Type to search

শ্রী নদীর এ কী বি -শ্রী রুপ

অভয়নগর

শ্রী নদীর এ কী বি -শ্রী রুপ

স্টাফ রিপোর্টার:‘শ্রী ছিল বলেই নদীটির নাম হয়েছিল শ্রী। এখন নদী আছে, তবে শ্রী (পানি) নেই। নদীর সঙ্গে আমাদের বুকটাও শুকিয়ে গেছে।’ বলছিলেন শ্রী নদীর পাড়ের গ্রাম দামুখালীর কলেজশিক্ষক রমেশ কুমার মণ্ডল।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহ এলাকার গ্রাম দামুখালী। এর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট নদী শ্রী। একসময় সকালের রক্তিম আভা, আলো-ছায়ামাখা বিকেল, পালতোলা নৌকার ঝাঁক—সবই ছিল তার বুকজুড়ে। শ্রী ছিল বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আধার। তবে অভয়নগরের ভবানীপুর গ্রামে শ্রী নদীর বুকে যেন পা তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবদহ স্লুইসগেট (জলকপাট)। এরই মধ্যে ‘যশোরের দুঃখ’ নামে পরিচিতি পেয়েছে স্লুইসগেটটি।
একসময় প্রাকৃতিক নিয়মে শ্রী নদী দিয়ে এলাকার ২৭টি বিলের পানির নিষ্কাশন হতো। ধানে ধানে ভরে উঠত বিলগুলো। কিন্তু গত শতকের ষাটের দশকে লোনা পানি ঠেকিয়ে ‘অধিক খাদ্য ফলাও’ কর্মসূচির আওতায় নির্মিত হয় ভবদহ স্লুইসগেট। বাধাগ্রস্ত হয় জোয়ার-ভাটা। পলি জমে উঁচু হয়ে যায় নদীর বুক। হারিয়ে যায় পালতোলা নৌকার ঝাঁক, বিভিন্ন ধরনের মাছ। আশপাশের বিলগুলোতে দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। একসময়ের আশীর্বাদ শ্রী নদী এলাকাবাসীর জন্য আবির্ভূত হয় অভিশাপরূপে।
 নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এখন নদী বক্ষে ঘাস জন্মে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
নদী বাঁচানোর জন্য ২০০২ সালে নেওয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ—মূল নদীসংলগ্ন নির্বাচিত বিলে জোয়ারাধার (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট বা টিআরএম) তৈরি। টিআরএম হলো, নির্বাচিত বিলের তিন দিকে বাঁধ নির্মাণ করে অবশিষ্ট দিকের বেড়িবাঁধের একটি অংশ উন্মুক্ত করে বিলে জোয়ার-ভাটা চালু করা।
পানি বিশেষজ্ঞদের মত, ভবদহ অঞ্চলের স্থায়ী ও ভয়াবহ জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র উপায় প্রকৃতিকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া। শ্রী নদীসহ এলাকার নদীগুলো দিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে জোয়ার-ভাটা চালু নিশ্চিত করা। এতে করে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নির্দিষ্ট বিলে জমে বিল উঁচু হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভাটার সময় স্বচ্ছ পানির স্রোতে নাব্যতা ফিরে পাবে নদীগুলো।
পর্যায়ক্রমে বিল কেদারিয়া ২০০২-২০০৬ এবং বিল খুকশিয়ায় ২০০৬-২০১৩ পর্যন্ত জোয়ারাধার কার্যকর থাকায় কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছিল শ্রী নদী। এলাকার বিলগুলোতে ছিল না জলাবদ্ধতা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ২০১৩ সালে বিল খুকশিয়ায় জোয়ারাধার বন্ধ করে দেন। আর মাছের ঘেরমালিকদের বাধায় বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার কার্যকর করা যায়নি। তবুও বেঁচে ছিল জোয়ারাধার প্রকল্প। কিন্তু গত বছরের ২৯ জুলাই সরকার পুরো প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। এরপর পলি জমতে জমতে শ্রী নদীর প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ কুমার বাওয়ালি বলেন, ভবদহ স্লুইসগেট এখন অভিশাপ। এই অভিশাপকে বুকে ধারণ করে আছে শ্রী। জোয়ারাধার চালু করা হলে শ্রীসহ এলাকার নদীগুলো নাব্যতা ফিরে পাবে। দূর হবে জলাবদ্ধতা। আর তা না হলে এবার ডুবে যাবে গোটা ভবদহ অঞ্চল।
বন্ধ করে দেওয়ার সময় ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকায় জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প’-এর পরিচালক ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যশোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল) জুলফিকার আলী হাওলাদার। তিনি  বলেন, জোয়ারাধারই ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র উপায়। জোয়ারাধার প্রকল্প চালু রাখতে যথাসম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু লোকের বাধায় শেষ পর্যন্ত প্রকল্প বন্ধ করে দিতে হয়। এর ফলে শ্রীসহ কয়েকটি নদীর তলদেশে পলি পড়ে এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন করে প্রকল্প সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।