ভবদহে ১০ লাখ লোক পানিবন্দি মাছ চাষে ক্ষতি ৫১২ কোটি টাকা

- ভবদহে ১০ লাখ লোক পানিবন্দি মাছ চাষে ক্ষতি ৫১২ কোটি টাক
কামরুল ইসলাম
ভবদহ অঞ্চলের তিন উপজেলায় মাছ চাষে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫১২ কোটি টাকা। দুই দফা ভারি বর্ষণে দুইশত ২৩৩ টি গ্রামের ১০ লক্ষাধিক জনগণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা প্রশাসন ভবদহ এলাকার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরুপন করেছেন। জলাদ্ধতার কবলে পড়ে মাছের ঘের পুকুর সহ মোট ১৯ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির উপর তৈরি মাছের ঘেরে ক্ষতি হয়েছে। যার প্রচলিত জমির পরিমাপ ২৫ হাজার ১৬০ একর। হটাৎ করে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে এসব ঘেরর মাছ চাষীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ ছাড়া ওইসব উপজেলার ২৩৩টি গ্রামের জনগণ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। গ্রাম গুলোতে প্রায় ১১ লাখ লোকের বসবাস রয়েছে। - অভয়নগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড মিলে ২৯টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে। সেগুলো হলো প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া, পায়রা ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার ১, ২, ৩ ও ৫ নং ওয়ার্ডেও আশিংক। এ উপজেলায় ১১৪ হেক্টর জমির মাছের ঘের ভেসে মাছচাষী ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫২ কোটি টাকা। উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে এখানে ২৯টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ওইসব গ্রামে ২৬শ পরিবার রয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৪টি এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি জনগণের জন্য সরকার ১০ মে.টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
মনিরাপুর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, উপজেলার ঢাকুরিয়া,হরিদাসকাঠি,কুলটিয়া, নেহালপুর, মনোহরপুর ও খানপুর ইউনিয়ানের প্রায় ১০০টি গ্রাম জলাবদ্ধ হয়েছে।এসব ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৫৬ হেক্টর জমির মাছের ঘের ভেসে গেছে। এখানে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, এখানে প্রায় ৫ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলায় ১০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। সরকার উপজেলায় ১০ মে.টন চাল ও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
কেশবপুর উপজেলা মৎস্যকর্মকর্তা সজীব সাহা জানান, এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ১০৪টি গ্রাম জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। এসব গ্রামে প্রায় ৫ লাখ লোকের বসবাস রয়েছে। এ উপজেলায় ঘের ও পুকুর মিলে ৬ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ করা মাছের ক্ষতি হয়েছে। এসব খামারে ক্ষতির পরিমান প্রায় ৬০ কোটি টাকা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, উপজেলায় ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ওইসব কেন্দ্রে ৭৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ১০ টন চাল ও নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের মৎস্য চাষী আমিনুর রহমান বলেন. ‘আমি একজন প্রান্তিক মৎস্য চাষী। আমার ১০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের আছে। এবছর ঘেরে খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। আশা করেছিলাম ৬ থেকে আট লাখ টাকার মাছ বিক্রি হবে কিন্তু জলাবদ্ধতায় সব আশা ভেস্তে গেছে।’ তার মতো এরুপ হাজারো প্রান্তীক চাষী রয়েছে। এছাড়া হাজার বিঘা জমি নিয়ে ঘের করেছেন এমন চাষী কয়েকজন আছেন তাদের ঘেরে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা রয়েছে। স্থানীয়রা জানান ছোট ঘের থেকে মাছ বের হয়ে বড় ঘের জমা হয়। তাই বড় ঘের মালিকের খুব বেশি লোকসান হয়না।
টেকা ব্রিজ করার জন্য নদী বেধে বাইপাস সড়ক করা হয়েছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী জানান. প্রতি দিন দুই থেকে তিন ইঞ্চি জল বাড়ছে এ ভাবে জল বাড়লে এলাকায় সর্বকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
প্রসঙ্গত টেকা ও শ্রী নদীতে ১৯৬৮ সালে বাধ দিয়ে ¯øুইস গেট করার প্রথমে গেটের মুখে পলি জমে সে অংশের নদী নব্যতা হারায়। কাল ক্রমে নদী নব্যতা হারাতে হারাতে বর্তমানে ৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে গেছে। পনি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে ৩২ ইঞ্চি সেচ পাইপ বিশিষ্ট ৪টি পাম্প ও ছোট ছোট আর কয়েটি পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছে।
পাম্পগুলো দেখবালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারি প্রকৌশলী বাজু আহম্মেদ জানান, গত কয়েকদিন দুর্যোগ পূর্ণ মুসুল ধারায় বৃষ্টিার মধ্যে তিন দিন বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প চলেনি। যে কারনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া হরি নদীর ভাটিতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পলি জমে নদী একেবারে পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে। পাম্প বেশি চালালে পনি উপচে পড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বর্তমানে বেশি সমস্যা কবলিত নদীর ওই উচু স্থান ম্যাশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন সেচ প্রকল্পে ১০টি পাম্প বরাদ্দ হয়েছে। পাম্প গুলো দ্রæত বসাতে পারলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে।