Type to search

দাবীকৃত টাকা না পেয়ে আব্বাস হোটেল মালিককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা

সাতক্ষীরা

দাবীকৃত টাকা না পেয়ে আব্বাস হোটেল মালিককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা

 

স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা শহরের লাবনী মোড়স্থ নিউ আব্বাস হোটেলে ক্লিনার পদে কাজ করতেন দক্ষিণ কাটিয়া এলাকার আহম্মদ আলী সরদারের মেয়ে বাসিরোন নেছা(৩৭)। বিভিন্ন সময়ে হোটেল থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করার অভিযোগেএকসময় বাসিরন্নেসাকে কাজ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন হোটেলের মালিক হযরত আলী। কাজ হতে অব্যাহুতি প্রদান করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি বাসিরন্নেসা। পরিকল্পনা করেন হোটেল মালিক হযরত আলীকে ফাঁসানোর। এরপর আব্দুস সাত্তার নামের এক প্রতারকের যোগসাজসে বাসিরন্নেসা হযরত আলীকে আসামী করে মিথ্যা অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন।

সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেটস্থ নিউ আব্বাস হোটেলের মালিক হযরত আলী বলেন, দক্ষিণ কাটিয়া এলাকার আহম্মদ আলী সরদারের মেয়ে বাসিরোন্নেছা(৩৭) আমার হোটেলে ক্লিনা হিসেবে কাজ করতেন। কাজ করাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন জিনিস চুরি করে নিয়ে যেতেন। বিষয়টি জানতে পেরে এ বছরের ২৩ জুন তাকে হোটেলের কাজ হতে অব্যাহতি প্রদান করি। এর সপ্তাহখানেক পর শীর্ষ প্রতারক আব্দুস সাত্তারের যোগসাজসে ১৫০ টাকা মূল্যের একটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্প ক্রয় করে আমার স্বাক্ষর জাল করে একটি অঙ্গীকারনামা তৈরী করেন। ওই অঙ্গীকারনামায় বাসিরোননেসা ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আমাকে হাওলাত দিয়েছেন বলে লেখা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই জালিয়াতকৃত ভূয়া স্টাম্প দেখিয়ে বাসিরোন্নেসা আমার নামে সাতক্ষীরা হোটেল মলিক সমিতি ও সাতক্ষীরা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। আমি বিষয়টি জানতে পেরে কাউন্সিলরের কাছ থেকে ওই স্টাম্পের একটি ফটোকপি সংগ্রহ করি। ফটোকপিকৃত ওই স্টাম্পে কোন স্বাক্ষীর স্বাক্ষর নেই বা কোন তারিখ উল্লেখ নেই। এরপর আমি বাসিরোনের কাছে এসব ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি আমার মানসম্মান নষ্ট করবেন এবং আমার নামে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করবেন বলে হুমকি দেন। পরবর্তীতে আমি কোন উপায়ান্তুর না পেয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাসিরোন্নেসাকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা করি। মামলা নং ৯৮৮/২০২৩। মামলটি সিআইডি সাতক্ষীরা তদন্ত করছেন। আমি বাসিরোন্নেসাকে আসামী করে আদালতে মামলা করেছি শুনে আব্দুস সাত্তারসহ কতিপয় প্রতারকের গাত্রদাহ শুরু হয় এবং ওই প্রতারকদের যোগসাজসে বাসিরোন্নেসা গত ৩ অক্টোবর আমার নামে বিয়ের আশ্বাসে ঘরভাড়া করে ২ বছর ধরে মেলামেশাসহ নানা মিথ্যা অভিযোগে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই সাতক্ষীরাতে তদন্তনাধীন রয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে আমার নামে মামলা করে বাসিরন এখন বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমার হোলে ব্যবসা প্রায় ধ্বংসের পথে। কেউ কারো বিরুদ্ধে এতোবড় মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারে তা আমি আগে কখনও কল্পনা করিনি। মিথ্যা অভিযোগে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাসিরনের সহকর্মী আব্বা হোটেলে কর্মরত রাশিদা খাতুন বলেন, বাসিরন টাকা দেছে কিনা এটা আমরা জানিনা। কোনদিন সে আমাদের সাথে গল্পও করিনি বা বলিনি। আর অতোগুলো টাকা যদি বাসিরনের কাছে কাছে থাকতো তবেকি সে এই হোটেলে এতা কষ্টের কাজ করতো? আমাদের হোটেল মালিক অত্যন্ত ভাল মানুষ। সে আমাদের সাথে সবসময় ভাল ব্যবহার করে। আমি, এই হোটেলে ৫ বছর কাজ করি। যদি মালিক খারাপ হতো তবে একদিননা একদিন আমরা তার ব্যাপারে জানতাম। এখন শুনছি সে হোটেল মালিকের নামে বাসিরন মামলা করেছে। একবারে মিথ্যা অভিযোগে আমাদের হোটেল মালিক হযরত আলীর বিরুদ্ধে বাসিরন মামলা করেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাসিরন্নেসা মুঠোফোনে বলেন, খামের ভেতরে করে আমার কাছে ওই কাগজটা দিয়ে হযরত বললেন, এই কাগজটা বাড়িতে নিয়ে রখেন, অন্য কেউ জানলে সমস্যা হবে। আমি যখন টাকা ফেরত দেবো তখন এই কাগজ আমাকে দিয়ে দিয়েন। আপনাকে যে বিয়ে করতে চেয়েছিল বা আপনার সাথে যে শারিরীক সম্পর্ক করেছিল সে কি আপনাকে ‘আপনা আপনি’ সম্বোধন করে কথা বলে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জড়তার সাথে বলেন, মাঝে মাজে আপনা আপনি ও মাঝে মাঝে আমার সাথে তুমি আমি করতো। আপনি ওতো টাকা কোথায় পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাসিরন বলেন, আমি কাজ করে আমার গ্রামের বাড়িতে মামার কাছে জমিয়ে রেখেছিলাম। তার কাছ থেকে এনে হযরত আলীকে দিয়েছিলাম। আপনার মামার নম্বরটা দেবেন একটু কথা বলতাম এমন প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়েই তিনি মুঠোফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জেলা রেস্তোরা মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মুনসুর আলী বলেন, জেলা হোটেল, রেস্তোরা ও বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে বাসিরন্নেসা আমাদের কাছে হযরত আলীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। দু’পক্ষের ডেকে আমরা বিষয়টি জানার চেষ্টা করি। সেখানে বাসিরোন্নেসা হযরত আলীকে টাকা ধার দেছে বলে জানায় এবং স্টাম্প দেখায়। তবে হযরত আলী টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এবং ওই স্টাম্পে তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে বলে জানায়। আমরা তখন স্টাম্প যাচাই বাছাই কওে দেখি স্টাম্পে কোন স্বাক্ষীর স্বাক্ষর বা তারিখ উল্লেখ নেই। এছাড়া হযরত আলীর অন্যান্য কাগজে স্বাক্ষরের সাথে ওই স্টাম্পের কাগজের স্বাক্ষরের কিছুটা গরমিল থাকায় আমরা কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করিনি। পরবর্তীতে শুনেছি হযরত আলী আদালতে ওই স্টাম্পের বিষয়ে বাসিরোন্নেসার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এবং বাসিরোন্নেসাও আদালতে হযরত আলীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছেন। এখন কোনটা ঠিক আর কোনটা মিথ্যা সেটি আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে হযরত আলীকে ফাঁসানো হচ্ছে।