Type to search

চৌগাছায় ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রার্থী যাচাই বাছাইয়ে অর্থ বানিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

চৌগাছা

চৌগাছায় ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রার্থী যাচাই বাছাইয়ে অর্থ বানিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

চৌগাছা যশোর প্রতিনিধি

“অনিয়ম করে যারা প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রমান পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন কঠিন বক্তব্যে নড়েচড়ে বসেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (২০২১) দলীয় প্রার্থী যাচাই বাছাইয়ে অর্থ বানিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য, উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি,ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তবে জনপ্রিয় এসকল নেতাদের নাম দলীয় রেজুলেশনে না উঠলেও গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং দলীয় পরিচয়বিহিন তাদের সন্তানদের নাম অর্থের বিনিময়ে দলীয় রেজুলেশনে উঠেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
শুধুমাত্র ১নং ফুলসারা ইউনিয়নে প্রার্থী হিসেবে মাত্র ১জনের নাম পাঠানো হলেও অন্যান্য ইউনিয়নে জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অর্থ বানিজ্যের লোভে কম জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম তালিকাভ’ক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, দলের রেজুলেশন হয়েছে সেটিই আমরা জানিনা। কারন কোন সভা ছাড়া নির্বাচনী প্রার্থী যাচাই বাছাই তবে দল থেকে আমার কাছে সিভি চেয়েছিল। সিভি জমা দেওয়ার পরেও আমার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতা ও অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল। তিনি প্রশ্ন করেন,“ আমার নাম কেনো পাঠানো হলোনা তা কার কাছে জানতে চাইবো??” উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান বলেন,“ আমার নাম তালিকাভ’ক্ত না হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আতœীয় ও গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী তোতা মিয়া এবং দলের নাম পিরচয় বিহিন তার ছেলের নাম পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য প্রভাষক হারুন অর রশিদ বলেন,“দীর্ঘ দিন রাজনীতি করছি। অথচ শুধু ব্যক্তি আক্রোশে আমার নাম পাঠানো হয়নি। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মাষ্টার ফারুক হোসেন বলেন ব্যক্তি আক্রোশে আমার নাম পাঠানো হয়নি। নারায়নপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক ও প্রেসক্লাব চৌগাছার সাধারন সম্পাদক প্রভাষক অমেদুল ইসলাম, চৌগাছা সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আবু সাইদ মানিকের নাম যায়নি।
ফুলসারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২১ বছরের সভাপতি শের আলী বলেন, কেনো আমাদের নাম যাবেনা? আমরা কি আওয়ামী লীগের কেউ না?? উপজেলা সভাপতি সম্পাদক স্বেচ্ছাচারিতা আর অর্থ বানিজ্যের লোভে আমাদের নাম বাদ দিয়েছেন।
নাম যায়নি ফুলসারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ১৯ বছরের ইউপি সদস্য আবুল কাশেমের। আবুল কাশেম আরো অভিযোগ করে বলেন,“ রেজুলেশনে নাম দেওয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধূরী আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন।”
১নং ফুলসারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহাজাহান কবির অভিযোগ করে বলেন,আমরা ইউনিয়ন থেকে রেজুলেশন করে নাম পাঠালেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদক সে নাম গুলো কেন্দ্রে পাঠাননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহবুবুল আলম রিংকু সভা ডেকে রেজুলেশন না করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতির অভিযোগটি সঠিক। তবে কেনো করা হয়নি সে উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক দিতে পারবেন। আর সভাপতির নির্দেশে বিদ্রোহীদের নাম তালিকাভ’ক্ত করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ফুলসারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধূরী বলেন,“ আমরা সাধ্য মতো নাম পাঠাতে চেষ্টা করেছি।” গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের সন্তানদের নাম কিভাবে রেজুলেশনে লিপিবদ্ধ হলো উত্তরে তিনি বলেন,“এটা সম্পূর্ন সভাপতির ইচ্ছায় করা হয়েছে। অর্থ লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন,“ আমি কারো কাছ থেকে ১ কাপ চাও খায়নি”।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবকে ১১.৩৭ মিনিটে তার ব্যবহ্নত মুঠো ফোনে (০১৭১১-০০০০৬১) যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন,“ আমাদের কাছে উপজেলা থেকে যে রেজুলেশন পাঠিয়েছে আমরা সেটিই কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। যদি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন সভা বাদেই রেজুলেশন হয়ে থাকে এবং অনিয়ম হয়ে থাকে তবে ভ’ক্তভোগিরা কেন্দ্রে অভিযোগ দিতে পারে।
এসকল বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডা.নাসির উদ্দিন বলেন,“ এবারের প্রার্থী যাচাই বাছাইয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক। যা আসলে দলীয় সংগঠন পরিপন্থী।