Type to search

বগুড়ার সোনাতলার নামকরণ ও অজানা কথা –১

সাহিত্য

বগুড়ার সোনাতলার নামকরণ ও অজানা কথা –১

বগুড়ার সোনাতলার নামকরণ ও অজানা কিছু ইতিহাস
লেখক: মুহাম্মদ রায়হান 

সোনাতলার নামকরণের বয়স প্রায় পৌনে তিন শত বছর। এই নামের উত্পত্তির সঠিক ইতিহাস না থাকার কারণে বিভিন্ন মতান্তর ও কিংবদন্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সোনাতলার নামকরণ সম্পর্কে তেমন কোন দালিলিক প্রমাণ সরকারের হাতে নেই। তবে ‘সোনাতলা’ নামটি কীভাবে এলো, তা নিয়ে এবং পর্যাক্রমে ইতিহাসের কিছু তথা উপাদান সংগ্রহ করে ময়মনসিংহের গৌরীপুরস্থ এসিক এসোসিয়েশন (ACECC Association ), ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশন হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি এন্ড লাইব্রেরি এবং দি ইলেক্টোরাল কমিটি ফর পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে আসছে। মুঘল সম্রাটের শাসনকার্য বিস্তারে ২৪টি পরগনার মধ্যে ঘোড়াঘাট একটি পরগনা। ঘোড়াঘাট পরগণায় রাজা শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী তলাপাত্র তার নাতির স্মৃতিকে অবিস্মরনীয় করে রাখার জন্য বগুড়ার একটি স্থানের নাম রাখা হয় সোনাতলা। বর্তমান সোনা রায়ের স্মৃতিচিহ্ন সোনাতলা উপজেলা। সোনা রায়ের জন্মের প্রথম ব্রাহ্মণ নাম ছিল সোনা তলাপাত্র ; সোনা রায়ের বাবার নাম রায় রায়ান চাঁদরায় এবং পূর্ব নাম চন্দ্রকিশোর তলাপাত্র । নবাব আলিবর্দী খাঁর দরবারে  বিশ্বাসত্ব কর্মকর্তা হিসেবে তার নতুন নাম রাখা হয় ‘রায় রায়ান চাঁদরায়’। আড়াইশত বছর আগের রেনেলের কয়েকটি মানচিত্র ঘাটলে দেখা যায়, তৎকালীন বগুড়ার এলাকার দিকে দৃষ্টি দিলে ঘোড়াঘাট পরগণায় শিবগঞ্জ হতে গ্রান্ড ট্রাঙ্ক’ রোড মোকামতলা, বালুয়া এবং বাঙ্গালা বা বাঙ্গালী নদীর ধারে আড়িয়া নামে প্রাচীন জনপদ বা প্রসিদ্ধ স্থানের নাম পাওয়া যায়। বাঙ্গালী নদীর মাধ্যমে ইসলামাবাদ নামে একটি রাজ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।  তাছাড়া সে সময় ঘোড়াঘাট পরগণায় ঘোড়াঘাট সরকার চালু করে সমগ্র উত্তর অঞ্চল শাসন ব্যবস্থা বিস্তারিত ছিল। বর্তমানে সোনাতলা নামে যে জায়গাটি উপজেলা হিসেবে অবস্থান পূর্বে তা ‘বালুয়া’ ও ‘আড়িয়া’ নামে  বন্দর হিসেবে সুপরিচিত ছিল।‘বালুয়া’ ও ‘আড়িয়া’ এই দু’টি বন্দরের মাঝে সোনাতলা স্থানের উৎপত্তি। বর্তমানে ‘আড়িয়া’ একটি নদীর ঘাট । সোনাতলা মৌজার নামানুসারে সোনাতলা রেল স্টেশন নামকরণ করা হয়েছে। মৌজার নামকরণ সর্ম্পকে যতটুকু জানা যায়, তা হলো ঘোড়াঘাট চাকলায় কোনো দুর্দান্ত মুসলমান জমিদারের বিধবা স্ত্রী বেগম রানী চাঁদরায়ের ব্যবহারে ও প্রেমের প্রতিদানে খুব রাগান্বিত হলেন এবং চাঁদরায়ের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মনস্থ করলেন। তার ছেলে সোনা রায় তলাপাত্র ১৬ বছরে পরিপূর্ণ হলো। বিবাহযোগ্য ছেলে হওয়ার আগেই বেগম রানী কোনো উপায় না দেখে চাঁদরায়ের পুত্র সোনা রায়কে ধরে আনার জন্য বগুড়ার আদমদিঘির কড়ই রাজ্যে গুপ্তভাবে কয়েকজন অস্ত্রধারী সৈন্য প্রেরণ করেন। অবশেষে রাজপ্রাসাদ থেকে সোনা রায় কোনো উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। এই সুযোগে সৈন্যরা সোনা রায়কে রাস্তা থেকে ধরে বেগম রানীর কাছে আনেন। বেগম রানী সোনা রায়কে বন্দি করে এই মৌজার এক নিরাপদ স্থানে অতি সাবধানতার সঙ্গে রক্ষা করেন এবং তার রাজকন্যার সঙ্গে বিয়ে করাতে স্থির করেন। মুসলিম দিনপুঞ্জি ও চাঁদ উঠার তারিখ অনুসারে সোনাতলায় বিবাহের দিন ধার্য হলো। কড়ই রাজবাড়ির রাজা শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী তলাপাত্র তার অতি আদরের নাতি সোনা তলাপাত্রকে খোজতে বিভিন্ন স্থানে লোক পাঠান।  উল্লেখিত বালুয়া হচ্ছে বর্তমান সোনাতলা উপজেলার বালুয়া ইউনিয়ন এবং আড়িয়া হচ্ছে সোনাতলার কাছে একটি নদীর ঘাট।  বর্তমানে আড়িয়া বন্দরের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেলেও তা বগুড়া জেলার রানীপাড়া গ্রামের কাছে সোনাতলাকে ইতিহাসের সোনালী পাতায় স্থান করে দিয়েছে। সোনারায় নামে একটি লোকগাথা ১১৫ বছর আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। এই অমর লোকগাথা প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির পূর্বে বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে গীত হয়ে কাহিনীর প্রচলন ছিল।
সোনারা’র বিয়া

“বার বার যায় মালিয়ান
ফুলের লাগিয়া।
কোন চাঁদে হল নারে
সোনারা’র বিয়া।
চাঁদরায় চাঁদরায় কি কর বসিয়া
তোমার পুত্র মাইর খায় সেখানে বসিয়া।।”

সরেজমিন ও গবেষণার মাধ্যমে  সোনাতলা নামকরণের বিস্তারিত ইতিহাস আপনাদের সামনে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলোঃ