Type to search

ঝিকরগাছায় আদালতের ১৪৪ধারাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারসে চলছে নির্মাধীন ভবনের কাজ

ঝিকরগাছা

ঝিকরগাছায় আদালতের ১৪৪ধারাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারসে চলছে নির্মাধীন ভবনের কাজ

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

যশোরের ঝিকরগাছায় বিজ্ঞ আদালতের ১৪৪ধারাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারসে চলছে নির্মাধীন ভবনের কাজ। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৪/১৪৫ ধারায় যশোরের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ঝিকরগাছা উপজেলার ২নং মাগুরা ইউনিয়নের আংগারপাড়া গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে মোঃ আলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৭জনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন। বিবাদীরা হলেন, একই গ্রামের সাকায়াত আলীর ছেলে আমিনুর রহমান, মিজানুর রহমান, বেলায়েত আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম, সুবর খান, রফিউদ্দিন, আমিনুর রহমানের ছেলে ডেভিড, তৈয়ব আলীর ছেলে বাবু।
বিজ্ঞ আদালতের মামলার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২নং মাগুরা ইউনিয়নের আংগারপাড়া মৌজায় ১৫৪নং আরএস খং এর অন্তভুক্ত ৪৩৮দাগের ২০(কুড়ি) শতক জমি সহ অন্যান্য জমি বাদীর পিতা সহ ১/২নং বিবাদী ও তাহাদের বোনের নামে আরএস রেকর্ড সম্পন্ন হয়। বাদীর পিতামহের ৩জন স্ত্রী ছিলেন। পিতামহের ত্যক্ত সমুদয় জমাজমি বাদীর পিতা জীবদ্দশায় ১/২নং বিবাদী ও তাহার ভগ্নিগণ নিজেদের মধ্যে পারিবারিক ভাবে আপোষ বন্টন করে নেন। সেমতে বাদীর পিতার নালিশী দাগের নিজাংশের ও তাহার ওপর দুই ভগ্নির শতাংশের মোট .০৭শতক জমি প্রাপ্ত হয় ও ১/২ নং বিবাদীগণ নালিশে থাকে তাদের নিজাংশের জমি ও অপর ৪ভগ্নির জমি প্রাপ্ত হন এবং বিবাদী নালিশী দাগ ভূমির উত্তরাংশে ভোগ দখল করে আসছে ও বাদীর পিতা দক্ষিণাংশের জমি প্রাপ্ত হন। বর্ণিত মতে বাদী ও সহোদর ভ্রাতা ভগ্নিগণ নালিশী জমি পরেশ উত্তরাধিকারক্রমে প্রায় ৩০ বছরের উর্দ্ধকাল যাবৎ নালিশী জমিতে ঘেরা বেড়া দিয়া কৃত চিহ্নিত মতে সত্ববান ও ভোগ দখলে আছেন। কিন্তু দুর্দান্ত বিবাদী পক্ষ নালিশী জমি হইতে বাদী ও বাদীর ভ্রাতা ভগ্নিগণকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দখল করে নেওয়ার কুমতলবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। গত ২৯/০৭/২০২২ ইং তারিখে সকাল ১০টার সময় বিবাদী পক্ষ কোদাল, শাবল, কুড়াল ও দা নিয়ে আসিয়া নালিশে জমিতে বিদ্যমান গাছ-গাছালি কর্তন পূর্ব জমিতে গর্ত খনন পূর্বক জমি জোর জবরানে দখল করে নেবে মর্মে প্রকাশ করেন ও নালিশে জমিতে বিদ্যমান গাছ গাছালি কর্তন করিতে আরম্ভ করেন। ঘটনার বিষয়ে বাদী বিজ্ঞ আদালতে শরণাপন্ন হলে বিজ্ঞ আদালত বিষটি আমলে নিয়ে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামলার বিষয় তদন্ত করার জন্য মাগুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব খালেদ সাইফুল আজমকে দায়িত্ব দেন। সেক্ষেত্রে