Type to search

চৌগাছার ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গায়েবী শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ

চৌগাছা

চৌগাছার ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গায়েবী শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ

 

চৌগাছা প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছার ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার মোঃ আব্বাস আলী নামে এক গায়েবী শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৩ ফেব্রæয়ারী অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে জমা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের পর গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রæয়ারী) প্রকাশ্যে আসে।
লিখিত আবেদনে লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমি ২০১৬ সালে উপজেলার ঝাউতলা এমকেএনজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করি। আমি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানিকভাবে চিনি। আমার দায়িত্বপালন কালে এই স্কুলে মোঃ আব্বাস আলী নামে কোন শিক্ষক ছিলেন না। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক কোন কাগজপত্রেও কখনো কোন সময় ঐ নামে কোন শিক্ষক কর্মচারীর ডকুমেন্ট ছিলোনা। অথচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল, হাজিরাখাতা ও রেজুলেশন বই কাটাছেড়া করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারী যোগদান দেখিয়ে মোঃ আব্বাস আলী নামের ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে স্কুলে হাজির করে তার এমপিওভুক্তির (মানথলি পেমেন্ট অর্ডার) আবেদন করেন। এখন পর্যন্ত ওই শিক্ষক অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।’ এ বিষয়ে আবেদনে তিনি সুনির্দ্দিষ্ট ৮টি ক্লু দিয়ে দাবি করেছেন এই আট বিষয় খতিয়ে দেখা হলেই গায়েবী নিয়োগ প্রমাণিত হবে।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘২১ জানুয়ারী-২০২৩ সালে চতুর্থ শ্রেণির ৩জন কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রধান শিক্ষক ব্যাপক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। এমনকি সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা নিয়েও মেহেদী হাসান নামে এক অসহায় ছেলেকে চাকরি দেননি। এসব বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষকের প্রতি এলাকাবাসীর চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্কুলে লেখাপড়ার চেয়ে স্কুলটিকে প্রধান শিক্ষক তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে রাজনীতির অভায়রণ্য তৈরি করেছেন। এজন্য অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের লেখাপাড়া নিয়ে উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।’
লিখিত অভিযোগে স্কুলে গায়েবী শিক্ষক নিয়োগসহ সকল অনিয়ম সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিচার বিশ্লেষণ করে প্রধান শিক্ষক মোঃ আয়নাল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক, যাতে আর কোন প্রধান শিক্ষক সরকারের বেতনভুক্ত হয়ে সরকারি নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাতে না পারে। এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘিœত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজের বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অপচেষ্টা করতে না পারেন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়েছে।
আবেদনের সাথে যে সময়ের রেজুলেশন, নিয়োগ বোর্ড দেখিয়ে গায়েবী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেই সময়ের বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য মোঃ আলী হোসেনের একটি লিখিত জবানবন্দি, স্কুলের বিভিন্ন সময়ের সাবেক শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সময়ের বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সভাপতি ও সদস্য এবং বিভিন্ন সময়ের কয়েকজন অভিভাবকের গণস্বাক্ষর সম্বলিত জবানবন্দি সংযুক্ত করা হয়েছে।
লিখিত জবানবন্দিতে মোঃ আলী হোসেন বলেন, ‘আমি ২০১৩ সালে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করি। সেসময়ে আব্বাস আলী নামে কোন শিক্ষক স্কুলে ছিলেন না বা নিয়োগ পাননি। কোন দাপ্তরিক কাগজপত্রেও ওই শিক্ষকের নাম বা কোন ডকুমেন্টস ছিলো না। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে বিভিন্ন ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল, হাজিরা খাতা ও রেজুলশন বই কাটাছেড়া করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের বিনিময়ে ১ জানুয়ারী ২০১৪ সালে যোগদান দেখিয়ে তাকে স্কুলে হাজির করেই এমপিওভুক্তির আবেদন করেন। ওই শিক্ষক বর্তমানে অবৈধভাবে কর্মরত। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কমিটির মেয়াদে আমার দায়িত্ব পালনকালে নিয়োগ বোর্ড গঠন, নিয়োগ ও যোগদান অনুমোদনের সকল ক্ষেত্রে আমারসহ সকলের স্বাক্ষর জাল করে ওই শিক্ষকের নিয়োগ দেখানো হয়েছে। এ ধরনের কোন নিয়োগ বোর্ড সেসময় হয়নি এবং এই নামে কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি।’ তিনি আরও দাবি করেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি জানলেও অদৃশ্য কারনে নিরব ভুমিকা পালন করছেন। এ অবস্থায় আমার স্বাক্ষর জাল করার অপরাধে জড়িত প্রধান শিক্ষককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইনাল হক গায়েবী নিয়োগের প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেন লিয়াকত আলী ২০১৬ সালের এডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি এগুলোকে বিদ্যালয় ও তার বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি মহলের ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন। তিনি আরও দাবি করেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তিনি ও ব্যবস্থাপনা কমিটি আইনি ব্যবস্থা নেবেন। তিনি এও বলেন, এর আগে সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা নিয়েও একজনকে নিয়োগ না দেয়ার বিষয়ে করা মামলায় পুলিশি তদন্ত হয়েছে। তাতে পুলিশ এমন কিছু পাইনি।
উল্লেখ্য স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা নিয়েও পিয়ন পদে এক যুবককে নিয়োগ না দেয়ার ঘটনায় তিনি গত ৩১ জানুয়ারী যশোরের ডিসি, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, দুদুকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ভিডিও প্রমাণসহ লিখিত আবেদন করেন। সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি তদন্ত কমিটি করে দেন। যে কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।