মনিরামপুরে হরিদাসকাঠি ইউনিয়নে ১০ টাকার চাল বিতরণে বাঁধা কাটলো
![](https://aparajeyobangla.com/wp-content/uploads/2022/03/06-image-1648554314-800x394.jpg)
১ হাজার ৩৩৬ টি পরিবারে হাসির ঝলক
নওয়াপাড়া অফিস: অবশেষে মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির(১০ টাকার) চাল বিতরণের বাঁধা কাটলো। শুক্রবার সকাল ৯ টা থেকে ওই ইউনিয়নের উপকারভোগীরা পুরাতন কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল পাবেন। ইউনিয়নে ৪৪৫ জন ভুয়া উপকারভোগী আছে নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের এমন অভিযোগের ভিক্তিতে চাল বিতরণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রজিত সাহা জানান, কার্ডধারী ব্যক্তিদের যাচাই বাছাই করে চাল দিতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। আসন্ন রমজান ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কথা বিবেচনা করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা তাকে শুত্রবার(১/৪/২২ তারিখ) থেকে উপকারভোগীদের মাঝে চাল বিতরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সব বাঁধা উপেক্ষা করে শুক্রবার সকাল থেকে চাল বিতরনের জন্য তিনি ডিলারদের জানিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে ওই খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেছিলেন, হরিদাসকাটির বর্তমান চেয়ারম্যান এক সপ্তাহ আগে ৪৪৫ টি কার্ড সংশোধনের জন্য তালিকা জমা দিয়েছে। যা তদন্ত করে চুড়ান্ত করা হবে। চাল আটকে গরিব মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি। এজন্য ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে আমি চাল দিতে পরিবেশকদের বলে দিয়েছি। তখন চেয়ারম্যান এসে বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেন। চেয়ারম্যান বাধা দেওয়ার পর ইউএনও আমাকে চাল দেওয়া বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। তাই সব কার্ড সংগ্রহ করে তালিকা বাছাই না করা পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
অভয়নগর সংলগ্ন মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের নতুন নির্বাচিত চয়ারম্যান ভুয়া কার্ডের অভিযোগ এনে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকার) চাল উঠাতে বাঁধা দিয়েছিলেন । ফলে ১ হাজার ৩৩৬ জন উপকারভোগী মার্চ মাসের বরাদ্দের চাল বিরণ বন্ধ ছিলো। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বাজারে চাল উত্তোলন করতে না পেরে তাদের মুখে হতাশা বিরাজ করছিলো।
জানা গেছে , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে গত বুধবার (২৩ মার্চ) ওই ইউনিয়নের দুজন পরিবেশক চাল বিতরণ করতে গিয়ে মেম্বর-চেয়ারম্যানের বাধার মুখে পড়ে বিতরণ বন্ধ করে দেন । ফলে চাল নিতে এসে হতাশার ছাপ নিয়ে ফিরে যায় ৫-৬শ উপকারভোগী।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হরিদাসকাটি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৩৩৬ জন উপকারভোগী রয়েছেন। যারা ২০১৬ সাল থেকে ৩০০ টাকা মূল্যে মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বছরে ৫ বার ৩০ কেজি করে চাল পেয়ে আসছেন। গেল বছর খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পরামর্শে সাবেক চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাড়ে ৫৮ টি কার্ড বাতিল করে নতুনদের তালিকায় যুক্ত করেন। নতুন তালিকাভুক্তরা গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরের চাল পেয়েছেন।
এদিকে নভেম্বরের নির্বাচনে ওই ইউনিয়নে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলমগীর কবির লিটন। চলতি মাসে তিনি ৪৪৫ জনকে বাদ দিয়ে নতুন নাম প্রস্তাব করেছেন। সে তালিকা যাচাই বাছাই করে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হরিদাসকাটি ইউনিয়নটি জলাবদ্ধ এলাকা। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার মাঠঘাটে পানি জমে থাকায় অধিকাংশ গ্রামে ধান চাষ হয় না। ১০ টাকার চালে এ অঞ্চলের মানুষের অনেক উপকার হচ্ছিল। তালিকা সংশোধনের নামে এত লোকের চাল আটকে রাখা ঠিক হয়নি। যাদের নাম বাদ দিয়ে নতুন ৪৪৫ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো বাদ রেখে বাকি লোকের চাল দেওয়ার দাবি তাদের।
হরিদাসকাটি ইউনিয়নের কুচলিয়া গ্রামের উপকারভোগী বাসন্তী রানি বলেন, ‘এ মাসের চাল দেয়নি। পানিতে তলিয়ে থাকায় আমাদের গ্রামে ধান চাষ হয় না। ১০ টাকার চালের কার্ডে ভালই উপকার হচ্ছিল। ৫ জনের সংসার ভাøই চলছিলো এ মাসের চাল না পেয়ে হতাশায় ছিলাম।’
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক সবুজ হোসেন বলেন, রোববারে (২৭ মার্চ) চাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। ২০০-২৫০ জন লোক এসেছিল। ফুড অফিসার জানতে পেরে চাল বিতরণ বন্ধ রাখতে বলেন। সেই থেকে চাল বিতরণ বন্ধ ছিলো। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আমাকে শূক্রবার থেকে চাল বিতরণ করতে বলেছেন।
পরিবেশক শাহিন হোসেন বলেন, ‘বুধবার (২৩ মার্চ) চাল দিচ্ছিলাম। ১৪ জনকে দেওয়ার পর এক মেম্বর এসে বিতরণ বন্ধ করে দেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার আবার ফোন করে বললেন শুক্রবার থেকে চাল বিতরণ করবেন।’
পরিবেশক মানিক হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাতে খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফোন করে চাল বিতরণের জন্য বলেছেন। লোকজন খবর দিয়ে বুধবারে চাল বিক্রি করছিলাম। ৫৭ জনকে চেওয়ার পর চেয়ারম্যান বললেন বন্ধ রাখতে। শুক্রবার থেকে তিনি আবার চাল বিতরণ করতে অনুমতি দিয়েছেন।’
হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটন বলেন, ‘আমার পূর্বের চেয়ারম্যান ৪০ জনের নামে ভুয়া কার্ড করে চাল উত্তোলন করে আসছিলো যা পরে জানা জানি হয়। এছাড়া অনেক ধনী লোকদের কার্ড দেওয়া হয়েছে তারা চাল তুলে ভাত রান্না করে মাছের ঘেরে দেয়। এ কারনে চাল দেওয়া বন্ধ করে কার্ড যাচাই বাছাইয়ের জন্য চাল দেওয়া বন্ধ করা হয়েছিলো।’