খালেদ সাইফুল আজম বাদীর ৪৩৮নং নালিশী জমির বিপরীতে ৪৩৩নং জমির একটি তদন্ত প্রতিবেদন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রদান করেন। আর এই তদন্ত প্রতিবেদনের উপর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। যার জের ধরে বিবাদী আমিনুর রহমান বাদির নালিশী জমির উপর ধানের গোলা, বিচলী গাদা ও বিল্ডিং নির্মাণের সামগ্রী রেখে দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করছে। এমতাবস্থায় বাদি বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হলে বিজ্ঞ আদালত নালিশী জমির বিষয়ে ফৌঃকাঃবিঃ মোতাবেক ১৪৪/১৪৫ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঝিকরগাছা থানাকে প্রেরণ করেন। থানার অফিসার ইনচার্জ উক্ত জমির বিষয়ের উপর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসআই(নিঃ) মোঃ মোকলেছুজ্জামানের নিকট আদেশ দেন। এসআই(নিঃ) মোঃ মোকলেছুজ্জামান নালিশী জমির মধ্যে পক্ষদ্বয়দের শৃংখলা বজার রাখার জন্য ০১/০৬/২০২৩ইং তারিখে একটি নোটিশ প্রদান করেন। তবে নোটিশ পাওয়ার পরও ১নং বিবাদী মনের সুখে বিজ্ঞ আদালতের ১৪৪ধারাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে নির্মাধীন ভবনের কাজসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
ঘটনার বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে ১নং বিবাদী আমিনুর রহমান বলেন ওটা আমাদের কেনা সম্পত্তি। কার নিকট হয়তে কেনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ৩নং বিবাদী রবিউল ইসলামকে দলিল আনতে বলেন। পরবর্তীতে দেখা যায় উক্ত জমি বাদীর পিতা নওশের আলীর নিকট হতে ৬দাগে ৭শতক জমি ক্রয় করে জহুরা খাতুন নামের এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে জহুরা বাদীর পিতার সাথে একত্রে মিলমিশ হয়ে ৪৮০দাগের জমির থেকে ৭শতকের ভোগদখল শুরু করেন এবং উক্ত জমি ৩নং বিবাদী রবিউল ইসলামের ২ছেলে নিকট বিক্রয় করে দেন। তবে জহুরা খাতুন ব-কলম। সে শুধুমাত্র নিজের নাম স্বাক্ষর করতে পারেন। কিন্তু ৩নং বিবাদী রবিউল ইসলামের ২ছেলের নিকট বিক্রয় করা দলিলে স্বাক্ষর অন্য ব্যক্তির বলে মনে হয়। বর্তমানে ৩নং বিবাদীর ছেলেদের ক্রয়কৃত জমিতে পাকা বাড়ি নির্মাণ করা রয়েছে। উক্ত স্থানে জমি নিয়ে খ্যান্ত না হয়ে আবারও ৪৩৮দাগে বাদীর জমি দখলের পায়তারা করছে ১ ও ৩নংসহ অন্যান্য বিবাদীবৃন্দ।
বাদীর পিতার নিকট হতে জমি ক্রয়কারী জহুরা খাতুন বলেন, আমি পড়াশোনা জানিনা। আমাকে ৬দাগে ৭শতক জমি দিয়ে ছিলো। পরবর্তীতে আমাকে এক দাগে জমি দেয়। আমি দীর্ঘদিন ভোগদখলের পরে সেই জমি রবিউলের ছেলেদের নিকট বিক্রয় করি। এখন রবিউলের ছেলেরা আমার জমিতে ঘর বানিয়েছে। আমিনুরের বাড়ির সামনে আমার কোন জমি নেই।
থানার এসআই(নিঃ) মোঃ মোকলেছুজ্জামান বলেন, বিজ্ঞ আদালতের ১৪৪ধারা জারী করার জন্য আমি ঘটনান্থলে গিয়ে নোটিশ করে এসেছি। বিবাদীরা যেহেতু বিজ্ঞ আদালতকে অবমানা করছে সেহেতু আপনি বাদীর বলেন আদালতে গিয়ে ঘটনার বিষয় বললেই আদালত ১৮৮ধারার আদেশ দিবে। আর ওই আদেশ পেলেই আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।