশন প্লাটফর্ম ধরে যাতায়াত করার সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে স্টেশন এলাকা থেকে মোবাইলসহ ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। ফুলের রাজধানী গদখালি ঘুরতে আসা পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দে ও নিরাপদ ভ্রমণে জনপ্রিয় বাহন রেলগাড়িতে চেপে আসা প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রেলযাত্রীর অভিযোগ ঝিকরগাছা রেলস্টেশনে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। রেলওয়ে স্টেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রীদের একটি করে টয়লেট সংযুক্ত বিশ্রামাগার থাকলেও তা সর্বক্ষণ তালাবদ্ধ দেখতে পাওয়া যায়। স্ট্রীট লাইটগুলো প্রায় বিকল থাকায় সন্ধ্যার পর প্লাটফর্ম অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। স্টেশনের জন্য কোনো নৈশ প্রহরীর দেখা মেলে না। স্টেশনের নির্দিষ্ট পরিচ্ছন্নতা কর্মী শিমলা রাণীর বাড়ী যশোর শহরে। তার চাকরি ঝিকরগাছার জামাই শিবনাথকে দিয়ে করিয়ে বাড়িতে বসেই বেতন তুলছেন শিমলা রাণী দাসী। অপরদিকে রেলস্টেশনের অদূরে উন্মুক্ত দু’টি গাড়ি পার্কিং ও ফাঁকা চত্বরে ময়লা-আবর্জনার স্তুপের পঁচা দূর্গন্ধে স্টেশন এলাকার পরিবেশ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বাজার এলাকায় পর্যাপ্ত গনশৌচাগার না থাকায় এটি এখন মুত্র ত্যাগের স্থানে পরিণত হয়েছে। এই চত্বরের আশপাশের এলাকার বাসাবাড়ি, বেকারী, হোটেল, জবাইকৃত হাঁস-মুরগির বজ্য, কাঁচা বাজারের বর্জ্য, উচ্ছিষ্ট-আবর্জনায় স্টেশন এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত। এটি যেন দেখার কেউ নেই! অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ, সংবাদকর্মীদের হুমকি প্রদানকারী স্টেশন মাস্টার নিগার সুলতানাকে দ্রæত বদলী ও বিভাগীয় শাস্তির দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
স্টেশন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী শিমলার স্থলে শিবনাথ নামে আর একজনকে দেখা পাওয়া গেলে সেখানে তার কাজের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মামী শিমলা অসুস্থ। তার জন্য আমি তার পরিবর্তে কাজ করছি। আমার দরকার হলে তাকে ফোন করলে তিনি ঝিকরগাছায় আসেন। আর না দরকার হলে আসেন না। আমাকে মাসে ৩২০০ টাকা দেয়।
স্টেশন মাস্টার নিগার সুলতানা বলেন, রেলওয়ে স্টেশনের বাথরুম এসির যাত্রীদের জন্য খোলা হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মী শিমলা রাণী অসুস্থ মাঝেমধ্যে আসে। আর ওর কাজ তার আত্মীয় শিবকে দিয়ে করায়। স্টেশন এলাকায় ময়লা অর্বজনা বা দু’টি গাড়ি পার্কিং এর স্থানে মানুষ প্রসাব করা বন্ধের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত স্টেশন মাস্টার নিগার সুলতানার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারটি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। অতিদ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।