Type to search

চৌগাছায় কীটনাশক দিয়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মাছ হত্যা

চৌগাছা

চৌগাছায় কীটনাশক দিয়ে সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মাছ হত্যা

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি:

যশোরের চৌগাছায় এক মাছ চাষীর ৩৫ বিঘা মাছের ঘেরে দিনের বেলায় কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) প্রয়োগ করে সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মাছ মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মর্জাদ বাওড়ের হ্যাচারীতে এই ঘটনা ঘটে।
মৎস্যচাষী মোঃ ভুট্টো মিয়া বলেন, তিন বছর ধরে বাওড় ব্যবস্থাপকের সাথে বছরে চার লক্ষ টাকা চুক্তিতে বাওড়ের পড়ে থাকা হ্যাচারির অংশের ৩৫ বিঘা জমি সংস্কার করে আমি মাছ চাষ করে আসছি। আগের ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেনের কাছে দুই বছরের চার লক্ষ করে আট লক্ষ টাকা এবং বর্তমান ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানের কাছে এক বছরের চার লক্ষ টাকা দিয়ে বাওড়ে মাছ চাষ করি। এখানে মাছ চাষ করতে আমি মাছ ব্যবসা দেখিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে সাত থেকে আট লক্ষ টাকা ঋণ করে মাছ চাষ করি। হঠাৎ করে বুধবার সকালে হাজীপুর গ্রামের হেলাল ও জসিম, নলভাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য হাসানের নেতৃত্বে নলভাঙ্গা গ্রামের জাহিদ ও বিপ্লব আমার মাছের ভেড়িতে নেমে কীটনাশক (গ্যাস ট্যাবলেট) দিয়ে ভেড়ির সব মাছ মেরে ফেলে। এসময় হাজীপুর গ্রামের রুবেলসহ অন্যরা ভেড়িতে দাড়িয়ে ছিলো। তিনি বলেন, উল্লেখিতরা গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে নগদ টাকা চাঁদা ও মাছ নিয়ে আসছে। গত ২০/২৫ দিন আগেও চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবেদুর রহমানের উপস্থিতিতে রুবেল আমার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবের নেতৃত্বে সম্প্রতি হ্যাচারী অংশের অন্তত পাঁচ হাজার ট্রাক মাটি অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার মাছ চাষে ক্ষতি হওয়ায় বিষয়টি আমি প্রতিবাদ করি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বাওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবের ইঙ্গিতে হেলাল, জসিম, রুবেল, হাসান মেম্বার, জাহিদ ও বিপ্লবরা একত্রিত হয়ে আমাকে ভেড়ি অংশ ছেড়ে দিতে বলে। আমি ভেড়ি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পানি সেচে কমাতে শুরু করলে আমার কাছে অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করে বলে, ‘তুই যখন আমাদের মাটি কাটায় বাঁধা দিয়েছিস, তখন চাঁদা দিবি। আমি সেই চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে দিনে দুপুরে তারা আমার ভেড়িতে কীটনাশক দিয়ে এভাবে মাছগুলি সব মেরে ফেলেছে।’
ভুট্টো আরও বলেন, সেখানে আমার আরও একটি মাছের ভেড়ি রয়েছে। এসব মাছের চাষ করতে গিয়ে আমি পানি তুলতে মোটর স্থাপন করেছি। তারা হুমকি দিয়ে বলেছে আমাদের নামে কোথাও কোন অভিযোগ করলে ভুট্টোকে এখানে মাছ চাষই করতে দেব না। ওর মোটরসহ কোন কিছুই বাড়ি নিয়ে যেতে দেব না।
মাছের ভেড়ির নাইটগার্ড, শাহাদৎ হোসেন ও ছায়েদ আলী বলেন, আমরা সকালের খাবার খেতে বাড়িতে গেলে তারা ভেড়িতে কীটনাশক দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে।
ভেড়িপাড়ের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম মাছ ধরতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, সকালে আমাদের সম্মুখেই হেলাল, রুবেল, জসিম, বিপ্লব ও জাহিদরা ভেড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট দেয়। পানিতে নেমে বিপ্লব ও জাহিদ গ্যাস ট্যাবলেট দেয় এবং অন্যরা ভেড়ির উপরে দাড়িয়ে ছিলো। ভেড়িতে গণহারে মাছ ধরতে থাকা চৌগাছার হাজীপুর, যাত্রাপুর, কালীগঞ্জের নলভাঙা ও ধোপাদী গ্রামের বাসিন্দারাও বলেন সকালে উল্লেখিতরা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে। মরে যাওয়া মাছ ভেড়ি মালিক ভুট্টোর সামনেই আমরা ধরে নিচ্ছি।
মাছের ভেড়ির মালিক মোঃ ভুট্টো মিয়া বলেন, বাওড়ের হ্যাচারি অংশ দির্ঘদিন ধরে পড়ে ছিল। সেখানে পানি থাকতো না। তখন বাওড়ের তৎকালীন ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেন আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সেখানে আমাকে মাছ চাষ করতে বলেন। ব্যবস্থাপকের সাথে প্রতি বছরে চার লক্ষ টাকার মৌখিক চুক্তিতে আমি সেখানে মাছ চাষ করতে সম্মত হই। ভুট্টো মিয়া বলেন আমি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেব।
তবে এ বিষয়ে বর্তমান মর্জাদ বাওড়ের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান এবং সাবেক ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁদের নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সাবেক বাওড় ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেনকে নানা দুর্নীতির অভিযোগে চৌগাছা থেকে অন্যত্র শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে।